শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দাবি করে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আন্দোলন-সহিংসতা, সংকট হলে তার দায় সরকারের। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান দাবি করছি। বল এখন সরকারের কোটে। সমস্যার সমাধান সরকারকেই করতে হবে।’
এসময় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা নিয়ে আরও আলোচনা দরকার বলে প্রস্তাব করেন।
বুধবার (৭ নভেম্বর) ১৪ দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজকের সংলাপে আমরা ৭ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি।’
ড. কামাল বলেন, ‘ইতোমধ্যে সারা দেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনও গায়েবি হয়নরানিমূলক মামলা দায়ের হবে না এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের আর গ্রেফতার করা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৭ দফার মধ্য প্রথম দফাই ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন। দ্বিতীয় দফায় ছিল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা প্রস্তাব করেছি সীমিত পরিসরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার।’
ফখরুল বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার সঙ্গে চলমান এই সংলাপের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। প্রয়োজনে আবারও তফসিল ঘোষণা করা যাবে। তারাও (১৪ দল) বলেছেন, তফসিল রিসিডিউল করা যেতে পারে।’
আশার আলো দেখছেন কি না? জবাবে ফখরুল বলেন, জনগণ আশার আলো দেখলেই আশার আলো দেখা হবে। বৃহস্পতিবার রোডমার্চ করে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা রাজশাহী যাবেন এবং শুক্রবার জনসভা করবেন বলে জানান ফখরুল। সাত দফার মধ্যে কয়টা দাবি সরকার মেনেছে জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা সবগুলো নিয়েই ভাবছি।
ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিযার মুক্তি, নির্বাচন কমিশন পনর্গঠন এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছি।
সংলাপ ফলপ্রসু ও সন্তুষ্ট কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ফলপ্রসু হলো কি হলো না এটা বুঝা যাবে না। জনগণ যদি আশার আলো দেখে আমরা আশাবাদি৷ সন্তুষ্টি-অসন্তিষ্ট এখনই বলতে চাচ্ছি না। জনগণকে দিয়েই সন্তুষ্টি আদায় করবো।আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি শান্তিপূর্ণ অবস্থান মাধ্যমে দাবি আদায়ের। বাকিটা সরকারের উপর।
ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবিতে ষড়যন্ত্র দেখছেন ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে টেনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাহলে বলবো জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক নাই৷ জনগণের দাবির সাথে তাদের সম্পর্ক নেই৷ আমরা নির্বাচন পেছানোর দাবি করছি৷ কারণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
এসময় মহাসচিব বলেন, আমাদের আন্দোলন চলবে। কালকে রোডমার্চে যাচ্ছি। পরশু জনসভা করা হবে রাজশাহীতে। তফসিল ঘোষণা করা হলে আমরা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবো।
তিনি বলেন, সংলাপকে আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি৷ সরকার যদি সমাধানের জায়গায় না আসে তাহলে তার দায় সরকারের।সরকার না মানলে আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করবো।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করতে আহ্বান জানিয়েছি। তারপরও যদি করে তাহলে কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবো।’
আগামীকাল তফসিল ঘোষণা করা হলে কিভাবে সংলাপ হবে- এমন প্রশ্নে মান্না বলেন, ‘প্রয়োজনে তফসিল আবারও ঘোষণা করা যাবে। যদিও আমরা মানা করেছি। এক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
জাসদ একাংশের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সামনে আন্দোলন হবে, সংগ্রাম হবে, দাবিও আদায় হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।