ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী ও মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ৩০ মিনিট দেরিতে শুরু হয়েছে।
এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এর মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতলে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের তথ্য সহায়তা কেন্দ্র থেকে ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল-বেরুনী হল ও মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটেছে। এই সময় গুলি ছোড়ারও ঘটনা ঘটে। এছাড়াও ছাত্রলীগকর্মীদের হাতে রামদা, ক্রিচ, রড, লাঠি, খুর ছিল। রাত ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে:
বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড়ে অবস্থিত শাখা ছাত্রলীগের তথ্য সহায়তা কেন্দ্র থেকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ৪৫ ব্যাচের দুই ছাত্রলীগকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করে। পরে ওই ছাত্রী মুঠোফোনে আল-বেরুনী হলে থাকা তার বন্ধুদের জানালে ওই হলের ৪৬ ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী ঘটনাস্থলে এসে ওই দুই ছাত্রলীগকর্মীর কাছে উত্যক্তের কারণ জানতে চান। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে উভয়পক্ষ হলে ফিরে যায়।
এরপর রাত ১২টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আল-বেরুনী হলে হামলা চালায়। পরে আল-বেরুনী হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীরা মীর মোশাররফ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে ধাওয়া দেয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় উভয় হলের অন্তত ৫০ সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়।
আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া গুরুতর আহত ৯ জনকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, ‘সংঘর্ষে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ১০-১৫ জন গুরুতর আহত শিক্ষার্থীকে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।’
অন্যদিকে টেকনিকেল মেডিকেল অফিসার জাকারিয়া জানান, ‘আহতের সংখ্যা কমপক্ষে অর্ধশত হবে।’ আহতদের অধিকাংশই আল বেরুনি হলের শিক্ষার্থী বলে জানান তিনি।
সংঘর্ষের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও আল-বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র আবু সাদাত সায়েম বলেন, ‘মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা হলের পাশে অবস্থান নিয়ে কাচের বতল ছুড়ে মারে। তাদের প্রত্যেকের হাতে খুর ছিল। তাদের ছোড়া বতল, খুরের আঘাতে আমাদের ১৫-২০ জন আহত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় ৫০ জনের মতো হালকা আঘাত পেয়েছে। ঘটনার সময় তারা দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছে।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। এসব ঘটনা ইমেজ নষ্ট করে। আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
পরীক্ষা শুরু ৩০ মিনিট পর:
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সকাল ৭টার দিকে আল বেরুনী হল সংলগ্ন জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রাখেন আল-বেরুনি হলের শিক্ষার্থীরা। এতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে প্রায় আধাঘণ্টা দেরি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশ্বাসে তারা তালা খুলে দিলে পরীক্ষা শুরু হয়।
প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে এমন ঘটনা আশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’
আল-বেরুনি হলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে তালা দেয়ার ঘটনা ও এ ঘটনায় ভর্তি পরীক্ষা দেরীতে শুরু হওয়ায় প্রক্টর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।