আপনার জীবনবৃত্তান্ত আপডেট করা জরুরি। বেশিরভাগ প্রার্থীর মতোই যদি জীবনবৃত্তান্ত হয় আপনার, তাহলে বুঝতে হবে সেটি যতোটুকু ভালো হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। ভাষাই হলো এখানে মূল সমস্যা।
বেশিরভাগ জীবনবৃত্তান্ত অপ্রচলিত শব্দ, পরিভাষার কারণে ‘মরা গাছে ভরা জঙ্গল’ এর মতো হয়ে যায়। গতানুগতিক, বিরক্তিকর, পরিভাষা বা শব্দ ব্যবহারের কারণে নিয়োগদাতারা ওই ধরনের জীবনবৃত্তান্ত বার বার দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। তাই নিচের কিছু শব্দ বা পরিভাষা থেকে জীবনবৃত্তান্তকে মুক্ত রাখলে সুফল পাবেন আপনি।
* ‘Salary negotiable’ : নিয়োগদাতারা জানেন আপনি বেতন নিয়ে কথা বলতে চান। যদি ওই বিষয়ে জীবনবৃত্তান্তে কিছু লেখেন আপনি, তাহলে তারা হয়তো বুঝবেন যে নিজের বা কাজের ব্যাপারে আর কিছু জানানোর নেই বলেই আপনি অনেকটা শূন্যস্থান পূরণ করেছেন বেতন প্রসঙ্গ টেনে। অনেক কোম্পানিতে বেতন নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রেও বেতন নিয়ে সমঝোতা প্রসঙ্গে জীবনবৃত্তান্তে কিছু লেখা ঠিক না।
* ‘References available by request’ : অনেকে জীবনবৃত্তান্তে এ ধরনের উদ্ধৃতি দেন। এটিও ঠিক না। জীবনবৃত্তান্ত লিখতে যথা সম্ভব অপ্রয়োজনীয় শব্দ, বাক্য পরিহার করুন।
* ‘Responsible for———’ : এই টার্মটি দেখে নিয়োগদাতা আপনার সম্পর্কে সাদামাটা একটি ধারণা পাবেন। আপনাকে হয়তো খুব সাধারণ একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবেন তিনি। কারণ অফিসে দায়িত্বশীলতা আপনার কোনো গুণ নয়। বরং কাজের খাতিরে অন্য সবার মতো আপনাকেও দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এটি আলাদা করে উল্লেখ করার কোনো বিষয় নয়। তাই ‘রেসপন্সিবল ফর’ শব্দের পরিবর্তে ‘ম্যানেজড’, ‘লেড’ বা এ ধরনের সুস্পষ্ট, স্ট্রং ভার্ব ব্যবহার করুন।
* ‘Experience working in———’ : আবারো মনে রাখতে হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়বে আপনার। এটা ব্যক্তিগত কোনো গুণ নয়। তাই জীবনবৃত্তান্তে কি কি কাজে আপনার অভিজ্ঞতা আছে, তা উল্লেখ না করে বরং আপনি কি কি সাফল্য অর্জন করেছেন তা উল্লেখ করুন।
* ‘Problem solving skills’ : সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আপনার আছে, এ কথাও জীবনবৃত্তান্তে জানানো জরুরি নয়।
* ‘Detail oriented’ : অফিসে মূলত সবাই যার যার কাজে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ দেন। এটি সবার কর্তব্য। আলাদা করে নিয়োগদাতাকে এ ব্যাপারে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বিষয়টি হাস্যকর হয়ে যেতে পারে। বরং অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান জীবনবৃত্তান্তে।
* ‘Hardworking’ : যেকোনো কাজ করার আগে এ নিয়ে বেশি কথা না বলে তা করে দেখানোই উত্তম। অফিসে এ নীতি খুব বেশি প্রযোজ্য। নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী দাবী করতে পারেন যে কেউ। কিন্তু কাজের মাধ্যমে বসকে যদি তা প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে সে কথার কোনো মূল্য নেই। তাই আগের অফিসে কী ধরনের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিয়োগদাতাকে মুনাফা এনে দিয়েছিলেন, তা জানান। অযথা কঠোর পরিশ্রমের কথা না বলাই ভালো।
* ‘Team player’ : আবারো একই কথা। বলার চেয়ে কাজ করার ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে আপনাকে। নিজেকে টিম প্লেয়ার হিসেবে জাহির না করে, প্রমাণ করুন আপনি সত্যিকার অর্থেই কাজের প্রতি দায়িত্বশীল। অনেক কোম্পানিতে অবশ্য দলবদ্ধ হয়ে কাজ না করে একক ভাবে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি অন্যদের সঙ্গে সফলভাবে কাজ করার ঘটনা থাকে, তা জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করুন। কেমন টিমের সঙ্গে আপনি কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন, সেটাও জানাতে পারেন।
* ‘Proactive’ : এটা একটা ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। ইতিবাচক চিন্তা ধারা বোঝাতে এ শব্দটি ব্যবহার করা হলেও আবারো বলতে হচ্ছে, কথার মাধ্যমে নয়, কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করুন।
* ‘Objective’ : এই শব্দটিও ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। যেহেতু চাকরিটা পাওয়াই আপনার লক্ষ্য, তাই শব্দটি জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ না করে ক্যারিয়ার সামারি উল্লেখ করুন। তবে যদি পদটির বিপরীতে আপনার পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকে, বা কোনো নির্দিষ্ট পদে আপনি আবেদন করে না থাকেন, তাহলে এ শব্দটি ব্যবহার করতে পারেন।