Breaking News
Home / রাজনীতি / গ্রেফতার আতঙ্কেও সমাবেশ করতে চায় নেতাকর্মীরা

গ্রেফতার আতঙ্কেও সমাবেশ করতে চায় নেতাকর্মীরা

চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের অনুমতি এখনো মিলেনি। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা যেকোনে মূল্যে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দিলেও গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির তৃনমুল কর্মীরা। মামলা গ্রেফতার আতঙ্ক আর অনুমতির বেড়াজালে পড়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রামের প্রথম সমাবেশ।

আগামী ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও এখনো প্রশাসন থেকে মেলেনি কোনো অনুমতি। কালকের মধ্যে অনুমতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পেলে কি করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহাদাত বলেন, কাল শুক্রবার সকালের মধ্যে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে লালদীঘি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে পুলিশ অনুমতির সিদ্ধান্ত আজ শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) সকালে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএমপি কমিশনারের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে পুলিশ কমিশনার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সমাবেশের অনুমোদন বিষয়ে আজ (শুক্রবার) জানানোর হবে বলে নেতৃবৃন্দকে অভিহিত করেন।

ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে থাকা চট্টগ্রাম মাহনগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা ২৭ তারিখ সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করেছি। পুলিশ কমিশনার আমাদের জানিয়েছেন শুক্রবার সকালে অনুমতির সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আমরা আশা করছি পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি পাবো।’

অনুমতি পাওয়া না পেলেও লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ হবে নেতারা হুঁশিয়ারি দিলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। যার ফলে সমাবেশের সফলতা নিয়ে তৃণমূলে রয়েছে সংশয়।

গত ২১ অক্টোবর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলায় জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয় চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী বিএনপির নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। এর মধ্যে তাকে আবার নেয়া হয়েছে ১ দিনের রিমান্ডে।

এছাড়া সেদিন আদালতে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে বিএনপির ১৫০ জন নেতাকর্মীর নামে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় গত ২২ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার জন্য প্রস্তুতি সভা থেকে ফিরার পথে গ্রেফতার করা হয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে। একই মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে জনসম্মুখের আড়ালে চলে গেলেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।

এছাড়াও এর আগেও কয়েকবার সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েও অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। এবারও যদি অনুমতি পাওয়া না যায় তাহলে কি পিছিয়ে যাবে জাতীয় ঐক্যের এ সমাবেশ। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক সচেতন মহলে।

নতুন রাজনৈতিক জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোর অবস্থান তেমন মজবুত নয় চট্টগ্রামে। এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গত ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিএনপির সিনিয়র নেতা বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান এম. মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, গিয়াস উদ্দীন কাদের চৌধুরী, মীর মো. নাসির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।

নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা, গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকে আছেন আত্মগোপনে। দলীয় কর্মসূচি সভা সমাবেশে আসছেন না অনেকে। অনেকে রাতে নিজের বাসায় থাকতে না পেরে ফেরারি হয়ে জামিনের চেষ্টা করছেন। এরই মাঝে যুক্ত হয়েছে নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা। দিন দিন সেই মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলার আসামি হয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০২টা। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩৯টা। সর্বশেষ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হওয়ার দিন পুলিশের সাথে হাঙ্গামা করার অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।

নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২টির বেশি, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের বিরুদ্ধে ৩৫টি ও সহ-সভাপতি এস কে খোদা তোতনের বিরুদ্ধে ২৫টির মতো মামলা রয়েছে। তবে এস কে খোদা তোতন মামলাগুলোতে জামিনে রয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের বিরুদ্ধে রয়েছে ২টি মামলা। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ২২টি, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুর ৫০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া ও আলী মর্তুজার ৭০টির মতো মামলা রয়েছে।

গত এক মাসে চট্টগ্রামে বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শতাধিকের ওপরে গায়েবি মামলা হয়েছে বলে জানান নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী। তিনি নিজেও আসামি হয়েছেন ৫টি মামলার।

নেতাকর্মীদের দাবি- যেভাবে সরকার সিলেটে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে, একইভাবে চট্টগ্রামেও অনুমতি দিতে বাধ্য হবে। যদি অনুমতি পাওয়া না যায় তারপরও সমাবেশ হবে লালদীঘি ময়দানে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা সমাবেশের জন্য আবেদন করেছি, আশা করি প্রশাসন অনুমতি দিবে। যদিও অনুমতি না পায় তারপরও আমরা জোর করে সমাবেশ করব। মামলা তো হচ্ছেই আমরা আর মামলার ভয় পাই না। ভয়কে কাটিয়ে জয়ের পথে আমাদের পথচলা শুরু হবে ২৭ অক্টোবর।’

আরও পঠিত খবর

নির্বাচন পেছানোর দাবি ঐক্যফ্রন্টের, ‘জানাব’ বলেছে ইসি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *