বাংলাদেশে যে কোন ব্যাংক সাইবার হামলার শিকার হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংক এই আশংকার কথা জানিয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। কারণ সম্প্রতি ভারতের পুনেতে কসমস ব্যাংক থেকে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে ৯৪ কোটি রুপি লোপাটের ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিল।
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন তাদের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করে, তার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের নেয়া পদক্ষেপের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ” আমরা মাঝে-মধ্যে এ ধরণের নির্দেশনা দেই। তাছাড়া একটানা ২১ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত আমাদের ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকবে। যেহেতু কেউ থাকবে না সেজন্য যে কোন জিনিস ঘটার সম্ভাবনা থাকতে পারে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক সাদিয়া নূর খান মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম হ্যাকারদের জন্য একটি লোভনীয় জায়গা বলে তিনি উল্লেখ করেন। সাদিয়া নূর খান জানালেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের পেমেন্ট সিস্টেমে ঢোকার জন্য হ্যাকাররা ক্রমাগত চেষ্টা করছে।
২০১৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেমে ঢোকার জন্য হ্যাকাররা প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একবার চেষ্টা করে। তিনি বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের সাইবার নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়া শুরু করেছে।
তবে ব্যাংকি খাতে এ সংক্রান্ত দক্ষ জনবলের অভাব আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে কোন ব্যাংকে সাইবার হামলার মাধ্যমে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি কী করতে পারেন?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং ব্যাংকিং বিশ্লেষকরা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে –
- কোন গ্রাহক যদি লক্ষ্য করেন যে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের অজান্তে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে সেটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
- অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন হলে সাধারণত গ্রাহকের মোবাইলে দ্রুত একটি বার্তা আসে। এতে যদি দেখা যায় যে গ্রাহক লেনদেন না করলেও টাকা উত্তোলনের বার্তা এসেছে তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে
- ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে না নিলে দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করা যেতে পারে
- ব্যাংকে সাইবার নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে গ্রাহক বঞ্চিত হলে ব্যাংক সে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। গত বছর একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পুরো টাকা ফিরিয়ে দিয়েছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের দুর্বলতার কারণে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকের পাশে থাকে।
- গ্রাহকের ডেবিট কার্ড এবং ক্রেটিড কার্ড-এর পাসওয়ার্ড সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং গোপনীয়তার সাথে রাখতে হবে।
- গ্রাহকের অসতর্কতার কারণে কোন ক্ষতি হলে ব্যাংক সে দায় নেবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক সাদিয়া নূর খান বলেন, সাইবার সিকিউরিটি বিপন্ন হবার ক্ষেত্রে সবসময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা যাবেনা। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের সচেতনতাও একটি বড় বিষয়। একজন গ্রাহক যাতে তার অনলাইন ব্যাংকিং তথ্য কারো নিকট প্রকাশ না করেন সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
- কর্মকর্তারা বলেছন, গ্রাহকের ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা উত্তম।
- ফেসবুক বা ইমেইলে অপরিচিত কোন ব্যক্তির পাঠানো অ্যাটাচমেন্ট ক্লিক না করাই উত্তম। এতে গ্রাহকের মোবাইল ফোন সেট কিংবা কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং হ্যাকাররা সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
বেসরকারি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আগের তুলনায় অনেক তৎপর।বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পেমেন্ট সিস্টেম হ্যাক করা এতো সহজ কাজ নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। মি: ইসলাম বলেন, তাদের ব্যাংকে সাতটি স্তরে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
হ্যাকাররা অর্থ লোপাটের জন্য নতুন-নতুন কায়দা তৈরি করছে। এ কথা উল্লেখ করেন মি: ইসলাম বলেন, “আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের সিকিউরিটি অনেক ভালো আছে। তবে এগুলোকে আরো ভালো করার সুযোগ আছে।” তিনি বলেন একজন গ্রাহক যে মোবাইল ফোট সেট, ট্যাব কিংবা ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যাবহার করে অনলাইন ব্যাংকিং করছে সেগুলোর বিষয়ে তাকে সতর্ক থাকতে হবে। হ্যাকাররা সেসব জায়গায় ম্যালওয়্যার সেট করতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন। মি: ইসলামের মতে, হ্যাকিং থেকে নিরাপদ থাকতে হলে ব্যাংকগুলোকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে তেমনি গ্রাহকদেরও সচেতন থাকতে হবে।