বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার সংলাপের জিগির তুলে একদিকে জনগণকে দেখাচ্ছে তারা কত আন্তরিক, অন্যদিকে সমানতালে নিষ্ঠুরতা ও পাশবিকতা অব্যাহত রেখেছে।’
শুক্রবার(২ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন,‘গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারি জোটের সংলাপে সরকারের একগুঁয়েমী মনোভাব গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় ধরণের অশনি সংকেত। সংলাপে মানুষের মনে যে আশাবাদ জেগে উঠেছিল, সংলাপ শেষে সেই আশার মুকুল ঝরে যেতে শুরু করেছে। সংলাপ শেষে ৭ দফা দাবির প্রতি সাড়া না দেয়ায় আওয়ামী অনড়তায় সুষ্ঠু নির্বাচনের অগ্রগতি তিমিরাচ্ছন্ন হলো। আওয়ামী লীগ সহিষ্ণুতার শিক্ষা কখনোই গ্রহণ করেনি। ক্ষমতা-স্বার্থের লীলাধিপত্য বজায় রাখতে তারা জনগণকেই ভয় পাচ্ছে। জনগণের মুণ্ডুপাতই হচ্ছে তাদের গ্রহণযোগ্য নীতি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গায়েবী মামলায় ঝিনাইদহে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত পল্লী চিকিৎসক ও বৃদ্ধ আব্দুল বারীর পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলার বিকট অমানবিকতার দৃশ্য।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংলাপের ভাষণে রাজনৈতিক মামলায় কারা আছেন তাদের তালিকা চেয়েছেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। তাঁর দশ বছরের শাসনামলে বিরোধী দলের কাদের নামে মামলা দিয়ে বারবার কারাগারে ঢোকানো হচ্ছে সেটি কী প্রধানমন্ত্রীর অজানা ? গতকাল সংলাপ শেষ হওয়ার পরই আমরা দেখলাম টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালেহ মোহাম্মদ ইথেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসলে পুলিশী শক্তির ব্যবহার ছাড়া আওয়ামী জোট সরকারের আর কোন ভিত্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাশূন্য করে একতরফা নির্বাচনের নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র হাতে থাকলে সবকিছুই করা যায়। ক্ষমতাসীনদের মামলাগুলো ঝরে যায় আর বিরোধীদেরগুলো পুষে রাখা যায়। হানাদারী দুঃশাসনে যাদের হাতে বন্দুক থাকে তাদেরকে সবাই ভয় পায়। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন আদালত সবাই নতজানু রাষ্ট্রীয় বন্দুকধারীদের কাছে। সরকারের নির্দেশ ছাড়া কারোরই টুঁ শব্দ করার জো নেই। বাংলাদেশে আইনের শাসন সীমাহীন দুরে নক্ষত্রমন্ডলীতে অবস্থান করছে।’
রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষ প্রশ্ন করে, ১/১১ এর সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলাগুলো গায়েব হলো কী করে ? ওয়েস্টমন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ফারুকের করা চাঁদাবাজির মামলাসহ ১৫টি মামলা উধাও হলো কী করে ? দেশব্যাপী সাড়ে সাত হাজার আওয়ামী নেতাকর্মীদের নামে খুনের মামলাসহ অন্যান্য মামলা ভোজবাজির মতো হাওয়াই মিলিয়ে গেলো কী করে ? রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিস্তৃত ও সুদীর্ঘ বাহুর মোচড়কে ভয় পায় পুলিশ ও আইন আদালত। ঐ মামলাগুলো চলমান রাখার সাহস নেই পুলিশ ও আদালতের। সেইজন্য বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে, আর প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছেন। ঐ সময়ে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে একই ধরণের মামলায় জড়ানো হয়েছিল, অথচ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শেখ হাসিনার মামলা প্রত্যাহার হয়ে গেল আর বেগম জিয়ার মামলা এখনও চলমান। অর্থাৎ বুঝতে কী কারো বাকি আছে যে, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন ক্ষমতাসীনরা কত প্রবল প্রতাপশালী যে তাদেরকে কোন আইনই স্পর্শ করতে পারে না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘অন্যায় অবিচারে বন্দী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে আত্মঘাতি। দেশকে গণতন্ত্রমূখী করতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আর নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন করা হবে মৃত্যুকুপে ঝাঁপ দেয়া। যে সরকার জনমতকে পাত্তা দেয় না সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করা বোকার স্বর্গে বাস করা। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করা মানে তাঁর ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীতি বাস্তবায়ন করা। সরকার অনমনীয় মনোভাব দেখাতে থাকলে মাথা উঁচু করে সাত দফা দাবি রাজপথেই আদায় করতে হবে। দুর্জয় সাহস নিয়ে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।