কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে কোনও মূল্যে জাতীয় ঐক্য গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারাগারে বসেও বেগম জিয়া নিজের কথা নয়, দেশবাসীর কথা ভাবছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজকে স্যাঁতস্যাঁতে কারাগারে আটক আছেন। তিনি কারাগারে থেকে আমাদের খবর পাঠিয়েছেন। বেগম জিয়া আমাদের বলেছেন- ‘যে কোনও মূল্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে হবে। আমার কি হবে না হবে জানি না’।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে যে দুঃশাসন চলছে, তা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে খান খান করে দিয়েছে। একদলীয় শাসনে নির্যাতিত হচ্ছে জনগণ। আর গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে আজকে খালেদা জিয়াও কারাগারে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন- ‘দেশকে বাঁচাতে হলে, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই। এই সরকারকে সরাতে হলে ঐক্যই হলো একমাত্র বিকল্প’।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ সরকারকে যদি সরিয়ে দিতে না পারি এদেশে স্বাধীনতা থাকবে না। আসুন, ন্যূনতম দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করি। তাহলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনও হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া আজকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে। আশা করি, আগামী দিনে তাদের নেতৃত্বে (জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নেতারা) এগিয়ে যেতে পারবো।’
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আগামীতে জনসভা করার জন্য সরকার কিংবা পুলিশের অনুমতি নেয়া হবে না। আপনাদের অপরাধের প্রতিবাদে কথা বলার জন্য সভা-সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে? আপনারা যখন তখন, যত্রতত্র সভা সমাবেশ করতে পারেন। তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে বাধা কেন কেন, কেন? আগামী দিনে আমরা পুলিশ নয়, জনগণের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করবো।’
‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন সূচনা বক্তব্যে বলেন, ‘কারও প্রতি প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নয়, শান্তির বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা সকলে এখানে এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছি। আমরা দেশের মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে চাই। জনগণের বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
দেশের চলামান অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একসময় এখানে উপস্থিত হয়েছি যখন দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। দেশে কার্যকর গণতন্ত্র নেই। দুর্নীতি ও দুঃশাসনে ভরে গেছে দেশ।’ দেশ থেকে দুর্নীতি ও দুঃশাসন দূর হলে বাংলাদেশে শান্তি দৃশ্যমান হবে বলেও মন্তব্য করেন গণফোরাম সভাপতি।
সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মান্না বলেন, ‘দেশ এখন গভীর সংকটে। সাড়ে তিন মাস পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যদি এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে আবারো ২০১৪ সালের মত ৪২০ মার্কা নির্বাচন হবে। পুরো দেশের মানুষের মধ্যে একটাই আতঙ্ক ও শঙ্কা- আমরা কি ভোট দিতে পারবো? নাকি পুলিশ দিয়ে ভোট বাক্স ভরে সরকার আবারও ক্ষমতায় আসবে?’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় ও ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন ও নিতাই রায় চৌধুরী।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত আছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, জাসদ (জেএসডি) একাংশের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির পক্ষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ডা. জাফরুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদ, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ।