Breaking News
Home / রাজনীতি / ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কিভাবে কাজ করে ? এতে কিভাবে কারচুপি সম্ভব জেনে নিন এখানে
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন

ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কিভাবে কাজ করে ? এতে কিভাবে কারচুপি সম্ভব জেনে নিন এখানে

ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় বিধায় সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো গ্রহণযোগ্য, সহজ, কার্যকরী ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রচলন চালু হয়েছে সারা বিশ্বে।

ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় এটি একাধারে সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ ও দ্রুততার সাথে ভোট গণনা করতে সক্ষম। এছাড়াও, ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতা এবং উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে ক্রমশই সমগ্র বিশ্বে এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চালু হতে যাচ্ছে ইভিএমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি। ইতোমধ্যে একাধিক স্থানীয় নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। যে কেন্দ্রগুলোতে ইভিএমের মধ্যে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় ওই কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ জটিলতা ছাড়াই সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রতিটি ইভিএম এর দুটি ইউনিট বা অংশ রয়েছে- ব্যালট ইউনিট ও কন্ট্রোল ইউনিট। দুটি ইউনিট একটি তারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। মেশিনটি সম্পূর্ণ ব্যাটারি চালিত।

ব্যালট ইউনিটটি থাকে বুথের ভেতরে। ব্যালট ইউনিটের উপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক ছাপানো থাকে। প্রতিটি প্রতীকের পাশে রয়েছে একটি করে সুইচ। কোন প্রতীকের পাশের সুইচটা চেপে দিলে তার পাশে একটি ছোট সবুজ বাতি জ্বলে ওঠে ও একবার দীর্ঘ বিপ ধ্বনি শোনা যায়। বাতি জ্বলা ও বিপ ধ্বনি শুনে ভোটার বুঝতে পারবেন যে তার ভোট গৃহীত হয়েছে। অক্ষর জ্ঞানহীন লোকও সহজেই ইভিএম দ্বারা ভোট প্রদান করতে পারবেন। ভোটার ভোট প্রদানের সাথে সাথে যন্ত্রটি ভোটের তথ্য তার মেমোরিতে নিয়ে নেয়। ইভিএম-এর মেমোরী নূন্যতম ১০ বছর তথ্য অবিকৃতভাবে ধরে রাখে।

কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে। এই ইউনিটে “ব্যালট” নামক একটি সুইচ রয়েছে যা চাপলে বুথের মধ্যে রাখা সংযুক্ত ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট নেয়ার জন্য কার্যকর হয়। “ব্যালট” সুইচ চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠাবেন। ভোটার ভোট প্রদানের সাথে সাথে ব্যালট ইউনিটটি অকার্যকর হয়ে যায়। সেই অবস্থায় বারবার আরও ভোট দিলেও মেশিন তা গ্রহণ করে না। ভোট দান শেষে ভোটার বুথ থেকে বেরিয়ে গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের “ব্যালট” সুইচটি চেপে পরবর্তী ভোটারের জন্য ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করতে পারেন।

কন্ট্রোল ইউনিটের সামনের দিকে একটি বড় ডিসপ্লে সংযুক্ত রয়েছে যা সকলে দেখতে পারেন। ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে ডিসপ্লেটির সংখ্যা এক বেড়ে যায়। এর ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং এজেন্টরা সহজে বুঝতে পারেন যে ভোটারের ভোটটি মোট ভোটের সঙ্গে যোগ হলো অর্থাৎ ভোটটি গৃহীত হলো।

প্রতিটি ব্যালট ইউনিটে ১২ জন প্রার্থীর জন্য ব্যবস্থা থাকে। তবে কোন আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২-এর বেশী হলে দুইটি কিংবা তিনটি, এমন কি পাঁচটি পর্যন্ত ব্যালট ইউনিট একের সাথে অন্যের সংযোগ দিয়ে সর্বমোট ৬০ জন পর্যন্ত প্রার্থীর ভোট নেয়া সম্ভব। প্রার্থীর সংখ্যা যদি ১২-এর কম হয়, তাহলে অপ্রয়োজনীয় সুইচগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়। ধরা যাক কোন আসনে ৭ জন প্রার্থী আছেন। সেই ক্ষেত্রে ব্যালট ইউনিটের ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত সুইচ কার্যকর থাকবে বাকী সুইচগুলো অকার্যকর করে রাখা হবে বিধায় কেউ ওগুলোর কোনটায় চাপ দিতেই পারবে না।

প্রতিটি বুথের ফলাফল আলাদাভাবে দেখা যায়। ভোট গ্রহণ শেষ হলে প্রথমে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের “ক্লোজ” সুইচটা চেপে ভোট গ্রহণের সমাপ্তি টানবেন। এই সুইচটা চাপার পর ব্যালট ইউনিটটি আর কার্যকর করা যাবে না। এর পর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার “ফাইনাল রেজাল্ট” সুইচটা চাপলে ব্যালটে প্রথম প্রার্থীর প্রতীকের নাম ও প্রাপ্ত মোট ভোট কন্ট্রোল ইউনিটের ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। “ফাইনাল রেজাল্ট” সুইচটি দ্বিতীয়বার চাপলে দ্বিতীয় প্রার্থীর, এভাবে একে একে সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোট দেখা যাবে। পূর্ব থেকে সরবরাহ করা একটি ফরমে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাগুলো লিখে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে দেবেন। প্রতিটি বুথের ফলাফল একীভূত করে প্রিজাইডিং অফিসার অন্য একটি ফরমে তুলে স্বাক্ষর করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা পাঠানোর ব্যবস্থা নিবেন।

ইভিএম এ কি কারচুপি সম্ভব? 

ভোট শুরুর আগে একটি ইভিএম-এ যে আগে থেকেই কোন ভোট ঢুকিয়ে রাখা হয় নাই তা পরীক্ষা করে নিতে হয়। কন্ট্রোল ইউনিটের “রেজাল্ট” সুইচটি পর পর চাপ দিলে একে একে সকল প্রার্থীর বিপরীতে কত ভোট মজুদ আছে তা ইউনিটটির ডিসপ্লেতে দেখা যায়। প্রতিটি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা শূণ্য হলে বুঝতে হবে যেকোন প্রার্থীর নামে পূর্ব থেকে ভোট জমা নাই।

ইভিএম ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই। কারণ এটি চলে ১২ ভোল্টের ব্যাটারির সাহায্যে। তাই এই মেশিন সম্পূর্ণ নিরাপদ।

এই ইভিএম-এ এমন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে যা একটানা ১২ ঘন্টা ধরে মেশিনটিকে চালাতে পারে। তাই ভোট গ্রহণকালে মাঝপথে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরও যদি মাঝপথে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে একটি ভাল ব্যাটারি দিয়ে নষ্টটিকে প্রতিস্থাপন করলেই মেশিনটি ক্রটিহীনভাবে চালু হয়, কোন ভোটই নষ্ট হয় না।

প্রতিটি ইভিএম-এর সাথে একটি করে স্মার্ট কার্ড রয়েছে। এই কার্ডটি কন্ট্রোল ইউনিট এর নির্দিষ্ট স্থানে ঢুকিয়ে না রাখলে ইভিএমটি কাজ করবে না। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত স্মার্ট কার্ড ছাড়া মেশিন কাজ করবে না। আর নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিদেরই স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করবে।

আমাদের দেশে “কেন্দ্র দখল” এর ঘটনা কখনো কখনো ঘটে থাকে। ইভিএম-এ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে। প্রথমতঃ এমন পরিস্থিতিতে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের “ক্লোজ” সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোন ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া ইভিএম-এর Smart Card সরিয়ে ফেললেও মেশিনটি চালু করা যাবে না। দ্বিতীয়তঃ প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে কেন্দ্র দখল করে অতি দ্রুত সীল মেরে ব্যালট বাক্স বোঝাই করা যায়, ইভিএম-এর ক্ষেত্রে কাজটি ততটা সহজ নয়। মেশিনের সামনে বসে সুইচ চেপে চেপে ভোট দিতে হয় এবং এভাবে প্রতি মিনিটে ৫টির বেশী ভোট দেয়া যাবে না। এই সব ব্যবস্থাদি কেন্দ্র দখলকারীদের নিরুৎসাহিত করবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশের নির্বাচনী পরিবেশ বাস্তবতায় ইভিএম খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি হবে। সেই লক্ষ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। সাধারণ মানুষকে ইভিএম এ ভোটদান সম্পর্কে জানাতে সারা দেশে ইভিএম মেলা আয়োজনেরও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই মেলার মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের কাছে ইভিএমের কার্যকারিতা ও ভোটদান সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।

২০০৭ সালে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদের নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা হয়। ছোট নির্বাচনে সফলতার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ প্রকল্প জমা দেন উদ্ভাবক, বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এস এম লুৎফল কবির এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাইল্যাব বাংলাদেশ। তখন ছবি সংবলিত ভোটার তালিকার কাজ চলার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমকে সামনে রেখে ১৩০টি ইভিএম তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি ইভিএম চট্টগ্রামে আনা হয়। তবে ১৪ ভোট কেন্দ্রের ৭৯টি বুথে ৭৯টি ও প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত হিসেবে মোট ৯৩টি ইভিএম স্থাপন করা হয়।

আরও পঠিত খবর

নির্বাচন পেছানোর দাবি ঐক্যফ্রন্টের, ‘জানাব’ বলেছে ইসি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *