ফেনী শহরের রামপুর এলাকায় একটি বাসায় চার তরুণীকে আটকে রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত সোমবার এক তরুণী বাদী হয়ে কাওসার বিন কাসেমসহ (৩৩) অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ফেনী সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রামপুর এলাকা থেকে মো. ওমায়ের (১৯) ও আরিফুল ইসলাম প্রকাশ আরমান (৩৩) নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রামপুর এলাকায় একটি বাসায় দীর্ঘ ছয়মাস ধরে চার তরুণীকে বিভিন্ন স্থান থেকে এনে আটকে রেখে আসামি নিজে ও তার সহযোগীদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অসম্মতি জানালে তাদেরকে সিগারেটের ছ্যাকা, বৈদ্যুতিক শক ও মারধর করে বিভিন্নভাবে অমানসিক নির্যাতন চালানো হতো। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে। এলাকাবাসী এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
গত সোমবার সকালে ওই বাসার ভেতরে তরুণীদের কান্না ও চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাসার মালিকসহ নির্যাতনকারীরা পালিয়ে যায়। পরে ওই বাসার দরজার তালা ভেঙে শারীরিক ও মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় চার তরুণীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
তরুণীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ওই বাসায় এভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে প্রলোভন ও প্রেমের অভিনয় করে অভিনব কৌশলে কাওসার বিন কাসেমসহ তার সহযোগীরা তাদেরকে বাসায় এনে জোরপূর্বক মাদক সেবন করিয়ে তাদেরকে গণধর্ষণ করা হতো। এমনকি বিভিন্ন সময় অজ্ঞাতনামা লোকজনকে বাসায় নিয়ে এসেও একই কায়দায় তাদের সাথে দৈহিক মিলনে বাধ্য করা হতো। এতে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর নেমে আসত অমানসিক নির্যাতন। তাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়া হতো।
এভাবে উদ্ধারকৃত বাদীসহ চার তরুণী তাদের ওপর চালানো যৌন নিপীড়ন ও অমানসিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আবু তাহের বলেন, গত সোমবার দুপুরে পুলিশ শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য চার তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে ওই তরুণীদের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান জানান, শহরের রামপুরের ওই বাসা থেকে তরুণীদের উদ্ধার অভিযানের সময় বাসার বিভিন্ন কক্ষ থেকে ৫৩ পিস ইয়াবা বড়িসহ মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নির্যাতনের আলামত জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া মাদক উদ্ধারের ঘটনায়ও থানায় পৃথক মামলা হয়েছে। সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহীদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি কাওসার বিন কাসেমকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের পুলিশি রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গত সোমবার দুপুরে ফেনী সদর হাসপাতালে চার তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে ‘২২ ধারায়’ জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য ফেনীর বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতকে তারা তাদের ওপর চালানো অমানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
সোর্সঃ পরিবর্তন ডট কম।