রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরের স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে ডাবল লেনে পার্কিং করে রাখা প্রাইভেটকারটিকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করতে করতে এগোচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। কিন্তু গাড়ির ভেতরে থাকা নারী তার সেই বিনীত অনুরোধের জবাবে উল্টো নিজেকে এমপির মেয়ে দাবি করে হুমকি-ধামকি দেন। তার সেই হুমকির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে।
‘এই কার গাড়ির ছবি তোলো? এটা সরকারি দলের লোকের গাড়ি। কার গাড়ির ছবি তোলো? বেশি…কইরো না! তোমার মতো সার্জেন্ট কয় টাকা বেতনে চাকরি করে? কয় টাকা বেতনে চাকরি করে তোমার মতো সার্জেন্ট? আমরা প্রধানমন্ত্রীর লোক, ঠিক আছে? যদি সাহস থাকে…আমার বাবা জাতীয় কমিটির সদস্য, আমার বাবা এমপি, ঠিক আছে? তোমার মতো হাজারটা সার্জেন্ট…ঠিক আছে? কয়টাকা বেতনে চাকরি করো? হ্যাঁ চাকরই তো..চাকরই তো!’
সার্জেন্ট ঝোটনই প্রথমে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে ভিডিও শেয়ার করে লিখেন— ‘এই ভদ্র মহিলা মিরপুর ১৩ নাম্বার স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে তার প্রাইভেটকার ( ঢাকা মেট্রো-গ-২৬~৯৩৪৭) ডাবল লেনে পার্কিং করে রেখেছেন। তার গাড়ির জন্য পিছনের গাড়িগুলো আসতে পারছেনা। প্রচণ্ড জ্যাম লেগে আছে। তাকে অনেকবার সবিনয় অনুরোধ করলাম, আপু আপনার গাড়ির ড্রাইভারকে ডেকে দ্রুত গাড়িটি সরিয়ে পিছনের গাড়িগুলো আসার সুযোগ দিন এবং জ্যাম মুক্ত করেন। কিন্তু না, তিনি আমার কোনো কথা তো শুনলেনই না, বরং আমাকে খারাপ ভাষায় গালাগালি করেন এবং সঙ্গে বলেন তুমি সরকারের ২ টাকার চাকর, আমাকে চেনো তুমি? কার গাড়ি জানো এটা? আরও অনেক খারাপ কথা!’
এদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো চলছে ওই নারীকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা। সার্জেন্ট ঝোটন শিকদারকে নিয়েও চলছে আলোচনা। অনেকেই তার কাজের প্রশংসা করেছেন, আবার ভিডিও শেয়ার করায় কেউ কেউ তার সমালোচনাও করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার বলেন, ঐ মহিলার গাড়িটি “ডাবল করে” পার্কিং করে রাখার ফলে পুরো রাস্তাটিতে প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়ে যায়।
‘আমি উনাকে বললাম দ্রুত তার ড্রাইভারকে ফোন করে ডেকে গাড়িটা যেন সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন, কিন্তু বদলে তিনি আমাকে ধমকাতে শুরু করে দেন।’
এই ঘটনা এবং তা ফেসবুকে প্রচার নিয়ে কোনো চাপের মুখে পড়েছেন কিনা – জানতে চাইলে মি শিকদার বলেন, উচ্চপদস্থ একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি তার মুখ থেকে জানতে চেয়েছিলেন।
ঝগড়ার ছবি কেন তুললেন, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় মহিলারা হয়রানির নানা অভিযোগ করেন। আমি তাই প্রমাণ রাখার জন্য ছবি তুলেছি।’
ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করা কি পুলিশের বিধির ভেতরে পড়ে? এই প্রশ্নে সার্জেন্ট শিকদার স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, ‘ভাল করেছি কি মন্দ করেছি মানুষ সেই সিদ্ধান্ত নেবে। বিধি ভঙ্গ করেছি কিনা তা আমার সিনিয়রদের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমার নিজের কোনো অনুতাপ নেই।’
জানা গেছে, কালো রঙের ঐ গাড়ির বিরুদ্ধে বেআইনি পার্কিং করে যানজট তৈরির একটি মামলা হয়েছে।
তবে যাত্রী ঐ মহিলার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।