সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী ২৭ অক্টোবরেই চট্টগ্রামে সমাবেশ করবো। সরকার যদি পারে তাহলে যেন ঠেকায়।’
সোমবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে “নির্বাচন ও মানবাধিকার” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সভার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ডায়ালগ এইড ফাউন্ডেশন (ইডাফ)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মান্না বলেন, ‘সমাবেশ নিয়ে আমরা কোনও নাটক করিনি। নাটক করার কোনও ব্যাপার নেই। সিলেটে ২৩ তারিখে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। ছাত্রলীগ-যুবলীগের ওখানে অনুষ্ঠান আছে বলে অজুহাত দেখিয়েছেন। আমরা বললাম ঠিক আছে ওরা করুক। গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাইনি।’
তিনি বলেন, ‘২৭ তারিখে আমরা চট্টগ্রামে সমাবেশ করবো। ২৭ তারিখের কাছে এবার ২৮ বলবো না। ২৭ বলেছি ২৭ তারিখেই সমাবেশ করবো, সরকার যদি পারে তাহলে যেন ঠেকায়। তারাও জানে সিলেটে যেহেতু অনুমতি দিতে হয়েছে চট্টগ্রামেও দিতে হবে।’
সরকার চট্টগ্রামের সমাবেশেরও অনুমতি দেবে- এমন আশা প্রকাশ করে মান্না বলেন, ‘সরকারের চামচারা বলছেন শেখ হাসিনা কি না পারেন, উনার ক্ষমতা অপরিসীম। আজ আমি বলি- কই শেখ হাসিনা, আমাদের জনসভা তো আটকাতে পারলেন না। শেখ হাসিনার যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে থাকে তাহলে তাঁকে ধন্যবাদ দিচ্ছি, আর শুভবুদ্ধির উদয় হলে চট্টগ্রামের জনসভারও অনুমতি দেবেন।’
সরকারের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সরকারের ভোট নাই, কিন্তু সরকার তো আছে, এই কথা বলে তারা (আওয়ামী লীগের নেতারা) বলছেন আমরা বৈধ সরকার। আমাদেরকে মানতে হবে। পাঁচ বছর মানুষ শুধু দেখেছে আর ভেবেছে এ-ও কি সম্ভব? এরকম জুলুমও কেউ করতে পারে? এত বড় মিথ্যে কথাও কেউ বলতে পারে? এত বড় অন্যায়ও কেউ করতে পারে? হতভম্ব দেশের মানুষ ভেবেছে এত বড় যুদ্ধ করলাম, লড়াই করলাম, মুক্তিযুদ্ধ হল, লাখো মানুষের রক্তের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হল গণতন্ত্রের জন্য, সেই দেশের গণতন্ত্রকে কি এইভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে কেউ চেষ্টা করতে পারে! মানুষ প্রথম বিশ্বাস করতে পারে নাই, পরে করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলছি নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই সরকারের কোনও সদস্য কোনও মন্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচনে ক্যাম্পেইন করতে পারবেন না। আপনাদের অপছন্দ হবে না, সাধারণ মানুষের পছন্দ হবে, এরকম সরকারের লিস্ট আমাদের বলুন, আমরা দিচ্ছি। এরকম সরকার যদি দিতে না চান তাহলে তো আন্দোলন করবোই। এখন আবার প্রশ্ন তুলছেন যদি সাত দফা না মানেন? আমি বলি মানবেন না কেন? মানতে হবেই, মানাবো এবং মানার জন্য লড়াই করবো।’
সরকারবিরোধী লড়াইয়ের নমুনা ব্যাখ্যা করে মান্না বলেন, ‘এই লড়াই হচ্ছে, এখন যেমন সিলেটে মিটিং করছি, এরপর আমরা চট্টগ্রামে যাবো, তারপর যাব রাজশাহীতে, সমস্ত বিভাগীয় শহর, জেলায় জেলায় যাবো আমরা, দেশের গোটা মানুষদের বলবো গত নির্বাচনের যে ভণ্ডামিটা হয়েছে, তখন ঘরের মধ্যে মনের দুঃখে বসেছিলেন, এবার যে নির্বাচনটা হবে সবাই ঘরে মধ্য থেকে বেরিয়ে আসুন। ভোট কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পরে চিড়া, মুড়ি, ডাল যা আছে সবকিছু নিয়ে কেন্দ্রে বসে থাকবেন- যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোটের ফলাফল ওরা ঠিকমত ঘোষণা করে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি ছানোয়ার হোসেন, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো:আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন ও যুবদল নেতা কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ।