Breaking News
Home / জীবনযাপন / কিভাবে নার্ভ সেলের পুনর্জন্ম হয়ে দুরারোগ্য রোগ সেরে যায় – জেনে নিন

কিভাবে নার্ভ সেলের পুনর্জন্ম হয়ে দুরারোগ্য রোগ সেরে যায় – জেনে নিন

মনের শক্তি সর্বত্রগামী। মনের শক্তি দিয়ে সম্ভব হয়েছে অসাধ্য সাধন, এমন উদাহরণ অসংখ্য। এমনকি দুরারোগ্য ব্যাধিও মনের শক্তি দিয়ে সারানো সম্ভব। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি এ সত্যকে দিন দিন আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। Where mind goes, energy flows.

এতদিন একটি প্রচলিত ধারণা ছিল, কোনো কারণে যদি নার্ভ টিস্যু, হৃৎপিণ্ডের টিস্যু ও স্কেলিটাল মাসল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তা আর রিজেনারেট করে না বা নতুন করে জন্মাতে পারে না। অনেকদিন থেকেই বিজ্ঞানীরা এটিকে সত্য বলে জেনে এসেছেন, বিশ্বাস করেছেন। সম্প্রতি এটি ভুল প্রমাণিত হতে শুরু করেছে।

প্রথমত, ক্যালিফোর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ডিন অরনিশ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, নিয়মিত মেডিটেশন, যোগ ব্যায়াম, স্বল্প চর্বিজাত খাবার হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে তো বটেই, এমনকি হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পরও একজন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানের জগতে বহুল-সমাদৃত সাময়িকী ‘নিউসায়েন্টিস্ট’-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুইডেনের ক্যারোলিন্স্কা হাসপাতালের একটি ঘটনা চিকিৎসক-মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। যাতে প্রমাণিত হয়েছে, নার্ভ টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে।

২৫ বছরের এক দুরন্ত তরুণ থমাস ওয়েস্টবার্গ। মোটর-সাইকেল দুর্ঘটনার পর ক্যারোলিন্স্কা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল সে। তার আঘাতটা ছিল বেশ গুরুতর। ঘাড়ের কাছে বামদিকের শোল্ডার-ব্লেডটি ভেঙে যায় এবং মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড থেকে বের হওয়া চারটি স্পাইনাল নার্ভ ছিঁড়ে যায়। ফলে তার শরীরের বাম দিক পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আক্রান্ত হয় ব্রাকিয়াল প্লেক্সাস (বাহুর কাছাকাছি অবস্থিত একটি স্নায়ুগুচ্ছ)। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের প্যারালাইসিস রীতিমতো দুরারোগ্য ও চিরস্থায়ী।

ক্যারোলিন্স্কা হাসপাতালের নিউরোসার্জন ডা. থমাস কার্লসডেট দুর্ঘটনার একসপ্তাহের মধ্যেই ওয়েস্টবার্গের অপারেশন করেন। তিনি ছিঁড়ে যাওয়া চারটি নার্ভের মধ্যে দুটিকে জোড়া লাগাতে সক্ষম হন, যার একটি জোড়া লাগানোর জন্যে আবার পায়ের একটি নার্ভ কেটে এনে নার্ভ গ্রাফটিং করা হয়। সার্জন সম্ভাব্য সব চিকিৎসা করেছিলেন বটে, কিন্তু ওয়েস্টবার্গ যে কখনো তার বাম হাতের বোধশক্তি ফিরে পাবে, আগের মতো সবকিছু করতে পারবে, এতটা তারা আশা করেন নি। অবশ্য এ-ক্ষেত্রে তেমনটা আশা না করাটাই ছিল তখন স্বাভাবিক।

বিষ্ময়কর ব্যাপারটি ঘটে অপারেশনের কদিন পরেই। দেখা যায়, পুনরায় জোড়া লাগানো দুটি নার্ভের একটি নিউরোন সেল-বডি অর্থাৎ স্নায়ুর মূল অংশ থেকে বাহুর মাংসপেশির দিকে নতুন এক্সন তৈরি হতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, এক্সন হলো নিউরোনের এমন একটি অংশ, যা একটি নিউরোন থেকে আরেকটি নিউরোনে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেয়। ওয়েস্টবার্গের ক্ষেত্রে এই এক্সন প্রতিদিন প্রায় এক মিলিমিটার করে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং স্পাইনাল কর্ড থেকে মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছতে বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যায়।

অপারেশনের নয় মাস পর ওয়েস্টবার্গ প্রথম তার মাংসপেশিতে অনুভূতি বুঝতে পারে। তার পেশি সংকুচিত করার শক্তি ফিরে পায়। একপর্যায়ে দেখা গেল, বাম হাত দিয়ে সে এক কেজি পর্যন্ত ওজন তুলতে পারে। এবং তার হাতের স্বাভাবিক নড়াচড়ার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ পুনরুদ্ধার হয়।

বিজ্ঞানী মহলে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অনেকেই এই ঘটনায় তাদের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে লন্ডন রয়েল হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রুল্ফ বার্ক একে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এদিকে ডা. কার্লসডেট ছয়টি বানরের একই অপারেশন করেন যাদের প্রত্যেকটিই স্পাইনাল কর্ডে একই ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। এর মধ্যে তিনটি বানর তাদের অক্ষম বাহু পুনরায় ব্যবহার করার শক্তি ফিরে পায়। পরবর্তীতে বানরগুলোর পোস্টমর্টেম পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, নিউরোনের সেল-বডি থেকে মাংসপেশির দিকে নতুন এক্সন তৈরি হয়েছিল।

আরও পঠিত খবর

কান্নার উপকারিতা

কান্নার উপকারিতাগুলি জেনে নিন এখানে –

কান্না মন ও শরীর দুইয়ের জন্যই ভালো। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, কান্না পেলে তা আটকানোর প্রয়োজন নেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *