সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলে সচিব কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ওই অনুমোদন দেন বলে তাঁর কার্য্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি চাকরিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ক্যাডার-নন ক্যাডার পদে কোটা প্রত্যাহার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অন্যান্য পদগুলোতে চাকরির কোটা বহাল রাখার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সচিব কমিটি। গত সোমবার সচিব কমিটির এ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। আগামী ১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য বৈঠকে এই সুপারিশ মন্ত্রিসভার অনুম্দোনের জন্য উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাহী আদেশ দিয়ে পরিবর্তিত কোটা সম্পর্কিত আদেশ জারি করবে। সাধারণভাবে আদেশ জারির তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল শুক্রবার রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। ফিরবেন ৩০ সেপ্টেম্বর। তাই পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১ অক্টোবর উঠবে ওই সুপারিশ।
প্রসঙ্গত. সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে এ বছরের ১৭ ফেরুয়ারি আন্দোলন শুরু করে। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেয়া ভাষণে কোটা বাতিল করে দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার -বাতিলে পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রদানের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে।
এরআগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সড়ক অবরোধসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন তছনছ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলাও হয়। প্রায় সারাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ভিসির ভবন ভাংচুরের অভিযোগে করা মামলায় আন্দোলনকারী বেশকয়েকজন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেফতারকৃত আট আন্দোলনকারী জামিনে মুক্তি পায়। ইতিমধ্যে ঘোষিত ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমানিরি পরীক্ষার আগেই কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, আপিল বিভাগ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের জন্য যে রায় প্রদান করেছেন সে প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সচিব কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পরামর্শ চেয়ে গত ১৬ আগস্ট চিঠি প্রেরণ করেন। ২০ আগস্ট ফিরতি চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মতামত প্রেরণ করেন। এ প্রেক্ষিতে সচিব কমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের ভিত্তিতে তা রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের জন্য প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে মন্ত্রণালয় জানায় এটি এখন আর আপিল বিভাগের উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটি নির্বাহী বিভাগের আদেশ দিয়ে বাতিল, সংশোধন ও সংযোজন করা যেতে পারে। কারণ আদালতের পর্যবেক্ষনেই বিষয়টি পরিস্কার যে কোটা রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের।
এর ওপর ভিত্তি করে সচিব কমিটি নির্বাহী আদেশ দ্বারা পরিমার্জিত আকারে কোটার বিষয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করে। এ অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্যাডার-নন ক্যাডার পদে কোন ধরনের কোটা পদ্ধতি না রাখার আদেশ জারির সুপারিশ করা হয়েছে।