Breaking News
Home / বাংলাদেশ / সরকারের ঘোষণা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা পোশাক শ্রমিকদের প্রত্যাখ্যান
একজন পোশাক শ্রমিক

সরকারের ঘোষণা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা পোশাক শ্রমিকদের প্রত্যাখ্যান

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেন। মজুরি বোর্ডের সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারের ঘোষণার পরপরই তাৎক্ষণিক সমাবেশ ও বিবৃতির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানায় তারা।

তৈরি পোশাক শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সর্বনি¤œ মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলন করছিল। চলতি বছরের আগস্ট মাসে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এই মজুরি ১০ হাজার ২৮ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। দেশের পণ্য রপ্তানির আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতে নিয়োজিত আছে প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক।

নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা; বাড়ি ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা এবং অন্যান্য ১ হাজার ৮৫০। আগামী ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে নতুন বেতন কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রতিমন্ত্রী। এর আগে গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট খাতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি শামছুন্নাহার ভুঁইয়া, শ্রমিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি ফজলুল হক, মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দিন ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি কামাল উদ্দীন প্রমুখ। মজুরি নির্ধারণ নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয় এ বৈঠকে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হলো। অন্যান্য শ্রমিকদের বেতন-কাঠামো পরে ঘোষণা করা হবে। নতুন মজুরি কাঠামো মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ মেনে নেবে বলে প্রতিমন্ত্রী চুন্নু আশা প্রকাশ করলেও এরই মধ্যে আপত্তি এসেছে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন ও দলগুলোর পক্ষ থেকে। গতকাল বিকাল ৩টায় মজুরি বোর্ড যখন তোপখানার কার্যালয়ে সভা করছিল, তখনই ভবনের নিচে বিক্ষোভ করছিল গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, শ্রমিক সংহতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সাড়ে ৪টার দিকে সভা শেষ করে যখন মজুরি বোর্ডের সদস্যরা সচিবালয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বিক্ষুব্ধ কয়েকশ শ্রমিক ¯েøাগান দেন- ‘১৬ হাজার টাকার কমে ন্যূনতম মজুরি মানব না’।

তৈরি পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে দৃশ্যত রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো অনুসরণ করেছে সরকার। সম্প্রতি শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি শতভাগ বাড়িয়ে ৮ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব সংসদে তোলেন। বর্তমানে এই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা।

এর আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। তখন তাদের বেতন ধরা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা এবং ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা।

শ্রমিক সংগঠনের প্রত্যাখ্যান : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে অবিলম্বে ঘোষিত মজুরি পুনর্বিবেচনা করে ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠনের সভাপতি কাজী রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহসভাপতি জিয়াউল কবির খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

তারা বলেন, ঘোষিত মজুরি অগ্রহণযোগ্য এবং মালিকপক্ষকে খুশি রাখতে সরকারের উপঢৌকন। বর্তমান বাজারে ৮ হাজার টাকা দিয়ে কারো পক্ষে জীবন ধারণ করা এবং উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি প্রায় ১৮ হাজার টাকা ঘোষিত হয়েছে। সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি অর্ধেকেরও কম, দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় করা শ্রমিকরা এই চরম বৈষম্য কখনই মেনে নেবে না। সমাবেশ থেকে আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী ঘোষিত গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৮ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম এক বিবৃতিতে অবিলম্বে মজুরি পুনর্বিবেচনা করে শ্রমিকদের আকাক্সক্ষা ও বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৬ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান। তারা বলেন, শ্রমিকপক্ষ যেখানে ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের শ্রমিকরা ইতোমধ্যে প্রায় ১৮ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছে; সেখানে কোনোভাবেই দেশের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় করা গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি ৮ হাজার টাকা হতে পারে না। সরকার মালিকপক্ষকে তুষ্ট করতে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এই ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারকে শ্রমিকবিদ্বেষী ভূমিকা ত্যাগ করার আহ্বান জানান তারা।

আরও পঠিত খবর

‘নির্বাচনের আগে পরিবহন আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *