কোটা সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, কম সংখ্যক কোটা চাকরি প্রত্যাশীর জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা যুগের পর যুগ বরাদ্দ রাখার মাধ্যমে একদিকে যেমন বৈষম্য জিইয়ে রাখা হচ্ছে তেমনি শত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবী চাকরি প্রার্থীরা। এটি যুগের পর যুগ চলতে পারে না। এমতাবস্থায় সরকারও এই পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের কথা বললেও সরকার শুরুর দিকে কোটা বিলুপ্ত করে দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে শিক্ষাবিদেরা মনে করেন কোটা পদ্ধতি একেবারে তুলে দেওয়া ঠিক হবে না। কোটা বড়জোড় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রাখাই যুক্তিযুক্ত।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন গত ২০১৩ সালেও একবার জোরালো হয়েছিল। তবে তা বেশি দূর এগোতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের বছর হওয়ায় সেটা থমকে যায়। গত প্রায় এক বছর ধরে কোটার সংস্কারের দাবিতে ফের সোচ্চার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত ৮ এপ্রিল থেকে টানা ৪ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করে ঘরে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। ওই ঘোষণার এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোটা বাতিল বা সংস্কার নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মে থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রজ্ঞাপন দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন। পরে অবশ্য সেশনজটের কথা চিন্তা করে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেয় কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদ। ওই আন্দোলন এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কারের বিষয়ে তারা প্রথমে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল। পরে সেটি ৫ দফায় রূপ নেয়। দাবিগুলো হচ্ছে—কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূণ্য পদে মেধায় নিয়োগ দেওয়া, নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরণের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া এবং চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা। তবে সবশেষে আন্দোলন একদফায় রূপ নেয়। সেটি হচেছ কোটার সংস্কার।
শিক্ষার্থীদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ মে জাতীয় সংসদে কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই এই সংশয় শুরু হয় যে, কোটা কি তাহলে একেবারেই থাকবে না? তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মত হচ্ছে কোটা পুরোপুরি তুলে না দিয়ে সংস্কার। শিক্ষাবিদ-আমলারা এ বিষয়ে নিজস্ব মত দেন। একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের অন্তত ১০ জন এই মত দেন যে, কোটা পদ্ধতি এই মুহূর্তে বিলুপ্তি করাটা ঠিক হবে না। এমনটি হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হবেন। তাই কোটা বড়জোড় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রাখাটাই যুক্তিযুক্ত হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে কোটার সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা উচিত। কোটা পদ্ধতি সর্ব্বোচ ১৫ শতাংশ কোটা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন এ শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা যুক্তিসঙ্গত। তাই কোটা বাতিল নয়, যুক্তিসঙ্গতভাবে সংস্কারেই সমাধান নিহিত।
কোটার কারণে মেধাবীদের চাকরিতে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার জন্য কোটা প্রচলন করা হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে এ কোটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করা জরুরি। আমরা দেখছি, শুধু চাকরি নয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে সব জায়গায় কোটা পূরণ হচ্ছে না। এতে মেধাবীদের প্রবেশ যেমন সঙ্কুচিত হচ্ছে, তেমনি প্রশাসন দিন দিন মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। না হয় দিনদিন গোটা প্রশাসন দুর্বল হয়ে যাবে।
তার মতে, দেশের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, পাহাড়ি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য কোটা রাখা দরকার, তবে সেটাও সংস্কার হওয়া উচিত। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখা উচিত না। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে বলে মত দেন এ শিক্ষাবিদ।
কোটা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পক্ষে নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অ্ধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদও। তিনি একুশে টেলিভিশন অনলাইন বলেন, কোটা পুরোপুরি বাতিল করার পক্ষে আমি না। বরং এটা সংস্কার করা যেতে পারে। আমার মনে হয় সংস্কারের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা যেতে পারে। নারী কোটা কমিয়ে অর্ধেকে আনা যেতে পারে। আদিবাসী কোটাও কমানো যেতে পারে। তবে জেলা কোটা পুরোটাই বাদ দেওয়ার পক্ষে আমি। এসব সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগটা ৮০ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ হতে পারে। আর কোটার নিয়োগ থাকতে পারে ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
কোটা পদ্ধতি সংস্কার করলেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বজায় রাখার পক্ষে সাবেক ত্বত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বত্রই কোটা পদ্ধতি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে আসার জন্যই কোটা ব্যবস্থা। আমাদের দেশে একটি বিশেষ কোটা রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধা কোটা। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ কোটা ব্যবস্থা রাখার দরকার আছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটাগুলো আছে, সেগুলো সময়ের প্রয়োজনে অবশ্যই পর্যলোচনা করা যেতে পারে। কোটা বাতিল না করে সংস্কার করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী ও উপজাতি কোটা রাখার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)`র সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, কোটা ব্যবস্থা একদম থাকবে না, এমনটা নয়। সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। এগুলো যেমন- শারীরিক প্রতিবন্ধী, উপজাতি, নারী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রাখতে হবে। কোটার জন্য যোগ্য ও মেধাবীরা কোনোভাবেই যেন বঞ্চিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার ওপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি গবেষণা করে। গবেষণাটি করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এবং সাবেক সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ। ৬১ পৃষ্ঠার ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কোটা কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের পর দেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকার কথা নয়। তবে এখনও পর্যন্ত ওই প্রতিবেদন বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও কোটা সংস্কার নিয়ে তৎকালীন গবেষণা টিমের প্রধান ড. আকবর আলি খান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, অযৌক্তিক’ কোটা পদ্ধতির দৌরাত্ম্যে বিপন্ন হতে বসেছে দেশের বিপুলসংখ্যক মেধাবীর স্বপ্নের ভবিষ্যৎ। সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে যোগ্যতার মানদণ্ডে এগিয়ে থেকেও কোটার মারপ্যাঁচে ছিটকে পড়ছে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা। আর সেখানে কোটার কল্যাণে স্থান করে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা, ক্ষেত্র বিশেষে সুযোগ নিচ্ছে মেধাহীনরাও। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোটা পূরণ না হওয়ায় বছরের পর বছর শূন্যই থেকে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ। এখানেও স্থান নেই মেধা তালিকার ওপরের সারিতে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের। তাই এখননি কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা উচিত।
কোটা পদ্ধতি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নারীদের জন্য কোটা করলেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও কোটা করলেন। পরবর্তীতে সেই কোটার পরিমাণ হয়তো বাড়ানো কমানো হয়েছে, সমাজের বাস্তবতায়। কিন্তু এখন যে পর্যায়ে এসেছে, আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ দেওয়ার জন্য এ পদ্ধতি নিয়ে পুন:মূল্যায়ন করা দরকার। তিনি বলেন, সব ক্ষেত্রেই এখন হয়তোবা কোটার দরকার নেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরকার আছে। তবে কোটা একেবারে বিলুপ্তি এ মুহুর্তে সম্ভব না। এটা ধীরে ধীরে করা যেতে পারে।
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ মনে করেন, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ও দেশের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাড়া কোনো কোটা রাখা উচিত নয়। তাদের (প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী) কোটার মধ্যে রাখলেও এক শতাংশের বেশি রাখা উচিত হবে না। এর মাধ্যমে এক শ্রেণীর লোকজন সুবিধা ভোগ করে আসছে। এর ফলে দেশের সঠিক মেধাবীরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না। দেশের সার্বিক উন্নয়ন মেধাবীদের সঠিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি বিশেষ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী কোটায় ১০, জেলা কোটা ১০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাঁচ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক শতাংশ কোটা। বাদবাকি ৪৪ শতাংশ আসনের জন্য লড়াই করছেন সংখ্যাগুরু বিপুল সংখ্যক মেধাবী। সংখ্যাগুরু সাধারণ চাকরিপ্রার্থী এবং সংখ্যালগু কোটাধারীদের মধ্যে এত বড় বৈষম্য সম্ভবত পৃথিবীর আর কোনো দেশেই নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও প্রাবন্ধিক ড. সৌমিত্র শেখর একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, মেধাতালিকা স্বার্থ রক্ষায় কোটা পদ্ধতির বিষয় আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো-বংশ পরম্পরায় চাকরির ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনার দরকার। এখানে কোটা বড় জোর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে। এ সন্তানদেরও না দিলে-ই ভালো হয়। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় শুধু সন্তান পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। পরবর্তী ধাপগুলোর সুযোগ উঠিয়ে দেওয়া উচিত।
প্রকৃত মেধার মূল্যায়নের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, কোটা পদ্ধতিতে যদি কোন সুবিধা না আসে, উল্টো অসুবিধা আসে তো তা তুলে দেওয়াই উচিৎ। কারণ এটা সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দিচ্ছে। তাই প্রকৃত মেধার মূল্যয়ন করতে এটা করতে হবে। তবে এটা একবারে নয়, ধীরে ধীরে তুলতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোটা সংরক্ষণের কারণে গত ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম ৭৯২টি, ৩০তম ৭৮৪টি, ৩১তম ৭৭৩টি আর ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ খালিই থেকে যায়। আর ৩৬তম বিসিএসে কোটা পূরণ না হওয়ায় ৩৭তম থেকে তা পূরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় কোটা পদ্ধতির যৌক্তিকীকরণের জন্য বার্ষিক প্রতিবেদনে একাধিকবার সুপারিশ করেছি। এমনকি ওই সময় কোটা নিয়ে পিএসসি একটি মৌলিক গবেষণা হয়েছিল। ড. আকবর আলি খান ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের (সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার) ওই গবেষণাটি ছিল বিশ্বমানের। সেখানেও তারা মেধা কোটা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিলেন। সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই।
বিভিন্ন দেশের কোটা পদ্ধতির উদাহরণ দিয়ে ড. সা’দত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই কোটা আছে, তবে তা অন্যভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোটাধারীদের আগেই একটা নম্বর দেওয়া হয়। এরপর ওপেন পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় কোটাধারীদের। আর ভারত তো কোটাকে একটা সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেখানে কোটা আছে, তবে তা উপার্জনের ভিত্তিতে। উচ্চ আয়ের মানুষরা কোটা পায় না। এক্ষেত্রে তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেও ছাড় দেয় না। একবার যে কোটার সুবিধা পাবে, সে আর কখনও কোটার সুবিধা পাবে না। অর্থাৎ বাবা যদি কোটা সুবিধা পায় তার সন্তানরা কোনো কোটা সুবিধা পাবে না। কেউ যদি কোটা দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়, তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পাবে না। আর যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটায় ভর্তি হয়েছে, সে কখনও চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।
এদিকে কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলুপ্তি করাটা ঠিক হবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানো জন্য হলেও ৫ থেকে ৭ শতাংশ এই কোটা রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবস্থায় ৫৬ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে তা অযৌক্তিক। আমি মনে করি কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। তাহলে মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়। তিনি মনে করেন কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ ভাবা ঠিক হবে না। তাদেরকে তরুণদের প্রতিনিধি ভাবতে হবে। তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসতে হবে। আন্দোলনকারীদেরও ভুল পথে হাটা ঠিক হবে না। দুই-য়ে মিলেই একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে হবে।