Breaking News
Home / বাংলাদেশ / বসবাসের অযোগ্যতায় শীর্ষ স্বাধীন শহর ঢাকা

বসবাসের অযোগ্যতায় শীর্ষ স্বাধীন শহর ঢাকা

সারা বিশ্বের কোন কোন শহর বসবাসের জন্যে সবচেয়ে ভালো বা খারাপ  তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা ই আই ইউ।

সেই তালিকার দুই নম্বরে আছে ঢাকা, প্রথম যুদ্ধবিধ্বস্ত দামেস্ক। আর স্বাধীন শহরের দিক থেকে ঢাকা প্রথম। তবে সেটা নিচের দিক থেকে, অর্থাৎ খারাপের দিক থেকে। অর্থাৎ বসবাসের অযোগ্য হিসেবে বিশ্বের যেসব শহরের নাম করা হয়েছে সেই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে বা স্বাধীন শহরের দিকে থেকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা শহরের নাম।

সেখানে সবচেয়ে অযোগ্য শহর হচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রতি বছর এরকম একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। এবছর ১৪০টি শহরের উপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।

এবছরের তালিকায় বসবাসের জন্যে সবচেয়ে উপযোগী শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার নাম। তার পরে আছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন।

গত সাত বছর ধরে মেলবোর্ন শহর শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল। এবছরের তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার আরো দুটো শহরের নাম এসেছে প্রথম দশটি দেশের তালিকায়। এই দুটো শহর হচ্ছে সিডনি ও অ্যাডেলেইড।

ভালোর দিক থেকে টপ টেনে জায়গা করে নিয়েছে কানাডার তিনটি শহর- ক্যালগারি, ভ্যানকুভার এবং টরন্টো। আমাদের ঢাকায় প্রতি এক বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ।

ঢাকার এই অবস্থা কেন

এই মাপকাঠির একেবারে নিচে যে শহরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেটি যুদ্ধ-কবলিত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। জরিপ অনুযায়ী, বসবাসের জন্যে সবচেয়ে অযোগ্য শহর এটি। তারপরেই এসেছে বাংলাদেশের ঢাকা এবং নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের নাম।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, তালিকার সবচেয়ে নিচের দিকে যে দশটি শহরের নাম এসেছে সেগুলো নির্বাচন করতে গিয়ে অপরাধ, সামাজিক অস্থিরতা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধের মতো বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।

ঢাকার নাম নিচের দিক থেকে দু্‌ই নম্বরে উঠে আসার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে এতে মোটেই অবাক হননি নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, গত কয়েক বছর ধরেই এই জরিপে ঢাকার অবস্থা এরকমই। আর এই অবস্থার জন্যে দায়ী জনঘনত্ব অর্থাৎ একই পরিমাণ জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোকের বসবাস।

“মেলবোর্ন বা ভিয়েনার সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে ওই দুটো শহরে জনঘনত্ব এতোটাই কম যে ওই দুটো শহরের সাথে সরাসরি ঢাকার মতো অতি জনঘনত্বের একটি শহরকে তুলনা করা যায় না।”

সরকারি হিসেবে ঢাকায় বর্তমান জনসংখ্যা এক কোটি ৬৫ লাখ। আর প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। “এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কারণে ঢাকা শহর বারবার পিছিয়ে পড়ছে,” বলেন মি. হাবিব।

কিন্তু যুদ্ধে বিধ্বস্ত একটি শহর দামেস্কের পরেই কেন ঢাকার অবস্থান এই প্রশ্নের জবাবে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, ” ব্যাপক জনঘনত্বের কারণে সব ধরনের সেবা, সুযোগ, সম্ভাবনা সবকিছু একটা বড় রকমের চাপের মুখে পড়ে গেছে। আর একারণেই ঢাকার অবস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত অন্যান্য শহরের মতোই হয়ে দাঁড়িয়েছে।” বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় ঢাকার রাস্তাঘাট

এর পাশাপাশি শহর পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের শিথিলতা এবং অদক্ষতাকেও দায়ী করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক কালে ঢাকার গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা কিম্বা জঙ্গি তৎপরতার কারণে ঢাকা সম্পর্কে এরকম একটা ধারণা তৈরি হয়ে থাকতে পারে কিনা – এই প্রশ্নের জবাবে মি. হাবিব বলেন, “সেটি তুলনা করলে করাচি, লাহোর কিম্বা অন্যান্য শহর কী কারণে আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে!”

“জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, পৃথিবীর আর কয়টা দেশ এতো দ্রুত, এতো সমস্যাসঙ্কুল অবস্থার মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে?” প্রশ্ন করেন তিনি।

বাংলাদেশে সরকার দাবি করে যে প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। তাহলে শহরের এই অবস্থা কেন – জানতে চাইলে ইকবাল হাবিব বলেন, “শহরেরও উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু নীতিগত এসব পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হচ্ছে বলে এই উন্নয়নকে সর্বব্যাপী করা সম্ভব হচ্ছে না।”

তিনি মনে করেন, ঢাকার মতো একটি শহরকে জনবান্ধব করা যতোটা কঠিন, পৃথিবীর আর কোন শহরকে জনবান্ধব করা এতোটা কঠিন নয়।

তবে তিনি মনে করেন, ঢাকার অবস্থা একদিনেই এরকম হয় নি এবং খুব তাড়াতাড়ি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলেও তিনি বিশ্বাস করেন না।

আনোয়ার পাশা নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, “ঢাকাকে যে সংস্থা গুলো দেখভাল করে এদের কমিটমেন্ট আর সক্ষমতার অভাবের কারণেই ঢাকার এ অবস্থা। নাগরিকদের অসচেতনতা, আইন না মেনে চলার প্রবণতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ আর বিকেন্দ্রীকরণের অভাবেই এর দুরবস্থা।”

সুদীপ্ত হালদার নামে আরেকজন লিখেছেন, “যে শহরে ৮ কিলোমিটার রাস্তা যাতে ২ ঘণ্টা সময় লাগে, যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হয় আর রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ধুলার কুয়াশা, ফুটপাতের বেহাল দশা, অপরিকল্পিত স্থাপনা, অপরিকল্পিত ব্যবসায়িক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, এরকম একটি শহর অবশ্যই বসবাস অনুপযোগী শহরের উত্তম উদাহরণ হওয়া উচিৎ যা ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থা। এর জন্য দায়ী “রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গাফিলতি।”

ভিয়েনা শহর- বসবাসের জন্যে সবচেয়ে যোগ্য শহর।

কেন শীর্ষে ভিয়েনা

এই প্রথম এরকম একটি তালিকার শীর্ষে উঠে এলো ইউরোপীয় একটি শহরের নাম।

যেসব বিষয়ের কথা বিবেচনা করে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, অপরাধ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা।

এই জরিপটির সম্পাদক রোক্সানা স্লাভচেভা বলেছেন, “পশ্চিম ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তালিকার শীর্ষে ভিয়েনার উঠে আসা থেকে বোঝা যায় যে ইউরোপের বেশিরভাগ জায়গাতেই স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে।”

জরিপ অনুসারে, প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শহরের অবস্থা গত বছরের তুলনায় উন্নত হয়েছে।

 

সবচেয়ে বেশি বসবাসযোগ্য শহর ২০১৮

১. ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া

২. মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

৩. ওসাকা, জাপান

৪. ক্যালগিরি, কানাডা

৫. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

৬. ভ্যানকুবার, কানাডা

৭. টোকিও, জাপান

৮. টরন্টো, কানাডা

৯. কোপেনহাগেন, ডেনমার্ক

১০. অ্যাডেলেইড, অস্ট্রেলিয়া

বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর ২০১৮

১. দামেস্ক, সিরিয়া

২. ঢাকা, বাংলাদেশ

৩. লাগোস, নাইজেরিয়া

৪. করাচি, পাকিস্তান

৫. পোর্ট মোর্সবি, পাপুয়া নিউগিনি

৬. হারারে, জিম্বাবোয়ে

৭. ত্রিপোলি

৮. দোয়ালা, ক্যামেরুন

৯. আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া

১০. ডাকার, সেনেগাল ।

আরও পঠিত খবর

‘নির্বাচনের আগে পরিবহন আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *