নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও ধর্ষণের গুজব ছড়ানো ২১টি পোর্টাল শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি । এসময় আইজিপি বলেন, ‘গুজব ছড়ানোর দায়ে ২১টি পোর্টাল শনাক্ত করা হয়েছে। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের কাউকে পুলিশ ছাড় দেবে না ‘।
সোমবার (১৩ আগস্ট) পুলিশ সদরদপ্তরের মিডিয়া সেন্টার এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আর তাদের সড়কে অবস্থানের শেষ দিন ৪ আগস্ট হয় ব্যাপক গোলযোগ।
একইদিন ফেসবুকে ব্যাপকভাবে গুজব ছড়ানো হয় যে, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চার জনকে হত্যা এবং চারটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরির পর শিক্ষার্থীদের পোশাক পরিহিত এবং সঙ্গে অন্যরা হামলা করে সেই কার্যালয়ে। দুই পক্ষে হয় সংঘর্ষ, ঝরে রক্ত। পরে সন্ধ্যায় ছাত্রদের প্রতিনিধি দল কার্যালয়টি ঘুরে এসে নিশ্চিত হয়, যে কথা ছড়ানো হয়েছে সেটা অপপ্রচার ছিল।
সাইবার অপরাধ মনিটরিং এর জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেল তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, প্রতিটি জেলায় এই সেল তৈরি করে ‘পেট্রোলিংয়ের’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে আইডি ব্যবহার করে লাইভে এসে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বিদেশে থাকুক আর যেখানেই থাকুক, দেশের আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটলে পুলিশ আইনের প্রয়োগ করবে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা করা হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘আমরা কিছু আইডি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অনুরোধ করা হয়েছে। ফেসবুকের ফেক আইডিগুলো শনাক্ত করছি। কিন্তু যে কোনো নামে যেকোনো সময় সহজেই আইডিগুলো খোলা যায়। এ বিষয়ে আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বসেছিলাম। তারা কিছু বিষয়ে সহায়তা দিতে সম্মতি দিয়েছে। আমরা আগে থেকেই ফেসবুকের একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আমাদের দেশে রাখার অনুরোধ করেছিলাম, এখনও বলছি। যাতে পুলিশ কোনো একাউন্টের বিষয়ে অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে আইজিপি বলেন, এই আন্দোলনের শেষভাবে এসে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্তে বিশেষ কমিটি কাজ করছে বলেও জানান।
৫ আগস্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রের পাশাপাশি পেটানো হয় সাংবাদিকদেরকেও। আর এই ঘটনায় ছবি এবং ভিডিও চিত্র প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বারবার। তবে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়নি পুলিশ।
আইজিপি বলেন, ‘সাংবাদিকদের উপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘কমিটি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘হামলায় কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি আছে কি না বা তারা সেই সময় নিষ্ক্রিয় ছিল কি না সেই বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
হামলাকারীদের ছবি এলেও গ্রেপ্তারে এতদিন সময় লাগছে কেন-জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ সব কিছু এক দিনে করতে পারে না, সময় লাগে। সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়টি জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে।’
১৫ আগস্ট ঘিরে ‘নিরাপত্তার চাদর’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীসহ সারা দেশকে ‘নিরাপত্তার চাদরে’ ঢেকে দেয়ার কথাও বলেন আইজিপি।
‘শোক দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুলিশ সজাগ ভূমিকায় থাকবে। ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যে শোক দিবস নির্বিঘ্নে পালিত হয় সে জন্য পুলিশ নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। শোক দিবস উপলক্ষে মনিটরিং সেল করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে।