Breaking News
Home / মতামত / মাসুদা ভাট্টি ভীষণ রকম চরিত্রহীন মহিলা: তসলিমা নাসরিন

মাসুদা ভাট্টি ভীষণ রকম চরিত্রহীন মহিলা: তসলিমা নাসরিন

সম্প্রতি একাত্তর টিভির এক টকশোতে সাবেক তত্ত্বাকধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এক প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি। ব্যারিস্টার মইনুল মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে উত্তর দেয়া শুরু করেন। এ ঘটনায় চলছে তোলপাড়। ইতোমধ্যেই মাসুদা ভাট্টিকে ফোনর করে ক্ষমা চেয়েছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। বিপরীতে মাসুদা ভাট্টি জুড়ে দিয়েছেন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার শর্ত।

ব্যারিস্টার মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৫ জন সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক। এর আগে নারী সাংবাদিকরাও মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে যখন অধিকাংশই মইনুল হোসেনের বিপক্ষে একাট্টা তখনই মাসুদা ভাট্টির বিপক্ষে বোমা ফাঁটালেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি!

ফেসবুক স্টাটাসে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তার চরিত্র, কী তার আদর্শ আমি জানি না, তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ভীষণ রকম চরিত্রহীন মহিলা। চরিত্রহীন বলতে আমি কোনোদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। চরিত্রহীন বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ,অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।’

মাসুদা ভাট্টিকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে উল্লেখ করে তসলিমা লিখেন, ‘মহিলাটির জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিল। পাকিস্তানির সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো ওকে। ওর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে একটা চিঠি লিখে দাও। লিখে দাও মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশে তোমার পাব্লিশার ছিল, তোমার জন্য আন্দোলন করেছে। ও যদি এখন দেশে ফিরে যায়, ওকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা।’

তসলিমা আরও লিখেন, ‘আমি বললাম, মহিলাকে আমি চিনিই না। আর আপনি বলছেন ও আমার পাবলিশার ছিল? আমি মিথ্যে বলি না। আমি মিথ্যে কথা বলতে পারব না। এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাবো জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।’

তসলি তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, ‘‘তারপর কী হলো? তারপর ২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘ক’ যখন বাংলাদেশে বের হলো,আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদি গোষ্ঠি উন্মাদ হয়ে উঠলো আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য, আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালি তো দিতেই লাগলো, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করলো, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।’’

তসলিমা এরপর লিখেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ প্রচুর কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনোদিন করেনি। ‘ক’ বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে শরীরে ঘিনঘিনে ঘা ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন! মাসুদাভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?’’

তসলিমা মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর লিখেন, ‘আজ দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে লড়ছেন কারণ কেউ তাকে চরিত্রহীন বলেছে। যত অশ্লীল শব্দ বাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে আশির দশক থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনো বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনো সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে কোনোদিন দেখিনি!’

আক্ষেপ করে তসলিমা লিখেন, ‘আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হলো, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হলো, আমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে দিনের পর দিন মিছিল হলো, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করলো, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনো সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দ করেননি। সে তো করেনইনি, বরং যে সব পত্রিকায় আমি নিয়মিত কলাম লিখতাম, সে সব পত্রিকার বিশিষ্ট সম্পাদকরা আমার কলাম ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছেন।’

প্রশ্ন রেখে তসলিতা তার স্টাটাসের শেষাংশে লিখেন, ‘এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনো সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনো বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। নারী সাংবাদিকরা আজ মাসুদা ভাট্টির পক্ষে প্রেস কনফারেন্স করছেন। নারীর সমানাধিকারের পক্ষে ৪০ বছর লিখছি , লেখার কারণে আমাকে যে এত হেনস্থা করলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, কই কোনো নারী সাংবাদিককে তো আমার পক্ষে না হোক, আমার ওপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি ছোটখাটো প্রেস কনফারেন্সও কোনোদিন করতে দেখিনি। একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *