সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে ৮ দফা দাবি আদায়ের নামে রাজধানীসহ সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য চলছে। এই ধর্মঘট ডাকা সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বলেছিলো কেউ ধর্মঘট পালনে অনিচ্ছুক হলে বাধা দেয়া হবে না।
কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশের কোথাও যানবাহন চলতে দেয়া হচ্ছে না, বাধা দেয়া হচ্ছে। এমনকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি-রিকশাও চলতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক জায়গায় অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত বাধা দেয়া হচ্ছে। কেউ বাধা দিলে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।
আলোচিত এই সংগঠনটি এর আগেও একাধিকবার এরকম ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সেসময় আলোচনায় এসেছিল এই সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
গত বছর চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় এক ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ড দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেন এই সংগঠনটি। সেই সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে শাজাহান খানের নাম। এছাড়াও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেয়ার জন্য প্রশাসনের অভিযানের সময় ধর্মঘট এবং সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় আলোচনায় এসেছেন প্রভাবশালী এই মন্ত্রী।
মাঝে মধ্যেই শাজাহান খান মালিক-শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতা হিসেবে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষিতে বসেন তিনি। আবার নৌমন্ত্রী হওয়ায় তিনি পদাধিকার বলে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উপস্থিত থাকেন। মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় নানা বৈঠকে তাই শাজাহান খান অবধারিত একটি নাম। অভিযোগ রয়েছে তার ইন্ধনেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কর্মসূচি দিয়ে থাকেন।
রবিবার (২৮ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আবারও ধর্মঘট শুরু করেছে তার নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ধর্মঘট সফল করতে শ্রমিকরা টার্মিনালগুলোতে পাহারাও বসিয়েছেন, যেন কোনও বাস বের হতে না পারে।
আলোচনায় আছেন সরকারের আরেক মন্ত্রী। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা। শাজাহানের মতোই তিনিও একদিকে সরকারের প্রতিনিধি, অন্যদিকে পরিবহন খাতের একজন নেতা।
সকাল ৭টা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। তারা ওই সব সড়ক দিয়ে সিএনজিও চলাচল করতে দিচ্ছেন। সিএনজি দেখলেও থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাধা দিলেই লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।
রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শাহবাগসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গণপরিবহন না থাকায় হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা দিয়েছেন অনেকে।
বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকে কর্মরত লায়লা আনজুম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ধর্মঘট এমন হবে ভাবতে পারিনি। মতিঝিল যাবো। অথচ রিকশায় ভাড়া চাচ্ছে ৪০০ টাকা। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়াতেই যেতে হচ্ছে।’
সাজ্জাদ নামের এক পথচারী বলেন, বার বার এই ধরনের পরিবহন ধর্মঘট যেন মগের মুল্লুক। সরকারের লোক হওয়া শাজাহান খানের মতো লোকেরা বার বার পার পেয়ে যাচ্ছেন। তারাই আমাদের জিম্মি করে রেখেছেন।