যাতায়াতের সুবিধার্থে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে যেমন চালকবিহীন গাড়ি তৈরী, উড়ন্ত গাড়ি অন্যতম। এছাড়া যোগ হয়েছে কম খরচে বিমানে যাতায়াতও। তাতে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিমান তৈরী হচ্ছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল চালকবিহীন গাড়ি তৈরির প্রযুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে এটা স্বীকার করলেন। এর আগে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ছিল। অনেকে চালকবিহীন গাড়ি তৈরির ব্যাপারে অ্যাপলের কার্যক্রমের পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু সঠিক তথ্য প্রমাণের অভাবে সেটা গুঞ্জন হিসেবেই থেকে যায়। অবশেষে কুকের বক্তব্যে এই গুঞ্জন উড়ে গেল। অ্যাপল নাকি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির প্রযুক্তির দিকে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ মাসের শুরুর দিকে ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। বিষয়টি সম্পর্কে কুক বলেন, এটা দারুণ একটা প্রযুক্তি এবং আমরা এটাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছি।
জানা গেছে, চালকবিহীন বাস২০২২ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের গণপরিবহনে যুক্ত হবে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, চালবিহীন বাসের জন্য শুরুতে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। এরপর প্রকল্পের ফল দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ১০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় যানবাহন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০২২ সালের মধ্যেই সেখানে চালকবিহীন বাস চলার কথা রয়েছে।
চালকবিহীন এসব বাস শুরুর দিকে তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এগুলো মূলত যাত্রী সম্প্রদায়ের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া অল্প দূরত্বের বাস এবং ট্রেন স্টেশনে যেতেও কাজ করবে স্বয়ংক্রিয় বাসগুলো। সিঙ্গাপুর মনে করছে, চালকবিহীন প্রযুক্তি তাদের জন্য বেশ সহায়ক হবে। বিশেষ করে দেশটির লোকবলের অভাব সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা হবে খুবই কার্যকর। এ সম্পর্কে সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রী খাও বুন ওয়ান বলেন, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন আমাদের পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন গতির সঞ্চার করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় সিঙ্গাপুরে যানজটের পরিমাণ অনেকটাই কম। রাস্তার ধরন এবং বিভিন্ন নীতিমালার কারণে এ সমস্যাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সমর্থ হয়েছে তারা। চালকবিহীন বাস চালু হলে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যানজট আরও কমানো হবে বলে উল্লেখ করেছেন খাও বুন ওয়ান।
এদিকে তীব্র যানজট থেকে মুক্তি পেতে উড়ন্ত গাড়ির দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে কেউকেউ। যানজটে পড়লে অনেকেই মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। তীব্র জ্যাম একটি দিনের পুরো পরিকল্পনাকেই নষ্ট করে দিতে পারে। এসব থেকে রক্ষা পেতে কেউ কেউ ভাবেন, উড়ন্ত গাড়ি থাকলেই সবচেয়ে ভালো হতো। বিশেষ করে ঢাকায় যারা থাকেন, তাদের প্রতিনিয়ত এটা ভাবতে হয়।
ঢাকাবাসীর মতো এই ভাবনা ভাবছেন বিজ্ঞানীরাও। বিজ্ঞানীরা চাইছেন উড়ন্ত গাড়ি উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে আরও সহজ করতে। এজন্য চলছে নিরন্তর গবেষণা ও পরিশ্রম।
দীর্ঘদিন ধরে উড়ন্ত গাড়ি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালানো হয়েছে। সর্বশেষ ক্যালিফোর্নিয়ায় উড়ন্ত গাড়ির পরীক্ষা চালানো হলো। ব্ল্যাকফ্লাই নামের এই গাড়িটি সাধারণ চালকরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এজন্য পাইলটের প্রয়োজন হবে না।
ব্ল্যাকফ্লাই একটানা সর্বোচ্চ ২৫ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ মাইল। গাড়িটির নির্মাতারা জানিয়েছেন, স্পোর্টস-সুবিধাসম্পন্ন একটি গাড়ি চালাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, এই উড়ন্ত গাড়ি চালাতেও প্রায় একই অর্থ ব্যয় হবে। তবে শুরুর দিকের মডেলগুলোতে খরচ বেশি পড়বে। ক্যালিফোর্নিয়ার চালানোর আগে ব্ল্যাকফ্লাই কানাডায় পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানকার এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এটা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান উড়ন্ত গাড়ি তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর মধ্যে কিটি-হক অন্যতম। এই প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। জানা গেছে, শুরুতে এসব উড়ন্ত গাড়ি একজন যাত্রী নিয়ে চলবে। অর্থাৎ কেবল চালকই এটা দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। এগুলোকে ব্যক্তিগত ড্রোনও বলা যেতে পারে।
এদিকে সোলার প্লেনযুক্তরাজ্যের তৈরি সৌরচালিত একটি প্লেন ১২০ দিন পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারবে। এয়ারবাস নামের প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্লেন তৈরির কাজ শুরু করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌরচালিত এই প্লেনের নাম হবে জেফার। ইতোমধ্যে জেফার দিয়ে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়েছে এয়ারবাস। যেগুলোতে প্রাথমিকভাবে সফলও হয়েছে তারা। আরও বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সৌরচালিত প্লেন তৈরির কাজ শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। জেফার প্লেনটি সম্পূর্ণ সৌরশক্তির সাহায্যে পরিচালিত হবে। দিনে সরাসরি সূর্যের আলো এবং রাতে সূর্যের আলোর সাহায্যে চার্জকৃত ব্যাটারির মাধ্যমে পরিচালিত হবে এই প্লেন।
বাণিজ্যিকভাবে জেফার তৈরি শুরু করতে কতদিন লাগবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ। তবে প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এই কাজ শুরু করতে আরও কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। জেফার বায়ুম-লের অনেক ওপর দিয়ে উড়বে। যে কারণে বাণিজ্যিক প্লেনের সঙ্গে এই প্লেনের সংঘর্ষ হবে না। এছাড়া খারাপ আবহাওয়াতেও সুরক্ষিত থাকবে জেফার।