বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসের আবেদন গ্রহণ শুরু হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে। চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, কোটা বিষয়ে সরকারের সবশেষ গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার নিয়োগ হবে। অর্থাৎ এই বিসিএসেও ৫৬ শতাংশ কোটা পদ্ধতি বহাল থাকছে। কারণে কোটার বিষয়ে সরকার গঠিত কমিটি এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। কোটা পুরোপুরি বাতিল করা হবে নাকি সংস্কার করা হবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আজও আসে নি। বিষয়টি পর্যালোচনা করছে কমিটি।
সরকারি কমর্কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে ২০০, পুলিশে ৭২, পররাষ্ট্রে ২৫, করে ২৪, শুল্ক আবগারিতে ৩২ ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ৮০০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। মোট ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আর কোটা রেখে ৪০ তমের সার্কুলারের বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সাদিক বলেন, ৪০তম বিসিএসে মোট ১ হাজার ৯০৩ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বিষয়ে সরকারের সবশেষ গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
এদিকে কোটার সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির পর ৪০ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারির দাবি জানায় কোটা আন্দোলনকারীরা। ৪০ তম বিসিএসের সার্কুলার হওয়ার আগে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এ সময় তিন দফা দাবিও উত্থাপন করা হয়।
শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা পাঁচ দফার আলোকে আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা। এ সময় তিনি ৩দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করা, হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা এবং পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আশা করি সরকার ছাত্র সমাজকে রাজপথে নেমে প্রজ্ঞাপন আদায়ের দিকে ধাবিত করবেন না। সরকারের অনাগ্রহ ও উদাসীনতা যদি প্রজ্ঞাপন জারি আটকে রাখে তবে ছাত্র সমাজ রাজপথে নেমেই দাবি আদায় করতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে মহান জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণার পর দীর্ঘ পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও কোটা সংস্কারের কাঙ্ক্ষিত প্রজ্ঞাপন এখনও জারি না হওয়ায় ছাত্র সমাজ হতাশ ও বিক্ষুব্ধ
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা ও পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া।
প্রসঙ্গত সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ‘কোটাই থাকবে না’ বলে ঘোষণা দেন। এরপর ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও জারি হয়নি কোটার প্রজ্ঞাপন। কোটার সংস্কারে গঠিত কমিটি বলছে, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
সংশ্লিষ্ট সূ্ত্রে জানা গেছে, তিন মাস আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৪০তম বিসিএসের জন্য জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয় পিএসসিতে। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজারেরও বেশি পদে নিয়োগের চাহিদা পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে ২২৮টি, পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার ৭০টি, পররাষ্ট্র ক্যাডারে সহকারী সচিব ২৫টি, আনসার ক্যাডারে ১২, মৎস্য ক্যাডারে ৩৪৪, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক ১৫ এবং শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে প্রায় ১ হাজার ক্যাডার নিয়োগের চাহিদার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সাজর্ন, সহকারী ডেন্টাল সাজর্ন, কৃষি ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ কমর্কতার্, সহকারী বন সংরক্ষক, ভেটেরিনারি সাজর্ন, সহকারী প্রকৌশলী, কর ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার, তথ্য ক্যাডার, রেলওয়ে প্রকৌশল ক্যাডারে নিবার্হী প্রকৌশলী ও সমমানের পদ, ইকোনমিক ক্যাডারে সহকারী প্রধান, রেলওয়ে পরিবহন ও ডাক ক্যাডারে সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল পদে প্রায় ১ হাজার কমর্কতার্ নিয়োগের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়।
কোটা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা চাই সরকার আমাদের ৫ দফার ভিত্তিতে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। দেশের সব চাকরিপ্রত্যাশীও সেটাই চায়।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মূলত চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম। সাধারণ শিক্ষাথীর্রা যেটা চাইবে আমরাও সে অনুসারে আমাদের কমর্সূচি চুড়ান্ত করব। ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি যদি আমাদের দাবি না মেনে প্রকাশ করা হয় তবে আমরাও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন কমর্সূচিতে নামতে বাধ্য হব। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের শীষর্ মহল চাইলে এটা এত সময় লাগার কথা নয়। সরকারের উচিত, এটাকে আর ঝুলিয়ে না রেখে এখনই সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
আমরা মনে করি, নীতিনিধার্রকদের গাফিলতি ও সদিচ্ছার অভাবের কারণেই বিষয়টি ঝুলে আছে। আমরা আশা করব, আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। প্রয়োজন হলে আমরা এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আবারও আলোচনা করতে চাই। আমরা সংঘাত সহিংসতা চাই না।
এবিষয় জানতে চাইলে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা আশা করি সরকার ছাত্র সমাজকে রাজপথে নেমে প্রজ্ঞাপন আদায়ের দিকে ধাবিত করবেন না। সরকারের অনাগ্রহ ও উদাসীনতা যদি প্রজ্ঞাপন জারি আটকে রাখে তবে ছাত্র সমাজ রাজপথে নেমেই দাবি আদায় করতে বাধ্য হবো।