জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (০৩ সেপ্টেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে জাতীয় সংসদে সংশোধনীটি পাস হবে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণের বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন।
বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে কোনও বিধান নেই। আর নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছে। ইভিএম অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও আরপিও বাংলায় রুপান্তরসহ কয়েকটি সংশোধনী রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিওতে ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভূক্ত হলে সীমিত আকারে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করবে আইন কানুন, প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমর্থনের উপর।
তিনি বলেন, আমরা এখন প্রস্তুতিমূলক অবস্থানে রয়েছি। এখন এটা আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ব্যাপার। ইভিএম ব্যবহার হবে কিনা সেটা আইন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভার আলোচনা হবে। জাতীয় সংসদে যদি আইন পাস হয়, তখন আমাদের প্রশিক্ষিত লোকজন যদি সক্ষম হয় এবং জনগণের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে যতটুকু পারব ততটুকু জায়গায় ইভিএম ব্যবহার করব।
সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে আছে। এই অর্থ দিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। এই সংখ্যক ইভিএম দিয়ে ১০০ আসনে ভোট নেওয়া যাবে।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ইভিএম তৈরি করে ভোটব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন। ওই কমিশনের পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় নির্বাচনে এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার করে ভোটার আস্থা অর্জনের পর ২০১৯ সাল নাগাদ জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে। তাদের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশনও এই যন্ত্র ব্যবহার করে। কিন্তু ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হয়ে পড়লে তার কারণ উদ্ভাবন করা এবং সমাধান করতে পারেনি রকিব কমিশন। ফলে তারা এই যন্ত্র নষ্ট করে, নতুন করে ইভিএম তৈরি করে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
রকিব কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে নতুন করে ইভিএম তৈরি করে নেয়। এই ইভিএমের দাম পড়ছে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের পাঁচগুণ। সিইসি বলেছেন, নতুন এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নত এবং এগুলো দিয়ে কারচুপি করা সম্ভব নয়।