আন্তর্জাতিক এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের সমালোচনা করার পর থেকে কারাবন্দি আছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম৷ গ্রেফতার হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে শহীদুল আলমকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার দাবি উঠেছে৷
মার্কিন পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি শহীদুলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একাধিক সংবাদভাষ্য প্রকাশ করেছে, যাতে তাঁকে দ্রুত মুক্তি দিতে বলা হয়েছে৷
তাঁকে আটকে রাখার বিষয়টিকে ‘বিচারবহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে তাঁর মুক্তি দাবি করেছেন দশজন নোবেল বিজয়ী৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তরফ থেকেও অনতিবিলম্বে তাঁর মুক্তি কামনা করা হয়েছে৷
এদিকে শহিদুল আলমকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আটক করা হয়েছে৷ এই ধারা অনুযায়ী, কেউ অনলাইনে প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করলে তাঁকে গ্রেপ্তারের সুযোগ রয়েছে৷
আল-জাজিরা টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকার ছাড়াও আলম ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়েছেন বলেও দাবি কর্তৃপক্ষের৷
তবে শহিদুল আলমের গ্রেফতার করার পেছনে সরকার একধরনের বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকারের অন্যান্য সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও মনে করেন শিরিন হক৷ সম্প্রতি ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,
‘‘এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সবাইকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে, সরকারের সমালোচনা করার সাহস করো না, করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হবে৷”
শহিদুল আলমের শারীরিক অবস্থা নিয়েও শিরিন হক বলেন, ৬৩-বছর বয়সি আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে৷ তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং শরীরের নানা স্থানে ব্যথা শুরু হয়েছে৷ মানসিকভাবে তিনি শক্ত থাকলেও তাঁকে দেখে তেমন সুস্থ মনে হয়নি৷
তাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে বলে শহিদুল আলম নিজে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কড়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে আল-জাজিরা টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকার দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই শহীদুল আলমকে তাঁর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাক পরা একদল গোয়েন্দা পুলিশ৷
গত পাঁচ আগস্ট রাতে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েক দিনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেয়া হয় এবং পরবর্তীতে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
শহিদুল আলমকে এমন এক সময় আটক করা হয়, যখন ঢাকার রাজপথে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজপথে অবস্থান করছিল কয়েক হাজার শিক্ষার্থী৷