নির্বাচনী বছরে ব্যবসায়িক পরিবেশ সাধারণত অনুকলে থাকে না। নানা ধরনের আন্দোলনে উত্তাল থাকে দেশের পরিস্থিতি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীর আন্দোলন ঘিরেও ব্যবসায়িক উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একদিকে বড় বাজেটের বড় লক্ষ্যমাত্রা, অন্যদিকে দেশের বর্তমান প্রতিকুল পরিস্থিতি। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আদায়ের নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগামী ১৯ আগস্ট রবিবার বৈঠক বসছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূূত্র জানায়, নির্বাচনী বছর সামনে রেখে রাজস্ব আদায়ে নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে কর আদায় প্রক্রিয়ায় শ্লথগতি ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে। যদিও গত কয়েক বছর ধরে এনবিআর বলছে করনেট উপজেলা ছাড়িয়ে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছানো হবে, অথচ বাস্তবে এখন গ্রামতো দূরে থাক, উপজেলা পর্যায়ে রাজস্ব আদায় করাই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদি এই সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ভোটার তুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপ নেবে সরকার। এসব নীতিনির্ধারণ করতেই আগামী রবিবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও এনবিআরের সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসবেন। এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। এজেন্ডা হিসেবে আরো চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচ্যসূচির মধ্যে বাজেটে নতুন অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অগ্রগতির বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচনী বছরে এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। প্রতিবারের মতোই এবারো গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিবার যেমন হয়ে থাকে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পেরে চলে লুকোচুরি খেলা। কাটছাঁট করতে হয় লক্ষ্যমাত্রা। অনেক সময় এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয় না। তবুও বারবার বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়। বড় বাজেট পেশ করা একটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও বারবার ৩৫ থেকে ৩৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে রাজস্ব আহরণের একটা বিস্তর ফারাক রয়ে যায়।
বৈঠক প্রসঙ্গে সূত্র আরো জানায়, রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক বসবে। এতে রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়াদির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
বৈঠকে বাজেটের আওতায় ঘোষিত কর্মসূচির বাস্তবায়নের বিষয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী বছরে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি। সরকার এই সময়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই চলতি অর্থবছরে ভোটার আকর্ষণের জন্য যত ধরনের সুবিধা দেয়া প্রয়োজন মনে করেছে, তা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী বছরে সরকারের কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে জানান, রাজস্ব আহরণের কৌশলের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনী বছরে ভোটারদের ওপর চাপ না দিয়ে যাতে সহজে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় সে পরিকল্পনা নেয়া হবে।