গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে পদ্মাসেতু শেখ হাসিনার নামে করার কথা জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সেদিন এই সেতু বঙ্গবন্ধু কন্যার নামে হবে জানালেও পদ্মা সেতু নিজের নামে করতে রাজি হননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১ অক্টোবর) সকালে জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরে গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে করা এক বৈঠকে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি রাজি নন।
ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী কার্যনির্বাহী পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বলেছেন, পদ্মা সেতু করব বলছি, পদ্মা সেতুই হবে। কিন্তু সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হবে না। এটা পদ্মা সেতুই হবে।
ওই নেতা আরও জানান, এই সেতু তার নামে হবে বলে মন্ত্রীর বক্তব্যে খুশি হননি শেখ হাসিনা। এই কথা সামনে আনায় তিনি অসন্তোষও জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে ওই বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের আরও একজন নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী আনঅফিসিয়ালভাবে কথা বলেছেন। আমাদের একজন নেতা বলেছিলেন, এই সেতু আপার নামে করা হোক। পরে নেত্রী অসন্তোষ জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি নাম চাই না। মানুষের জন্য করেছি। বিশ্বব্যাংক অর্থ বরাদ্দ বাতিল করেছে। তারপরেও আমি এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এই সেতুর নাম আমার নামে হবে না।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় গিয়ে পদ্মাসেতু শেখ হাসিনার নামে করার কথা জানিয়ে সেদিন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বারবার বলেছেন পদ্মা নদীর নামে সেতুর নামকরণ করা হোক। কিন্তু সংসদ সদস্য এবং বাইরের জনমত হল আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামেই এ সেতুর নামকরণ হোক। তাই বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে চায়।’
‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সাহস দেখান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সাহসকে সম্মান জানাই। তার একক সাহসের সোনালি ফসল পদ্মা সেতু। তার একক অবদানের জন্য এই সেতু নির্মিত হচ্ছে। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, সাহায্য ছাড়াই সেতু নির্মাণ হবে। তাই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই পদ্মা সেতুর নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ‘শেখ হাসিনা-পদ্মা সেতু।’
এই সেতুর নির্মাণ নিয়ে শেখ হাসিনা শুরু থেকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছেন। ২০১০ সালে এই সেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে অর্থায়ন নিয়ে টালবাহানা করে বিশ্বব্যাংক। সে সময়েই প্রধানমন্ত্রী পুরো অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেন।
পরে বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করতে অটল অবস্থান নেন প্রধানমন্ত্রী। পরে কানাডার আদালতে দুর্নীতির সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করেন। সে সময় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়।
কিন্তু মাটির নিচের গঠনগত সমস্যায় সেতুর ১১টি পিলার নির্মাণে নকশা পাল্টাতে হচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে সেতু হচ্ছে না-এটা নিশ্চিত।
সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৯ শতাংশ ও মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প এলাকায় এসে ৬০ শতাংশ কাজের উদ্বোধন করবেন।