দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠ গরম করতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) । বর্তমান মহাজোট সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক ইস্যু হাতে পেয়েও রাজপথ দখল নিতে পারেনি বিএনপি। কারণ কিছু কিছু আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হলেও রাজধানী ছিল নিষ্প্রাণ প্রায়। এর কারণগুলি বিশ্লেষণে নিম্নরূপ তথ্য পাওয়া গেছে দেশের সকল জনগণের কাছে।
দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামত বা আক্ষেপের অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতার কারণসমূহ তুলে ধরা হলো :
১) বিএনপিতে এখন কেউ দলের জন্য রাজনীতি করে না, করেন নেতার রাজনীতি। নেতারাও তাই পছন্দ করেন। হরতাল-অবরোধসহ দলীয় অন্যান্য কর্মসূচিতে এসব নেতা ও তার অনুগত নেতাকর্মীদের কাউকে রাজপথে দেখা যায় না। যার প্রভাব পড়েছে সকল আন্দোলনে।
২) স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেসব নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন বা আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাদের দল বিএনপি তা মূল্যায়ন করেনি।
৩) বিগত দিনে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সারা দেশে মহানগর ও থানা পর্যায়ে আন্দোলনে সক্রিয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলে মনোবল বাড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতেন, বর্তমানে সে ধারাবাহিকতা বিএনপিতে আর বজায় নেই।
৪) দীর্ঘদিন যাবত্ যে সকল ত্যাগী নেতৃবৃন্দ রাজপথে থেকে দলের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন বিএনপি’র বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে তাদের কোনস্থান দেয়া নি। বরং যারা নেতাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তোষামোদের রাজনীতি করছেন জাতীয় নির্বাহী, জেলা বেং মহানগর কমিটিতে তাদেরস্থান হয়েছে। যার প্রভাবও পড়েছে বর্তমান আন্দোলন-সংগ্রামে।
৫) সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় সাংগঠনিক বিরোধ নিরসনে বিএনপি চেয়ারপারসন পদক্ষেপ নিলেও তা কখনই বাস্তবায়ন করা হয়নি।
৬) ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামকে কার্যকর করার জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতা সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুস সালামের মধ্যে সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। ঢাকাতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বৃহত্তর মিরপুর অঞ্চলের বিএনপির সাবেক এমপি এস এ খালেকের সঙ্গে সাবেক কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে সাবেক কমিশনার আহসানউল্লাহ হাসানের দ্বন্দ্ব নিরসন এবং ঢাকা পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুরের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহাম্মেদ ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সভাপতি নবীউল্লাহ নবীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
যতদিন তারা সম্মিলিতভাবে ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় মাঠে না থাকবে, ততদিন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কখনোই সফল হবে না। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দলের স্বার্থে অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
৭) ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও বিভিন্ন থানা কমিটি না থাকাও ঢাকা শহরে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
৮) তাছাড়া বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুলিতে ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে উপযুক্ত দলীয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বহিরাগত প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান করাও বিএনপির মূল নেতৃত্বের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এসব প্রার্থীকে স্থানীয় ভোটাররা মেনে নেয়নি। বর্তমানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার স্থানীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত না হওয়ায় তারা রাজপথে তেমন ভূমিকা রাখছে না।
৯) রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামকে উপেক্ষা করে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ ও লবিং করছেন।
১০) মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে বিএনপির অনেক নেতাই এখন রাজপথের আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন ক্রয় করিতে ব্যস্ত।
১১) বিগত দিনে ও বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে বিএনপির যেসব নেতাকর্মীর নামে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা হয়েছে, চেয়ারপারসনের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় আইনজীবীরা চেয়ারপারসনকে দেখানোর জন্য শুধু ভিআইপি নেতাদের মামলাগুলো পরিচালনা করছেন। অধিক অর্থ ছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনা করছেন না। যা নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
১২) যেসব কর্মী দলের দুর্দিনে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন, দলীয় হাইকমান্ড তাদের পুরস্কৃত করা উচিত এবং এসব কর্মীর বিরুদ্ধে যেসব কুচক্রী মহল চেয়ারপারসনের কাছে বিষোদগার করে, চেয়ারপারসনের উচিত তাদের তিরস্কার করা।
১৩) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব না হওয়ায় দলের আন্দোলনের সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পরিচালনা করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে চেয়ারপারসনকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।
১৪) লবিং ও অর্থ দিয়ে মনোনয়ন ক্রয় করে যে ব্যক্তি, সেই ব্যক্তি দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ঝুঁকি নেবে কেন? বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
সুত্রঃ প্রিয় ডট কম।