বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে সরকার কোনো বাধা দেবে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, বিএনপি যদি তাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারে, তাহলে তিনি স্বাগত জানাবেন।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
কাদের বলেন, ‘আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে লিগ্যাল ব্যাটলে কোন প্রকার বাধা, কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ হবে না।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া আরও অন্তত ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। আর অন্তত চারটি মামলায় তিনি জামিন পেয়ে গেছেন।
তবে রাষ্ট্রপক্ষ সবকটি মামলাতেই বিএনপি নেত্রীর জামিন ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আর বিএনপি অভিযোগ করেছে, সরকারের অপকৌশলের কারণেই তাদের নেত্রী মুক্তি পাচ্ছেন না।
বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত হিসেবে যেসব দাবি জানাচ্ছে তার মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও আছে। যদিও এটি তাদের একমাত্র দাবি নয়।
তবে আদালতের বাইরে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন কাদের। বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি সংবিধানসম্মত নয়, আর দ্বিতীয়টি আইনি বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবেলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম।’
খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনো প্রকারে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করতে চাইত, তাহলে বেগম জিয়া এতগুলো মামলা থেকে জামিন পেতেন না।’
‘প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। সরকার যদি হস্তক্ষেপ করতো তাহলে কীভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেলেন’- বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন কাদের।
‘মওদুদের কাছে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে?’
আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া জানান কাদের। বলেন, ‘মওদুদ আহমেদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধান বাইরে গিয়ে মেনে নেওয়ার দাবি করেছেন।’
‘যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে এটা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছর দখল করা বাড়িটা রক্ষা করতে পারেননি। যিনি অপচেষ্টার দালাল। তার পক্ষের এধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।’
সভায় দেশের সর্বশেষ অবস্থা এবং দলের সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটের মধ্যে আসন বণ্টন, শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ আসনে ছাড় দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কাছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে সংবিধানে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি, সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত না হওয়া এবং দুর্নীতিবাজদের দলের সদস্য হওয়া যাবে না মর্মে বিধান বাতিলের কারণ জানতে চান ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।