Breaking News
Home / আন্তর্জাতিক / মাও সে তুং’র ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মাও সে তুং’র ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ৯ সেপ্টেম্বর, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা, গেরিলা সংগঠক, চীনা বিপ্লবী, মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও এক অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা মাও সে তুং-এর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৭৬ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাও সে তুং চীন শাসন করেন। এ বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল ও তার কমিউনিজমের নীতি একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত। তিনি সারাবিশ্বের অসংখ্য বিপ্লবীর অনুপ্রেরণা।

বিপ্লবী এই নেতা চীনের হুনান প্রদেশের শাওশান গ্রামে ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাও জেন সেং ছিলেন ধনাঢ্য কৃষক। মা ওয়েন চি মেই ছিলেন খুবই ধর্মপরায়ণ। ওয়েন চেয়েছিলেন ছেলেও যেন ধর্মের পথে বিকশিত হয়। আর সে কারণেই মাওকে পারিবারিক ও ধর্মীয় কঠোর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে।

১৯০১ সালে আট বছর বয়সে মাও গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন এবং তেরো বছর বয়স পর্যন্ত ঐ পাঠশালাতে লেখাপড়া করেন। ১৯০৬ সালে মাওয়ের গ্রামের পড়াশোনা শেষ হয়।

এরপর তার বাবা তাকে সৈন্যদলে ভর্তি করানোটাকে লাভজনক মনে করেন। তার আগে মাওয়ের সঙ্গে এগারো-বারো বছরের একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে মাও সে-তুং এবিষয়ে লিখেছিলেন- ‘এটা ছিল একেবারে নামমাত্র বিয়ে। আমি কখনোই তার সঙ্গে বসবাস করিনি এবং তাকে আমার স্ত্রী বলেও মনে করিনি’।

রাজনৈতিক জীবন:

মাও ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে ২৪ বছর বয়সে রাজধানী পিকিংয়ে গমন এবং মার্কস তত্ত্বের আলোকে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও নিজ প্রচেষ্টায় তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যানের শীর্ষ পদে পৌঁছতে পেরেছিলেন এবং সফলভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রনায়ক হয়েছিলেন।

১৯১১ সালে চীনের কিঙ রাজতন্ত্রের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুরু হয় জাতীয়তাবাদীদের তীব্র গণআন্দোলন। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা সান ইয়াত সেনের সঙ্গে যোগ দেন মাও সে তুং। আন্দোলনে জয়ের পর গঠিত হয় কউমিঙটাঙ (জাতীয়তাবাদী) দল। ১৯১৮ সালে মাও সে তুং চীনের বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান হিসেবে চাকরি শুরু করেন। সে সময় বামপন্থি এক বুদ্ধিজীবীর চিন্তাধারায় মাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এছাড়া কাজের অবসরে তিনি পাঠ করতে শুরু করেন সভ্যতার বিস্ময়কর এক তত্ত্ব মাকর্সবাদ। তখনই বুঝতে পারলেন মায়ের ‘বুদ্ধবাদ’ ও বাবার ‘কনফুসিয়বাদ’ কোনো কাজের জিনিস না।

তরুণ বয়স থেকেই মাও বামপন্থি রাজনৈতিক ধ্যানধারণার প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯১৯ সালে চীনকে আধুনিকায়ন করার লক্ষে চীনের বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে একটি আন্দোলন চলছিল। সে আন্দোলনে মাও সে তুং-ও যোগ দিয়েছিলেন তার লেখনীর মাধ্যমে। ১৯২০ সালের দিকে তিনি একজন মার্কসবাদী হিসেবে চীনা রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেই চীনের চাংশায় ফিরে যান মাও। হুনান প্রদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য মাও উদ্যোগী হলেও তা ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ১৯২১ সালে সাংহাই যান তিনি। সে সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হচ্ছিল ওখানে। সেই গোপন মিটিংয়ে উপস্থিত হন মাও। তারপর হুনান প্রদেশে ফিরে এসে কমিউনিস্ট পার্টির একটি আঞ্চলিক শাখা খোলেন তিনি। এই শাখায় কীভাবে ধর্মঘট করতে হয়— শ্রমিকদের তাই শেখান মাও। ১৯২৩ সালে কমিউনিস্টরা জাতীয়তাবাদী কউমিঙটাঙ দলের সঙ্গে জোট গঠন করে। এসময় মাও কউমিঙটাঙ দলে যোগ দিয়ে সেখানকার সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হন। ১৯২৫ সালে জন্মগ্রাম শাওশানে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন মাও। ১৯২৭ সালের দিকে কৃষক আন্দোলন নিয়ে তার লেখনীতে তিনি কৃষকদের বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।

ওই বছরই জাতীয়তাবাদী কউমিঙটাঙ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তার। কউমিঙটাঙ দলের নেতা চিয়াং কাই সেক কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ায় প্রবল কমিউনিস্টবিরোধী দমননীতি অনুসরণ করেন। এদিকে হুনান প্রদেশের কৃষকদের নিয়ে সৈন্যবাহিনী গঠন করেন মাও। এই বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিলেও পরাজিত হন তিনি। এরপর চীনের দক্ষিণের পার্বত্য এলাকা জিয়াংজি প্রদেশে চলে যান মাও। এ সময়ে অসংখ্য তরুণ দলে দলে মাও নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিতে শুরু করে। মাও সে তুং তাদের সশস্ত্র সংগঠিত করেন। ইতিহাসে এই সশস্ত্র দলটি রেড আর্মি নামে পরিচিতি পায়। এদের লক্ষ ছিল কৃষকের মুক্তি। আর সে লক্ষ অর্জনে অভিনব গেরিলা যুদ্ধের পথ অনুসরণ করে এ দল। ১৯৩৪ সালে চিয়াং কাই শেক চীনের জিয়াংজি প্রদেশ ঘিরে ফেলে। তবে বিস্ময়কর ও অপ্রতিরোধ্য গতিবেগে সে বেড়াজাল ছিন্ন করে রেড আর্মিকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন মাও সে তুং।

এর পর তিনি শুরু করেন এক দীর্ঘ পদযাত্রা। যা ইতিহাসে লং মার্চ হিসেবে পরিচিত। চীনের উত্তরের ইয়ানান প্রদেশের উদ্দেশ্যে রেড আর্মির সঙ্গে ছয় হাজার মাইল দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে শুরু হয় এই পদযাত্রা।

১৯৩৭ সালে চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হলে পরস্পরবিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাই শেকের ন্যাশনাল পার্টি এবং মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি একত্রিত হয়ে আগ্রাসী জাপানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে ১৯৪৫ সালে জাপান পরাজিত হয়। তারপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এ গৃহযুদ্ধে জয়ী কমিউনিস্ট পার্টি মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে চীনের বিশাল ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিজয়ী কমিউনিস্ট মুক্তিফৌজের অগ্রগামী অংশ ক্যান্টনে প্রবেশ করলে চিয়াং কাই শেক সদলবলে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে পালিয়ে ফরমোজা দ্বীপে আশ্রয় নেন। স্বৈরশাসক কাই শেককে পরাস্ত করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন মাও। ১৯৪৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মাও স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। তিনি এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ পদে বহাল থাকেন।

মাও সেতুংয়ের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি চীনে শিল্প ও কৃষিতে বিপ্লব সাধন করেন এবং সমাজতান্ত্রিক গণচীনের ভিত্তি সুদৃঢ় করার জন্য প্রথম সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটিত করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ ভাগে এসে মাও সেতুং বেশ দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবনের শেষ ছয় মাস তাকে খুব একটা প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এই অবিসংবাদিত মহান নেতা ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে তার সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ‘মাও সে তুং স্মৃতিসৌধ’।

আরও পঠিত খবর

চীনে ৫ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প

চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জিনঘি কাউন্টিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *