একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার থেকে সরে আসার কোনো সম্ভবনা নেই জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে যারা মামলা করবে এটা তাদের ব্যাপার, আমার কিছু বলার নেই। আমরা ইভিএম সীমিত আকারে ব্যবহার করবো।’
শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ’ সংক্রান্ত প্রশিক্ষনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।
এর আগে প্রশিক্ষকদের উদ্দেশেও সিইসি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আইনগত কোনো বাধা নেই। আমরা এটা সীমিত আকারে ব্যবহার করবো। এটা থেকে পিছিয়ে যাব না।’
আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে মামলার হুমকি দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল এক অনুষ্ঠানে জোট নেতারা এ কথা বলছেন, দেশে ইভিএমের ব্যবহার সংবিধান পরিপন্থি। কারণ সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। আর ইভিএম দ্বারা প্রত্যক্ষ ভোট হয় না। সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘এটা তাদের ব্যাপার আমার কিছু বলার নেই। আমরা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করবো। এটা করতে হবে। একেবারে সীমিত আকারে ব্যবহার করবো।’
তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) ভুল ভাঙ্গাতে আপনাদের তরফ থেকে কোন আায়োজন থাকবে কিনা?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ নাহ’।
ইভিএম ব্যবহার করার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ‘সব আসনেই কি ইভিএম ব্যবহার হবে? কতটুকু সীমিত ব্যবহার হবে সেটা এখনও ঠিক করিনি। আগামী শনিবার মিটিং হবে সেদিন এটা পরিস্কার হবে। সেসময় ঠিক হবে। হয় পূর্ণাঙ্গ আসন, হয় কিছু সংখ্যক কেন্দ্রে। এই দুইটা জিনিস আমরা মিটিংয়ে ঠিক করবো।’
এর আগে প্রশিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নূরুল হুদা বলেন, ‘ইভিএম একটি নতুন উদ্যোগ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার যে জটিলতা সেটা নিরসনের একটা উপায় আমাদের বের করতেই হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করি সেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট দিতে যে ঝামেলা সেটা থেকে মুক্তি পেতে পারবে। সে কারণেই ইভিএম চালু করতে চাই।’
সিইসি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি আমাদের রয়েছে। এ বছর আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এটা ব্যবহার করার জন্য আইনের যে প্রক্রিয়া আমরা সেগুলো আমরা ঠিক করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আইনগত কোনো বাধা নেই। আমরা এটা সিমীত আকারে ব্যবহার করবো। এটা থেকে পিছিয়ে যাব না।’
প্রশিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যেখানে ইভিএম ব্যবহার হবে, সেখানে অন্তত ৫-৬ দিন আগে আগে মানুষকে বুঝাতে হবে। দেখাতে হবে কিভাবে ভোট দেয়া হয়। ভোটারদের বুঝাতে হবে। বিভিন্ন দল ইভিএমের বিরোধিতা করেন আমি অনুরোধ করবো তাদের প্রতিনিধি আমাদের কাছে পাঠান। তারা এটি এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখুক। তাদের লোক দিয়ে ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করুক। তাহলে তাদের সংশয় কেটে যাবে।’
প্রশিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি। দিনটি এতোই গুরুত্বপূণ দিন যে দিনে জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচন করবে। দিনটি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলসহ সকলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।’
তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষতা, কারিগরি দক্ষতা, নির্বাচন পরিচালনায় আইন বিধিবিধান জানা দরকার। আপনারা নির্বাচন কিভাবে পরিচালনা করবেন সেটা জানলেও, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারদের জানার কথা নয়। বার বার বিভিন্ন পর্যায়ে এই ট্রেনিং দেয়া হয়ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আপনারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনারা তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেবেন।’
পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘কারণ তারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তারা থাকেন মাঠে, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তারা প্রশ্ন করবে, জানতে চাইবে সেটি তাদের বুঝাবেন। জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সব রকমের ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বব করেন নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক।