বছরের পর বছর ধরে রাজধানীর গুলিস্থানে ফুটপাতের হকাররা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নিত্যনতুন পণ্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন। এটা কোনো অস্বাভাবিক কিছু না। তবে সম্প্রতি কয়েক বছর আগে শুধুমাত্র কোম্পানির প্রচারের জন্য এনার্জি বাল্ব নিয়ে আসে হকাররা। সারাদেশে যখন এই বাল্বের দাম ৩শ’ টাকা, তখন গুলিস্থানে হকাররা শুধু কোম্পানির প্রচারের জন্য ১শ’ টাকা করে বিক্রি শুরু করে। ভালো-মন্দ পরের কথা তবে খুব দ্রুতই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে এই বাল্ব।
ঢাকার গুলিস্থান ছাড়াও এই এনার্জি বাল্ব এয়ারপোর্ট এলাকা, উত্তরার রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এলাকার পাশের ফুটপাত, মিরপুর ১ নম্বর, ২ নম্বর ১০ নম্বর এলাকা, ফার্মগেট, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ৩শ’ টাকার বাল্বগুলো ৭০ শতাংশ ছাড়ে মাত্র ১শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। একটা মাইকে রেকর্ড বাজিয়ে দিন-রাত চলে এই বেচাকেনা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৭০ শতাংশ ছাড়ের খবর প্রকাশ হয়। বলা হচ্ছিল কোম্পানির প্রচারের জন্য বাল্বগুলোতে ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
শুধুমাত্র কোম্পানির প্রচারের নামে চার বছর ধরে গুলিস্থানে বাল্ব বিক্রি করছেন শরিফুল ইসলাম। এই প্রচার শেষ হবে কবে জানতে চাইলে তিনি জানান, এইসব কোম্পানির প্রচার কোনো দিনও শেষ হবে না। গুলিস্থান হানিফ ফ্লাইওভারের পাশের আরেক বাল্ব বিক্রেতাও একই কথা জানান।
গুলিস্থানের আরেক বাল্ব বিক্রেতা রাশেদুল বলেন, কোম্পানির প্রচারের জন্য এটা শুধু কথার কথা। আসল কথা হলো মানুষকে আকৃষ্ট করে কিভাবে বাল্ব বেচতে পারবো সেই চিন্তা। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিক্রিও বেড়েছে তাই অন্য পণ্যও এখন এই ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাল্বের গুণগত মান সম্পর্কে জনতে চাইলে তিনি জানান, বাল্বগুলো ভালো। যদি ৬ মাসের মধ্যে নষ্ট হয়, তাহলে আমরা ফেরত নিয়ে নতুন বাল্ব দেই।
এতো গেল বাল্ব বিক্রির খবর। এবার দেখা যাক আরো কী কী এই একই কায়দায় বিক্রি হয়। বাল্ব বিক্রির এই পদ্ধতি এতোটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, এই পথ ধরে আরো অনেক হকার ঢাকার জনসমাগম এলাকাতে অনেক কিছু বিক্রি করছে। একই কায়দায় শুধু কোম্পানির প্রচারের জন্য ৩৫০ টাকার লুঙ্গি ১৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে কোম্পানির প্রচারের নামে কলম, টুথব্রাশ, মোবাইল চার্জার, মোবাইলের পাওয়ার ব্যাংক, পারফিউম, মেমরি ও ঘড়ি ইত্যাদি বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু লোকসমাগম এলাকাতেই নয় রাজধানীর মোড়ে মোড়ে, মহল্লায় মহল্লায় দেখা যাচ্ছে কোম্পানির প্রচারের নামে এসব পণ্য বিক্রি করতে।
আগেও কোম্পানির প্রচারের জন্য মাঝে মাঝে লোকাল বাসে হকারদের দেখা যেত। কিন্তু সেইসব হকার এনার্জি বাল্বের মতো নেমে এসেছেন ফুটপাতে। রীতিমতো মাইকিং করে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন পণ্য। ঢাকার ব্যস্ততম ফুটপাত দখল করে মাইকিং করে চলছে কোম্পানির প্রচার। যেসব প্রচার কখনোই শেষ হবার সুযোগ নেই।
গুলিস্থানে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, কোম্পানির প্রচারের কথা বলে নামা এইসব হকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষও কিনছে, কেনার সময় হয়তো তারা বুঝতে পারছে না তারা কী কিনছে। তবে মানুষ যা কিনুক না কেনো দেখে-শুনে-বুঝে কেনা দরকার।
গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশে কর্তব্যরত একজন পুলিশের এসআই’কে কোম্পানির প্রচারের নামে ফুটপাতে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি নাম না বলা শর্তে বলেন, ফুটপাতের এসব হকারদের কারণে গুলিস্থানে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। এদেরকে উঠিয়ে দিয়ে পুনর্বাসিত করলে সাধারণ মানুষ আর এসব প্রতারণার শিকার হবে না। আর তাদের ( হকারদের ) উঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সিটি কর্পোরশনের।