পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটাতেই আঙুলে পেইন কিলার ইনজেকশন নিয়ে খেলেছেন সাকিব আল হাসান। টেস্টে দল খারাপ করলেও ব্যাটে-বলে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব। ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে তো তার ধারাবাহিকতাই দলকে টানা জয় এনে দিয়েছে। কিন্তু ক্যারিবিয় সফর শেষে দেশে ফিরেই সাকিব জানালেন- তার আঙুলে দ্রুত অস্ত্রোপচার করা দরকার। তাই আসন্ন এশিয়া কাপে তিনি না-ও খেলতে পারেন।
সাকিবের এমন সিদ্ধান্তে তাৎক্ষণিক বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জনের ঝড় উঠে। সাকিব কি সত্যিই এশিয়া কাপ খেলবেন না? সাকিব না খেললে তার জায়গাটা কে পূরণ করবে? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও বলছিলেন- এবারের এশিয়া কাপ আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। এবার সাকিবের খেলাটা প্রয়োজন।
এর পর সাকিবের সঙ্গে সতীর্থ ক্রিকেটার ও বোর্ডের কয়েক দফা কথা হয়। এর মধ্যে সাকিব সৌদি আরবে চলে যান হজ পালন করতে। হজ শেষে দেশে ফিরে ফিজিওর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন সাকিব। এবং জানান দলের প্রয়োজনে আরও একটি সিরিজ তিনি আঙুলে ইনজেকশন নিয়েই খেলবেন।
এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকালে সাকিব বলেন- ‘দেখুন, দলের প্রয়োজনই আমার কাছে সবসময় সবকিছুর আগে। দল যখন কিছু চাইছে, তখন নিজের সিদ্ধান্ত বা চাওয়া নিয়ে আবার ভাবতেই হয়।’
বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার আরও বলেন, ‘তবে অবশ্যই ফিজিওর মতামত খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার জিজ্ঞাসা ছিল, খেললে সমস্যা হবে কিনা। ফিজিও বলেছেন, আপাতত চাইলে খেলতে পারি। আরেকটা ব্যাপার ছিল, খেললে ইনজুরি বাড়বে কিনা। ফিজিও বলেছেন, সেই শঙ্কা খুব একটা নেই। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগেনি। পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ তো ব্যথা নিয়েই খেললাম। দলের যখন প্রয়োজন, আরেকটা সিরিজ নাহয় খেললাম ইনজেকশন নিয়ে!’
আরও একটা বিষয় স্পষ্ট করলেন সাকিব। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে তিন নম্বর পজিশন নিয়ে দারুণ ভোগান্তি হচ্ছিল। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সাব্বির রহমান- এমন অনেককে দিয়েই এ জায়গাটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। কেউই তেমন সফল হতে পারেননি। কিন্তু সাকিব পারলেন। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ ৭ ম্যাচে ৪টি হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। ৪২.৪৪ গড়ে রান করেছেন। যেখানে তার সর্বনিম্ন রান ৩৫।
এই পজিশনটি নিয়ে সাকিব বলেন, ‘পারফরমারের তৃপ্তি বলে কিছু নেই। আর আমি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কখনো ভাবিও না। সবসময়ই বলে এসেছি, দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলেই খুশি। সেটা যত রানই হোক, যে পজিশন থেকে হোক। তবে হ্যাঁ, তিন নম্বরে আমার চেয়ে ভালো তো মনে হয় আমাদের দলে আর কেউ করেনি! পরিসংখ্যান আমি দেখিনি, তবে ধারণা করছিলাম। এই তো, শুরুটা খারাপ হয়নি বলেই তো মনে হয়!’
এশিয়া কাপ নিয়ে সাকিবের ভাবনা কি? এমন প্রশ্নের উত্তরটা খোদ সাকিবই দিয়েছেন। বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, এশিয়া কাপ নিয়ে এখনও কিছুই ভাবিনি। ভাবলে সত্যিই বলতাম। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি, পুরো সময় পরিবারকেই দিচ্ছি। ক্রিকেট মাথায় নেই। যখন দুবাইয়ে যাব, তখন থেকে এশিয়া কাপ নিয়ে ভাবতে শুরু করব।’
ব্যাটিং পজিশনে তিন নম্বরে খেলার সিদ্ধান্তটি সাকিবের একার নয় বলেও তিনি জানান। বলেন, ‘তিনে খেলার সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। আমি চেয়েছি, এরপর অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট রাজী হয়েছে বলেই সম্ভব হয়েছে। বড় ইনিংস তো অবশ্যই খেলতে চাই, সেটা যেখানেই খেলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে যেমন সেঞ্চুরির খুব কাছে ছিলাম, আর ৩ রান হলেই বলতে পারতেন যে বড় ইনিংস খেলেছেন! অবশ্য ক্রিকেটে ব্যাপারটাই এমন। ৯৯ হলেও সেঞ্চুরি নয়, সেঞ্চুরি তো সেঞ্চুরিই। দেখা যাক, শুরুটা খারাপ হয়নি, এটা একটা স্বস্তি। বড় ইনিংস নিশ্চয়ই আসবে।’
সাকিবের কথামতো সেই বড় ইনিংসের দেখা পেতে বড় বেশি সময় যেন না লাগে। সামনে উপলক্ষ হিসেবে এশিয়া কাপ তো আছেই। সাকিব কি এবার সেই এশিয়া কাপকেই বেছে নেবেন নিজের সেরাটুকু ঢেলে দেয়ার জন্য? টাইগার ভক্তরা নিশ্চয়ই সেটিই প্রত্যাশা করছেন। এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের।