(ডিসক্লেইমার: ‘কালের কণ্ঠ’র জন্য লেখা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির উপর আমার পুরনো কিছু লেখাকে এ নোটে একত্র করে দিলাম। সাথে প্রথম আলো’র জন্য লেখা আরেকটি লেখা, যা আমার ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল (‘প্রথম আলো’ ভার্সন)’ নোটটিতে থাকার কথা ছিল, কিন্তু আমি ভুলে রাখিনি বলে ওখানে নেই, সেটাও দিয়ে দিলাম। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে লেখাগুলি তৈরি করেছিলাম ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য। সাথে ৩৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরিক্ষা নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত নোটটাও দিয়ে দিলাম। বর্তমানে সিলেবাসে ও প্রশ্নের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে এ নোটের টেকনিকগুলি ৩৮তম ও তার পরবর্তী বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য কাজে নাও লাগতে পারে—এটা মাথায় রেখে নোটটা পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। গুড লাক!)
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: ইংরেজি
…………………………………………………………….
Stop smoking.
Stop to smoke.
পার্থক্যটা কোথায়? Stop’য়ের পর কি সবসময়ই verb+(-ing) হবেই? এটা বুঝতে কী লাগে? শুধুই গ্রামার? নাহ! কমনসেন্সও লাগে।
ইংরেজিতে ভাল করার মূলমন্ত্র ২টি:
এক। বানান ভুল করা যাবে না।
দুই। গ্রামাটিক্যাল ভুল করা যাবে না।
এই ২টি ব্যাপার মাথায় রেখে একেবারে সহজ ভাষায় ইংরেজিতে লেখার চর্চা করুন। ফেসবুকে খুব সহজ ইংরেজিতে একটু বড়-বড় স্ট্যাটাস আর কমেন্ট লিখুন।
ওপরের কথাগুলি কেন বললাম? ৩৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নটা দেখলে বুঝতে পারবেন, লিখিত পরীক্ষার কিছু-কিছু ব্যাপার মাথায় রেখে প্রিলির প্রস্তুতি নিলে চাকরি পাওয়াটা সহজ হবে।
আরেকটা কাজ অবশ্যই করবেন। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অনুবাদ। খুব একটা সহজ অনুবাদ বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণত কখনওই আসে না। এই অংশটা এখন থেকেই একটু ভিন্নভাবে পড়ে রাখতে পারেন। বিভিন্ন ইংরেজি আর বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়কে নিয়মিত অনুবাদ করুন। কাজটি করাটা কষ্টকর, কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি, এটা নিয়মিত করতে পারলে খুবই কাজে দেবে।
এখন প্রিলি নিয়ে কথা বলছি। ল্যাঙ্গুয়েজ পার্টে গ্রামার এবং ইউসেজের উপর প্রশ্ন আসবে। কয়েকটি গাইড বই এবং জব সল্যুশন থেকে প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্জামস্, অ্যা প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, জন ইস্টউডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামার, টি জে ফিটিকাইডসের কমন মিস্টেকস ইন ইংলিশ সহ আরও কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বই কষ্ট করে উল্টেপাল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যেস করুন, অনেক কাজে আসবে। যেমন, এনট্রাস্ট শব্দটির পর ‘টু’ হয়, আবার ‘উইথ’ও হয়। ডিকশনারির উদাহরণ দেখে এটা লিখে-লিখে শিখলে ভুলে যাওয়ার কথা না। ইংরেজি শিখতে হয় লিখে-লিখে। ইংরেজির জন্য বেশি পরিশ্রম করুন, অনেক কাজে লাগবে।
ভোকাবুলারির জন্য ম্যাক ক্যারথি এবং ও’ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ (সবগুলো খণ্ড), নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজি সহ দুএকটি দেশীয় বইও দেখতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার আগের বছরের প্রশ্নগুলি থেকে শুধু ভোকাবুলারি সেগমেন্টটা সল্ভ করলে কাজে লাগবে। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন। বিভিন্ন ইস্যুর উপর রিপোর্ট, সম্পাদকীয় আর সম্পাদকের নিকট পত্র অর্থ বুঝে সময় নিয়ে পড়ুন; রিটেনেও কাজে লাগবে।
লিটারেচারের প্রস্তুতি নেয়ার সময় মাথায় রাখবেন, দুএকটি প্রশ্নের উত্তর যাঁরা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স, তাঁরাও পারবেন না। নেগেটিভ মার্কিং হয় এমন কম্পিটিটিভ পরীক্ষার নিয়মই হল, সবক’টার উত্তর করা যাবে না। আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ গাইড বই আর সাথে ইন্টারনেটে ইংলিশ লিটারেচার বেসিকস্ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে কাজে আসবে।
৩৫তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন ছিল এরকম: Women are too often ___ by family commitments. (ক) confused (খ) controlled (গ) contaminated (ঘ) constrained
এটা কেন লিখলাম? আমাকে একটা প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়: “ভাইয়া, ইংলিশ গ্রামারের জন্য কোন বইটা পড়ব?” আমি দুইটা বইয়ের নাম বলিঃ Oxford Advanced Learner’s Dictionary আর Longman Dictionary of Contemporary English. সাথে আরও কিছু বইয়ের কথাও বলি। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ওরা তো আমার কাছ থেকে গাইড বইয়ের নামই জানতে চেয়েছিল। আর আমি কিনা! অথচ গতবার গাইড বই থেকে কয়টা প্রশ্ন ‘কমন’ এসেছে? আপনি লংম্যানের ডিকশনারির constrain এন্ট্রিটাতে গিয়ে দেখুন। ওই এন্ট্রির শেষ একজাম্পলটা: Women’s employment opportunities are often severely ‘constrained’ by family commitments. কী বুঝলেন? প্রশ্ন কোথা থেকে হয়? যাঁরা প্রশ্ন করেন ওদের কি সময় আছে গাইড বই দেখে প্রশ্ন করার? কিংবা কোচিং সেন্টারের গাদা-গাদা ‘শিটমার্কা’ শিট পড়ার? সত্যিই নেই। গতবারের বিসিএস পরীক্ষা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। একটা গ্রামারের প্রশ্ন না পারলে আমরা গাইড বই খুঁজতে শুরু করি। একেক গাইডে একেকরকমের উত্তর। এরপর কোচিংয়ের স্যারদের পেছনে ছুটি। কী দরকার, ভাই? ওই গাইড বইয়ের লেখক কিংবা ওই কোচিংয়ের স্যার কি আপনার চাইতে খুব বেশি জানেন? কী হয় একটু কষ্ট করে ডিকশনারির এন্ট্রিতে গিয়ে একজাম্পলগুলো স্টাডি করে শিখলে? আমি ডিকশনারি মুখস্থ করতে বলছি না। আমি বলছি, যেসব প্রশ্নের উত্তরে কনফিউশন থাকবে, সেসব প্রশ্নের উত্তরের কনফিউশন দূর করার দায়িত্বটা ডিকশনারিকে দিয়ে দিতে। এতে অনেক মূল্যবান সময় বেঁচে যাবে, আপনি সঠিক জিনিসটাও শিখতে পারবেন। উদাহরণ সহ শিখলে মনে থাকে সবচাইতে বেশি। প্রথম-প্রথম একটু কষ্ট হলেও এভাবে করে প্র্যাকটিস করে দেখুন, কয়েকদিনের মধ্যেই নিশ্চিতভাবেই এর সুফল পাবেন। একটা প্রশ্ন কিন্তু আরও কয়েকটা প্রশ্নের সূতিকাগার। ওই বইগুলো হচ্ছে সকল গাইড বইয়ের বাইবেল। ওখানে যা আছে, সেটাই কারেক্ট। ব্যাপারটা খুব কঠিন কিছু না। বই দুটোর পৃষ্ঠা উল্টে-উল্টে প্রশ্ন সলভ করা প্র্যাকটিস করবেন। প্রথম-প্রথম একটু বিরক্ত লাগবে, আস্তে-আস্তে অভ্যেস হয়ে গেলে সেটা নেশায় পরিণত হবে। আমি ‘আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে’ নীতিতে বিশ্বাসী। আমি নিজে ওই কাজটা করেছি, তাই আপনাদেরকেও করতে বলছি। এই কষ্টটা করতে না পারলে, আপনার জন্য একটাই পরামর্শ: ভুল শিখুন, ভুল করুন, ফেল করুন।
কিছু টিপ্স:
# প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসে বড়জোর ৫-৬টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এর মধ্যে অন্তত ২টা পেপারটেপার পড়ে, টিভিতে সংবাদ শুনে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪টাকে মাফ করে দিলে কী হয়? এই ৪ মার্কসের জন্য অ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি-পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷
# একটা ফ্যাক্ট শেয়ার করি৷ কিছু কঠিন প্রশ্ন থাকে, যেগুলো বারবার পড়লেও মনে থাকে না৷ সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন৷ কারণ এই ধরনের একটি প্রশ্ন আরও কয়েকটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়৷ প্রিলিমিনারি হাইয়েস্ট মার্কস্ পাওয়ার পরীক্ষা নয়, স্রেফ কাট-অফ মার্কস পেয়ে পাস করার পরীক্ষা৷ আপনি ১৯০ পেয়ে প্রিলি পাস করা যে কথা, ১৩০ পেয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা। অপ্রয়োজনীয় মার্কসের বাড়তি শ্রম রিটেনের প্রিপারেশন নেয়ার পেছনে দিন, কাজে লাগবে। কে কী পারে, সেটা নিয়ে কম ভাবুন। আপনি যা পারেন, সেটার চাইতে অন্যরা যা পারে, সেটা শেষ পর্যন্ত বেশি কাজে আসবে, এরকমটা নাও হতে পারে।
এ লেখাটি ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
………………………………………………………………………………………..
৩৬তম বিসিএস প্রিলির আগে যে সময়টা আছে, সেটা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রিলির সাথে মিলে, রিটেনের এমনকিছু পড়াসহ প্রিলির প্রস্তুতি খুব ভালভাবে নেয়া সম্ভব। প্রিলি হচ্ছে রিটেনের পাসপোর্ট। এটাতে পাস করা শুধু নিজের যোগ্যতার উপরেই নির্ভর করে না, সেদিনের ভাগ্যের উপরেও অনেকটুকু নির্ভর করে। প্রিলিতে পাস করাটা যতটা আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, রিটেনে ভাল করাটা ততটাই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। তাই খুব হিসেব করে প্রিলির জন্য প্রস্তুতি নিন। অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের না হয়ে বাসায় অন্তত ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করুন। এটা এক দিনে হবে না। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের পড়াশোনার সময়টা বাড়াতে। প্রতিদিন আগেরদিনের চাইতে অন্তত ১৫ মিনিট হলেও বেশি পড়ুন। একটা বড় পড়া শেষ করার টার্গেট পূরণ করতে পারলে নিজেকে ছোটখাটো কিছু উপহার দিন; যেমন, বই-কেনা, মুভি-দেখা, ঘুরে-আসা, ফেসবুকিং-করা, ফোনে কথা-বলা — এরকমকিছু। এতে পড়ার উৎসাহ আর গতি দুইই বাড়বে। মানুষ তো প্রণোদনায় কাজ করে। একটা পড়া পড়তে-পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য একটা সহজ পড়া হাতে নিন। আপনি যা হতে চান, কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, সেটা হয়ে গেলে আপনার আর আপনার চারপাশের মানুষের কেমন লাগবে, জীবনটা কেমন করে বদলে যাবে। এতে পড়ার ক্লান্তি কেটে যাবে অনেকখানি। মনোযোগ নষ্ট করে, এমন কোনোকিছু হাতের কাছে না রেখে পড়তে বসুন।
অনেক কথা হল। এখন গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা নিয়ে বলছি।
গাণিতিক যুক্তি:
পরীক্ষায় যে ম্যাথস আসে, সেগুলি সহজ, আপনি নিশ্চয়ই পারবেন; কিন্তু হয়তো (গড়ে) ১ মিনিটে পারবেন না। এটার জন্য আগে থেকে প্র্যাকটিস করার সময় শর্টকাটে সলভ করা শিখতে হবে। প্রিলিতে এমন একটাও ম্যাথস আসে না, যেটা শর্টকাটে করা যায় না। পদ্ধতি শিখে নিন, নিজের পদ্ধতি নিজে বানিয়ে নিতে পারলে খুব ভাল হয়, তাহলে আর ওই ধরনের ম্যাথস ভুল হবে না। শর্টকাট পদ্ধতির কোন গ্রামার নাই, আপনার উদ্ভাবিত পদ্ধতিটা আরেক জনেরটার সাথে নাও মিলতে পারে, অংক মিললেই হল। বইয়ের পাতায়-পাতায় প্রশ্নের পাশেই শর্টকাট ফর্মুলা লিখে মান বসিয়ে সলভ করুন। শুধু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আর প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটি ব্যবহার করে আপনি যদি সব ম্যাথস সলভ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তবে আমি বলব, আপনার প্রস্তুতি বেশ ভাল। প্রিলির প্রায় ম্যাথসই ব্যাকট্র্যাকিং মেথডে করা যায়। মানে, অপশনের উত্তরগুলি সূত্রে কিংবা প্রশ্নে বসিয়ে সলভ করা যায়। এছাড়া POE মেথড কাজে লাগাতে পারেন। এটি হল, ৪টি অপশনের মধ্যে যে ২টি উত্তর হওয়ার সম্ভাবনা কম, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি দুটো নিয়ে ভাবা। এই দুটি টেকনিক ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে খুব কম সময়ে ম্যাথস সলভ করতে পারবেন।
ম্যাথসের জন্য অনেকেই বোর্ডের টেক্সট বইগুলি পড়েন। এতে সমস্যা হল, বাড়তি অনেককিছু পড়া হয়ে যাবে, যেগুলি পড়ার আদৌ কোন দরকার নেই। অত সময়ও পাবেন না। তার চাইতে কমপক্ষে দুটো ভাল গাইড বইয়ের কিংবা জব সল্যুশনের একেবারে সব ম্যাথস সলভ করে ফেলতে পারেন। ভাল বই মানে, প্র্যাকটিস করার জন্য অনেকবেশি প্রশ্ন আছে, এমন বই। কোনও চ্যাপ্টার শুরু করলে শেষ না করে টেবিল থেকে উঠবেন না। প্রিলির পড়া পড়তে হয় একটানা, বাসা থেকে বের না হয়ে, টেবিল থেকে না উঠে। এরপর দুটো মডেল টেস্টের বইয়ের সব টেস্ট দিন। আপনি সব ম্যাথসই পারেন, কিন্তু খুব দ্রুত সলভ করতে পারেন না, এভাবে প্রস্তুতি নেয়া আর না-নেয়া একই কথা।
মানসিক দক্ষতা:
এ অংশের প্রশ্নগুলো একটু ট্রিকি হওয়ারই কথা। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে, পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে উত্তর করতে হবে। এ অংশের প্রশ্ন হবে সহজ, এতটাই সহজ যে কঠিনের চাইতেও কঠিন। ৩-৪ সেট গাইড বই কিনুন, সাথে ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই। এগুলি ছাড়াও আগের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সলভ করে ফেলুন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বই, আর গুগলে ইংরেজিতে ‘ভার্বাল/ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/ মেকানিক্যাল রিজনিং/ স্পেস রিলেশনস/ নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/ স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্র্যাকটিস’ কিংবা ‘ভার্বাল/ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/ মেকানিক্যাল রিজনিং/ স্পেস রিলেশনস/ নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/ স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট’ লিখে সার্চ করে বিভিন্ন সাইটে ঢুকে নিয়মিত সলভ করুন। এ অংশে প্রশ্ন ‘কমন’ আসার কথা নয়, তাই ভাল করতে হলে অনেক বেশি প্র্যাকটিস করার কোন বিকল্প নেই। এ অংশে ভাল করার জন্য নলেজের চাইতে কমনসেন্স বেশি কাজে লাগবে।
এ লেখাটি ১৬ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: বাংলা
……………………………………………………….
বিসিএস পরীক্ষার ডিফিকাল্টি লেভেল আমার কাছে কিছুটা ওভাররেটেড বলেই মনে হয়েছে৷ এটা কম্পিটিটিভ এক্জাম, এটা যতটা সত্য, রিয়েল কম্পিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট খুব বেশি সাধারণত থাকেনা, এটা আরও বেশি সত্য৷ বেশিরভাগ মানুষই এই ২টা এক্সাম নিয়ে ভয় দেখাতেই বেশি পছন্দ করেন। যা জানেন, তা বলেন; যা জানেন না, তাও বলেন। ২টা ফ্যাক্ট শেয়ার করি।
• এই এক্সামে ৫০% ক্যান্ডিডেট যায় জাস্ট ঘুরতে, কোনও কারণ ছাড়াই, অনেকটা গেট-টুগেদার করতে। (মজার ব্যাপার হল , এদের কেউকেউ সফলও হয়ে যায়! ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ টাইপের আরকি! ওদের সাফল্যে কষ্ট পেয়ে লাভ নাই।)
• রিয়েল কম্পিটিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট থাকে মাত্র ৭% এর মতো।
এর মানে, আপনার কম্পিটিটর আপনি যতটা ভাবছেন, তত বেশি না। বিসিএস পরীক্ষার কোনও সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই, তাই এই পরীক্ষায় ১০০% প্রস্তুতি নেয়া কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। মাথায় রাখুন, শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷ এই পরীক্ষায় ভাল করার জন্যে কী কী পড়বেন, সেটা জানার চাইতে অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা।
বাংলার জন্য আগের বিসিএস’য়ের আর জব সল্যুশনের ভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্নগুলি সব জোর দিয়ে পড়ে ফেলুন। ওখান থেকে অত কমন হয়তো পাবেন না, কিন্তু একটা ধারণা পাবেন, কোন ধরনের প্রশ্ন আপনি বাদ দিয়ে পড়বেন। যেকোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের প্যাটার্ন ম্যাপিং বোঝাটা খুব খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা।
কোথা থেকে পড়বেন?: আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ ৯ম-১০ম শ্রেণীর ব্যাকরণ বই+ হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা+ গাইড বই
কীভাবে পড়বেন?: সিলেবাসটা ভাল করে দেখে নিন। কোন-কোন টপিক আছে, একটা কাগজে লিখে ফেলুন। এরপর টপিক ধরে ধরে ব্যাকরণ বই আর গাইড বইয়ের সেই অধ্যায়গুলি ভালভাবে দাগিয়ে দাগিয়ে বারবার পড়ুন। যে প্রশ্নগুলি বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেগুলি মনে রাখার চিন্তা বাদ দিন। একটা কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, একটা সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর। ৫ নম্বরের কঠিন প্রশ্নের পেছনে সময় দেয়ার চাইতে বরং ২০ নম্বরের সহজ প্রশ্নের পেছনে সে একই সময়টা দেয়া ভাল। আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে বুঝেশুনে পড়ুন।
সাহিত্য।
কোথা থেকে পড়বেন?: আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ সৌমিত্র শেখরের জিজ্ঞাসা+ হুমায়ূন আজাদের লাল নীল দীপাবলি+ মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস+ গাইড বই
কীভাবে পড়বেন?: আগের বিসিএস’য়ের প্রিলি আর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন স্টাডি করে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, কোন ধরনের প্রশ্ন আসে না, সে সম্পর্কে ভাল ধারণা নিন। এরপর রেফারেন্স বই দাগিয়ে-দাগিয়ে বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে পড়বেন। রেফারেন্স বইয়ের সবটুকু কাজে লাগে না, তাই সবটুকু পড়ার লোভ সামলানো শিখুন। খুবই ভাল হয় যদি সাহিত্য অংশটি পড়ার সময় লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ নিয়ে ফেলা যায়, কারণ এর জন্য বাড়তি কোনও কষ্ট করতে হবে না আপনাকে। মুখস্থ করার চেষ্টা করার চাইতে বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করা ভাল। পরীক্ষার হলে কিছু প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই পারবেন না, এটা মাথায় রেখে সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিলে মনমেজাজ খারাপ হবে কম।
বিসিএস প্রিলি নিয়ে কিছু টিপস:
• ১০ম থেকে ৩৫তম বিসিএস, ২-৩টা জব সল্যুশন কিনে পিএসসি’র নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলো (সম্ভব হলে, অন্ততঃ ২৫০-৩০০ সেট) বুঝে-বুঝে solve করে ফেলুন। দাগিয়ে-দাগিয়ে রিভিশন দেবেন অন্তত ২-৩ বার। Read the mind of the question setter, not the mind of the guidebook writer. পেপার, ইন্টারনেট আর রেফারেন্স বই ভালভাবে দেখতে হবে।
• দুই সেট রিটেনের গাইড বই কিনে আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর সাজেশন পড়ে ফেলুন। যে টপিকগুলো প্রিলির সাথে মিলে, সেগুলো সিলেবাস ধরে পড়ে শেষ করে ফেলুন। এতে করে আপনার রিটেনের অর্ধেক পড়া হয়ে যাবে। রেফারেন্স পড়ার সময় আদৌ বইটি পড়ার দরকার আছে কিনা, সেটা বুঝে পড়ুন। রিটেনের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি পড়া প্রিলির সাথে মিলে যায়।
• বেশিরভাগ স্টুডেন্টই প্রথমে রেফারেন্স বই পড়ে, পরে প্রশ্ন সলভ করা শুরু করে। এখানে ২টা সমস্যা আছে। এক। বেশি-বেশি প্রশ্ন সলভ করার সময় পাওয়া যায় না। যত বেশি প্রশ্ন সলভ করবেন, ততই লাভ। দুই। রেফারেন্স বইগুলোর বেশিরভাগ অংশই বিসিএস পরীক্ষার জন্যে কাজে লাগে না, অথচ পুরো বই পড়তে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং বিসিএস নিয়ে অহেতুক ভীতি তৈরি হয়। তাছাড়া অতকিছু মনে রাখার দরকারও নেই। …….. তাই, উল্টো পথে হাঁটুন। আমিও তা-ই করেছিলাম। একটা প্রশ্নকে আরও ৩টি প্রশ্নের সূতিকাগার বানান। রেফারেন্স বই উল্টাতে কষ্ট হয়, এটা ঠিক। কিন্তু কষ্ট করে এই কষ্টটা করতে পারলে আপনার প্রিলি আর রিটেন দুটোতেই লাভ হবে, এটা আরও বেশি ঠিক।
• প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসে বড়জোর ৫-৬টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এরমধ্যে অন্তত ২টা পেপারটেপার পড়ে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪টাকে মাফ করে দিলে কী হয়?! এই ৪ মার্কসের এ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি-পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷
এ লেখাটি ২ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতার প্রধান ফিচার হিসেবে ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী / সাধারণ জ্ঞান
…………………………………………………………………………………………………………………
বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী কিংবা সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, অন্তত ২টা জব সল্যুশন, পেপার, ইন্টারনেট, অন্তত ৩-৪টা গাইড বই আর কিছু রেফারেন্স বইয়ের দরকার হবে। কিছু টিপস দিচ্ছি। এগুলো পড়ে নিজের মত করে কাজে লাগাবেন।
# প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসবে বড়জোর ৭-৮টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এরমধ্যে অন্তত ২-৩টা পেপারটেপার পড়ে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪-৫টাকে মাফ করে দিলে কী হয়?! এই ৪-৫ মার্কসের জন্য অ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷
# গাইড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্স বই, যেমন মোজাম্মেল হকের উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ২য় পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের উপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা: ’৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটোদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলী খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত বই দুটো ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন। বিসিএস পরীক্ষার জন্য যে কোনও বিষয়ের রেফারেন্স পড়ার একটা ভাল টেকনিক হচ্ছে, জ্ঞান অর্জনের জন্য না পড়ে, মার্কস্ অর্জনের জন্য পড়া৷ এটা করার জন্য প্রচুর প্রশ্ন স্টাডি করে খুব ভালভাবে জেনে নেবেন, কোন-কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে না। প্রশ্নগুলো ভালভাবে দেখে, এরপর রেফারেন্স বই ‘বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে’ পড়ুন৷ এতে অল্প সময়ে বেশি পড়তে পারবেন।
# ৪ ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চাইতে ১ ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। তাহলে ৪ ঘণ্টার পড়া ২ ঘণ্টায় পড়া সম্ভব। বেশি-বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কীভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটা শিখতে পারবেন। এটা প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। এর জন্যে যথেষ্ট সময় দিন। অন্যরা যা যা পড়ছে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে—এই ধারণা ঝেড়ে ফেলুন। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। একটি অপ্রয়োজনীয় টপিক একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো বারবার পড়ুন৷
# অনলাইনে ৪-৫টা পেপার পড়বেন। পেপার পড়ার সময় খুব দ্রুত পড়বেন। পুরো পেপার না পড়ে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টপিকের আর্টিকেলগুলোই শুধু পড়বেন। একটা পেপারে এ ধরনের দরকারি লেখা থাকে খুব বেশি হলে ২-৩টা। প্রয়োজনে সেগুলোকে ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করে রাখুন, পরে পড়ে ফেলুন।
# সাল-তারিখ মনে থাকে না? থাকতেই হবে কেন? কারোরই থাকে না। এটা বারবার পড়তে হয়। অনেক-অনেক সেট প্রশ্ন পড়ার সময় ওরকম সাল-তারিখ বারবার আসবে। বিভিন্ন তথ্য মনে না থাকলে বারবার রিভিশন দিন। মুখস্থ না করে প্রশ্নের একটা ছবি মনে গেঁথে নিন। ফেসবুকে সাম্প্রতিক নানান তথ্যসম্বলিত পোস্টগুলি বেশি-বেশি পড়ুন।
# আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর কিছু-কিছু প্রশ্ন সময়ের সাথে-সাথে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। সেগুলো বাদ দিন। সবচাইতে ভাল হয় যদি বিভিন্ন টপিক ধরে-ধরে গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। গুগলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন।
# বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটা নিয়মিত দেখবেন। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানান আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদরদপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন।
# ম্যাপ মুখস্থ করতে বসবেন না যেন! ওটা করতে যে সময়টা নষ্ট হবে, ওই সময়ে পড়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। ছড়া-গান-কবিতা সহ অদ্ভুত সব জিনিস দিয়ে অদ্ভুত সব জিনিস মুখস্থ করার তেমন কোনও প্রয়োজন আমি এখনও পর্যন্ত দেখিনি। এটা স্রেফ সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না। ব্যাপারটা এমনভাবে সময় নষ্ট করা, যেটা পরীক্ষা দেয়ার আগ পর্যন্ত সময় নষ্ট করা বলে বোঝাই যায় না।
# চমকপ্রদ প্রশ্ন দেখে দেখে চমকে যাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করুন। গ্রুপ স্টাডির একটা বাজে দিক হচ্ছে, যে যা-ই বলে, সেটাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। এই যেমন, “সংবিধান মুখস্থ করতে না পারলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যাবে না।” এরকম কিছু ভুল কথাকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। পাবলিক লাইব্রেরিতে কিংবা এর সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও কোনও কাজ হবে না, যদি নিজে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করে পড়াশোনা না করেন।
# একটা জিনিস মনে রাখতে না পারলে আবারও পড়ুন। এরপরেও মনে রাখতে না পারলে আরও একবার পড়ুন। যদি এরপরেও মনে না থাকে, তবে সেটা মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন। একটা কঠিন প্রশ্ন মনে রাখার চেষ্টা পাঁচটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়। কী লাভ? কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।
অংক-ইংরেজি ভাল জানলে অংক-ইংরেজিতে ভাল মার্কস পাওয়া যাবেই, এটা বলা যায়। কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে খুব দক্ষ হলেই যে সাধারণ জ্ঞানে ভাল মার্কস পাওয়া যাবে, এমনটা নাও হতে পারে। তাই সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পড়ুন। সাধারণ জ্ঞানে অতি-পরিশ্রম নয়, হিসেবি-পরিশ্রম করুন। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, সাধারণ জ্ঞানে আপনার চাইতে অনেক ভাল জানেন, এমন কারোর সাথে যত কম আলোচনা করবেন, আপনার প্রস্তুতি ততই ভাল হবে। সাধারণ জ্ঞান এমন একটা বিষয়, যেটাতে আপনার জানার পরিধি একেবারে জিরো লেভেলে থাকলেও আপনি সেটাকে পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় লেভেলে উন্নীত করতে পারবেন। ২-৩ সেট মডেল টেস্টের গাইড থেকে প্রতিদিনই অন্তত ২-৩টা টেস্ট দিয়ে দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন।
সবকথার শেষকথা: বিসিএস মানেই সাধারণ জ্ঞান — এই ভুল আপ্তবাক্যটি মাথায় না রেখে সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি নিন।
এ লেখাটি গত ৭ অক্টোবর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল।
লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
………………………………………………………………………………………………………………………………….
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশের জন্য অন্তত ৩-৪টা গাইড বই এবং ৯ম-১০ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেন। ৩৫তম বিসিএস প্রিলির প্রশ্ন দেখলে খেয়াল করবেন, বেশিরভাগ প্রশ্নই এসেছে ৯ম-১০ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বই থেকে। ওটা দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ুন।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশটি ৩-৪টা গাইড বই থেকে পড়ুন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘নাগরিকদের জানা ভালো’ বইটিও দেখতে পারেন। এ অংশের উত্তর করার জন্য সবচাইতে বেশি দরকার কমনসেন্স। একেকভাবে ভাবলে একেকরকম আনসার হয়, এমন প্রশ্ন এ অংশে কিছু আসার কথা। পিএসসি ইচ্ছে করেই এই গেমটা খেলে যাতে কেউ সেগুলো আনসার না করে সেজন্য। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস।
উপরের দুই অংশের বেশকিছু প্রশ্ন ইন্টারনেটে পেয়ে যাবেন। গুগলে বিষয়ের নাম লিখে সার্চ করে সেগুলিও পড়ে নিতে পারেন।
এখন বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি নিয়ে মোটা দাগে কিছু কথা বলছি:
1. একটা ফ্যাক্ট শেয়ার করি৷ কিছু কঠিন প্রশ্ন থাকে যেগুলো বারবার পড়লেও মনে থাকে না৷ সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন৷ কারণ এই ধরনের একটি প্রশ্ন আরও কয়েকটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়৷ প্রিলিমিনারি হাইয়েস্ট মার্কস্ পাওয়ার পরীক্ষা নয়, স্রেফ কাট-অফ মার্কস পেয়ে পাস করার পরীক্ষা৷ আপনি ১৯০ পেয়ে প্রিলি পাস করা যে কথা ৯০ পেয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা। অপ্রয়োজনীয় মার্কসের বাড়তি শ্রম রিটেনের প্রিপারেশন নেয়ার পেছনে দিন, কাজে লাগবে। মনে রাখবেন, কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।
2. কে কী পারে, সেটা নিয়ে কম ভাবুন। আপনি যা পারেন সেটার চাইতে অন্যরা যা পারে, সেটা শেষ পর্যন্ত বেশি কাজে লাগবে, এরকমটা নাও হতে পারে। যারা বেশি পারে, ওদের সাথে কম মিশুন। যারা কোনও একটা বিষয়ে অনেকবেশি ভাল, তাদের সাথে কখনওই কম্পিটিশনে যাবেন না। কম্পিটিশন হোক নিজের সাথেই। সবসময়ই এই চ্যালেঞ্জটা নিন, গতকালকের ‘আপনি’র চাইতে আজকের ‘আপনি’ এগিয়ে আছেন কিনা।
3. প্রিপারেশন নিচ্ছি-নিচ্ছি—নিজেকে এবং অন্য সবাইকে এটা বোঝানোর চাইতে সত্যি-সত্যি প্রিপারেশন নেয়া ভালো। ‘প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব।’—কম্পিটিটিভ এক্সামের প্রিপারেশন নেয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়। অনেক পরিশ্রম করে ফেল করার চাইতে, বুঝেশুনে পরিশ্রম করে পাস করা ভালো। আপনাকে প্রত্যেকটা সেগমেন্টে খুব ভাল কিংবা মোটামুটি ভাল করতে হবে। কাজেই প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপনি যা পারেন, শুধু সেটার উপরেই পুরো এফর্ট দেয়া যাবে না। আমার টেকনিক হল, আমি যা পারি সেটার বেশিবেশি যত্ন নিই, যাতে অন্যদের চাইতে অনেকবেশি সুবিধা আমি সেটাতে নিতে পারি। তবে তার আগে দেখে নিই, যেটা বেশি পারি, সেটা আদৌ সুবিধা নেয়ার মতো কিছু কিনা। ধরুন, ক্লিনটনের ওয়াইফের বান্ধবীর পোষা কুকুরের নামও আপনার মুখস্থ, কিন্তু আমার নানার একটা কালো কুকুর ছিল’কে ইংলিশে লিখেন, My grandfather was a black dog……… কোনও কাজ হবে না।
4. যারা প্রথমবার বিসিএস দিচ্ছেন, তাদেরকে বলছি। প্রথমবারের কাজ ভাল হয় না? কে বলল একথা? আমি প্রথমবারে ক্যাডার হয়েছি। এরকম আরও অসংখ্য নজির আছে। পথের পাঁচালি (বিভূতি ও সত্যজিৎ), নাগরিক, The 400 Blows কিংবা Wuthering Heights, The Catcher in the Rye, To Kill a Mockingbird, The Kite Runner-এ অমর সৃষ্টিগুলি স্রষ্টার প্রথমবারেরই সৃষ্টি। বিসিএস পরীক্ষার মতো বিরক্তিকর পরীক্ষা আরেকবার দিতে হবে, এটা ভাবতে ভয় লাগে না? শুধু এইজন্যেই তো পড়াশোনা করা যায়। সবার মতো আপনাকেও বারবার বিসিএস দিতে হবে কেনো? তবে এখানে luck favour করা না-করার কিছু ব্যাপারও ঘটে। যারা ক্যাডার হয়, তারা একই সাথে যোগ্য ও সৌভাগ্যবান।
5. অনেকেই বলবে, আমার তো অমুক-অমুক প্রশ্ন পড়া শেষ! ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিন৷ আপনার আগে কেউ কাজ শেষ করলেই যে শেষ হাসিটা উনিই হাসবেন—এমন তো কোন কথা নেই৷ আর কেউ আপনার চাইতে বেশি পড়াশোনা করলে সেটা তো আর আপনার দোষ না। আমি বিসিএস পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি শুরু করতে গিয়ে দেখলাম, অনেকের অনেককিছু পড়া শেষ। 3 Idiots তো দেখেছেন। বন্ধুর খারাপ রেজাল্টে যতটা মন খারাপ হয়, বন্ধুর ভাল রেজাল্টে তার চেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হয়। যখন দেখলাম, আমি অন্যদের তুলনায় বলতে গেলে কিছুই পারি না, তখন আমি ২টা কাজ করলাম। এক। বোঝার চেষ্টা করলাম, ওরা যা পারে, সেটা পারাটা আদৌ দরকার কিনা? দুই। ওদের সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করা বন্ধ করে গতকালকের আমি’র সাথে আজকের আমি’কে কম্পেয়ার করা শুরু করলাম।
6. গ্রুপ স্টাডি করা কতটুকু দরকার? এটা আপনার অভ্যেসের উপর নির্ভর করে। আমার নিজের এই অভ্যেস ছিলো না। আমি গ্রুপ স্টাডি করতাম না ২টা কারণে। এক। যখন দেখতাম, সবাই অনেককিছু পারে, যেগুলোর কিছুই আমি পারি না, তখন মনমেজাজ খারাপ হতো। আমি পারি না, এটা ভাবতে ভাল লাগে না। The Pursuit of Happyness এর ডায়লগটা মনে আছে তো? আপনি পারেন না, সবার কাছ থেকে এটা শুনে, বুঝে আপনার কী লাভ? সবাই এটা বললে তো আর আপনি বেশি পারতে শুরু করবেন না, বরং আপনার বেশি পারার ইচ্ছেটা কমে যেতে পারে। দুই। সবার সাথে পড়লে বেশি বেশি গল্প করতে ইচ্ছে করতো, আর মনে হতো, ওরা যেটা করছে সেটা ঠিক, আমার নিজেরটা ভুল। অন্ধ অনুকরণ করতে ভাল লাগে না।
7. আপনি কী জানেন, তার চেয়ে বেশি ইমপর্টেন্ট হল আপনি যা জানেন তা কতটা কাজে লাগাতে পারছেন, সেটা৷ যারা অনেক জানেন, তারা বেশিরভাগ সময়েই যারা অনেক জানেন না, তাদেরকে সহজ টার্গেট ভেবে আনডারএস্টিমেট করেন৷ ভাবনার এই স্বাচ্ছন্দ্যই ওদের ক্রমশ দুর্বল আর ভালনারেবল্ করে দেয়। এটাকে কাজে লাগাতে পারলেই মজা৷ অতিপণ্ডিতদের ফেল করতে দেখার মজাই আলাদা! নিজে পাস করলেও এত মজা লাগে না৷
8. মাঝে-মাঝে পড়তে ইচ্ছে করবে না, স্বাভাবিক। আমারও করত না৷ সারাক্ষণ পড়তে ইচ্ছে করাটা মানসিক সুস্থতার লক্ষণ না৷ Why so serious? Job for Life, not Life for Job. বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে, এমন তো নয়! আপনার রিজিক আগে থেকেই ঠিক করা আছে। কত কিছুই তো করার আছে! তাই, ব্রেক নিন, পড়াকে ছুটি দিন৷ মাঝেমধ্যেই৷ রুমের দরোজাজানালা বন্ধ করে ফুল ভলিয়্যুমে মিউজিক ছেড়ে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে নাচুন! ইচ্ছেমতো গলা ফাটান! কী আছে আর জীবনে! দুদিন পড়া হল না বলে মন খারাপ করে আরও দুদিন নষ্ট করার তো কোনও মানে হয়না৷ ভুল না করে শিখেছে কে কোথায় কবে? অনুশোচনা করার সময় কোথায়? আপনি তো আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভুলটি করে বসেননি! আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটিও নন!
9. গাইড বইয়ের প্রশ্নগুলি যত বেশি সম্ভব, সলভ করে ফেলুন। যত বেশি প্রশ্ন সলভ করবেন, প্রস্তুতি ততই ভাল হবে। মডেল টেস্টের ৩-৪ বই কিনে প্রতিদিন অন্তত ২-৩টি মডেল টেস্ট দিন। ভাল কথা, মডেল টেস্টগুলোতে একটু কম marks পেলেও মন খারাপ করার দরকার নেই৷ আপনি কী জানেন, তার চেয়ে বেশি important হল, আপনি যা জানেন তা কতটা কাজে লাগাতে পারছেন৷ ভাল প্রস্তুতি নেয়ার চাইতে ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
10. কোচিংয়ে কিংবা এদিকওদিক দৌড়াদৌড়ি না করে বাসায় বসে অনেক সময় দিয়ে পড়াশোনা করুন। দিনে অন্তত ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করুন। সকল ঘুম, বিশ্রাম আর ঘোরাঘুরি হবে চাকরি পাওয়ার পর।
11. সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাবেন না ভুলেও৷ প্রিলিমিনারী highest marks পাওয়ার পরীক্ষা নয়, just পাস করার পরীক্ষা৷ কিছু difficult & confusing questions ছেড়ে দেওয়ার উদারতা দেখান, কিপ্টেমিটুকু আপাততঃ জমিয়ে রাখুন written exam এর জন্য৷
12. ব্লাইন্ড গ্যেসিং করে করে সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাবেন না ভুলেও, তবে কিছুটা ইন্টেলেকচুয়াল গ্যেসিং করলে কোনও দোষ নেই৷ ৬টা প্রশ্ন ছেড়ে জিরো পাওয়ার চাইতে ৩টা কারেক্ট করে ১.৫ পাওয়া অনেক ভালো৷ ভুল করুন বুদ্ধি খাটিয়ে৷ সফলভাবে ব্যর্থ হওয়াটাও কিন্তু মস্ত বড়ো একটা আর্ট৷
13. Competitive exam গুলোতে ভাল করার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির চাইতে আত্মবিশ্বাস বেশি কাজে লাগে৷ I’m the best এই ভাবটা exam hall এ ধরে রাখুন৷ এটা magic এর মতো কাজ করে! একটি প্রশ্নের উত্তর নিজে ভুল করলে যতটা না মেজাজ খারাপ হয়, তার চাইতে অনেক বেশি মেজাজ খারাপ হয় কারো কাছ থেকে শুনে ভুল করলে৷ (তখন মনে হয়, ইসস্ এটা তো আমি নিজে নিজে পারতাম!)
14. প্রশ্নে দু’-একটা ছোট-খাট ভুল থাকতেই পারে৷ এটা নিয়ে মাথা খারাপ করার কিছু নেই৷ সমস্যা হলে তো সবারই হবে, আপনার একার নয়! Nervousness দূর করার চেষ্টা করুন, কারণ ওতে প্রশ্নগুলো তো আর সহজ হবে না, বরং সহজ প্রশ্ন ভুল answer করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে৷ মনে রাখুন, Que sera, sera.
15. এই সময়টাতে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পড়া শেয়ার করা কমিয়ে দিন৷ বন্ধুদের preparation ভাল না শুনলে মন খারাপ হয়, আর preparation আপনার চেয়েও ভালো, এটা শুনলে কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়! কেউ আপনার চাইতে ভাল student হওয়া মানেই এই নয় যে, উনি প্রিলিমিনারী পাস করবেন, আপনি করবেন না৷ শেষ হাসিটা হাসার চেষ্টা করুন৷
সবার প্রস্তুতি ভাল হোক। গুড লাক!!
এ লেখাটি গত ২১ অক্টোবর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
……………………………………………………………………………………………..
প্রিলি হল স্রেফ পাস করার পরীক্ষা, জাস্ট রিটেন দেয়ার পাসপোর্ট। এর কাছে ওর কাছে শুনে অন্ধের মতো না পড়ে একটু বুঝেশুনে প্রিপারেশন নিলে প্রিলিতে ফেল করা সত্যিই কঠিন। এক্ষেত্রে সবকিছু পড়ে বেশি খুশি হওয়ার অভ্যেস বাদ দিতে হবে। কী কী পড়বেন, সেটা ঠিক করার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা। যা কিছুই পড়ুন না কেন, আগে ঠিক করে নিন, সেটা পড়া আদৌ দরকার কিনা। চাকরিটা পেয়ে গেলে জ্ঞানী হওয়ার জন্য অন্তত ৩০ বছর সময় পাবেন; এতটাই জ্ঞানী, জ্ঞান রাখারই জায়গা পাবেন না। জ্ঞান অর্জন করলে জ্ঞানী হবেন আর মার্কস অর্জন করলে ক্যাডার হবেন, এটা মাথায় রাখুন। সিভিল সার্ভিস নিয়ে আপনার যে প্রচণ্ড ইচ্ছে আর আবেগ, সেটার সাথে একটু বুদ্ধিশুদ্ধি যোগ করলেই হয়ে যাবে, যেটাকে আমরা বলি, ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স। পড়াশোনা দুইভাবে করা যায়: এদিকওদিক ঘোরাঘুরি করে আর বাসায় বসে। তবে আমি মনে করি, পড়াশোনার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিজের কাছে। বইপত্র, গাইডটাইড কিনে বাসায় বেশি বেশি সময় দিন। আপনি পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেন, খুশি হয়ে গেলেন অনেককিছু পড়ে ফেললেন ভেবে, কিন্তু যা যা দরকার তা তা পড়লেন না, এর চাইতে বাসায় ৬ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়ে বাকি সময়টা ঘোরাঘুরি করা কিংবা স্রেফ ঘুমানোও অনেক ভালো। মনমেজাজও ভাল থাকবে। বাইরে যতই ঘুরবেন, ততই আপনার চাইতে বেশি পণ্ডিত লোকজনের সাথে দেখা হবে, আর মেজাজ খারাপ হবে। আপনার মেজাজ খারাপ করে দেয়া লোকজন সবাই যে প্রিলি পাস করবেন, তা কিন্তু কিছুতেই না! আমি মনে করি, সাকসেস ইজ অ্যা সেলফিশ গেম! ‘টুগেদার উই বিল্ড আওয়ার ড্রিমস’ এটা ভুলে যান। লাইফটা তো আর ডেসটিনি কোম্পানি না।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। বিজ্ঞানের ছাত্ররা এ অংশটিতে অবহেলা করলে এ অংশে মার্কস কম পাবেন। বিশ্বাস না হলে করেই দেখুন! এ অংশটির প্রশ্নগুলি এমনভাবে করা হয়, যাতে করে যেকোনও ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্যান্ডিডেটই একই সুবিধা কিংবা অসুবিধা ভোগ করেন। এ অংশের জন্য দুটো ভাল প্রকাশনীর অনেকবেশি প্রশ্ন দেয়া আছে, এমন গাইড বইয়ের সব প্রশ্নের উত্তর শিখে ফেলুন। একটা বুদ্ধি দিই। দুটো গাইডের আলোচনা অংশ পড়ার চাইতে তৃতীয় একটা গাইডের প্রশ্নগুলি পড়ে ফেলা ভাল; এতে নতুন কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে যাবেন। সাথে একটা জব সল্যুশনের প্রশ্নগুলিও পড়ে ফেলুন। প্রিলির জন্য যত বেশি প্রশ্ন পড়বেন, ততই লাভ। সিলেবাস দেখে টপিক ধরে-ধরে কোন কোনটা দরকার, শুধু ওইটুকুই পড়বেন। গাইডেও অনেককিছু দেয়া থাকে যেগুলোর কোন দরকারই নেই। দুইটা লিখিত পরীক্ষার গাইড বই থেকে শুধু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও টীকাগুলি পড়ে ফেলুন; খুবই কাজে লাগবে। পেপার আর ইন্টারনেট থেকে প্রযুক্তি নিয়ে কিছু পড়াশোনা করে নিতে পারেন।
প্রিলির জন্য হিসেব করে পড়ুন। আপনি আম খাওয়ার আগে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জেনেও আম খেতে পারেন। কোনও সমস্যা নাই। তবে আমি মনে করি, আগে আম খেয়ে নিয়ে পরে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জেনে নেয়াটা ভালো। যদি আমের চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নিতে গিয়ে আম খাওয়াটাই না হয়, তাহলে তো বিপদ! যা যা পড়া দরকার, সেগুলো পড়ে শেষ করতেই বারোটা বাজে, আজাইরা ফালতু জিনিসপত্র পড়ার টাইম কোথায়? প্রতিদিনের পড়ার মোট সময়ের এক-তৃতীয়াংশ সময় রিটেনের জন্যে দেবেন। তবে, রিটেনের সব পড়া না পড়ে ২ ধরনের পড়া এইসময়ে রেডি করে রাখতে পারেন। এক। যে যে অংশগুলো প্রিলির সিলেবাসের সাথে মিলে, সেগুলো পড়ে ফেলুন। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস্, ব্যাকরণ সহ আরওকিছু অংশ পড়ে ফেলতে পারেন। দুই। যেসব সেগমেন্টে ক্যান্ডিডেটরা সাধারণতঃ কম মার্কস্ পায় কিন্তু বেশি মার্কস্ তোলা সম্ভব, সেগুলো নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে ওই সেগমেন্টগুলোতে ভালভাবে প্রস্তুত করে কম্পিটিশনে আসার চেষ্টা করুন৷ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস্, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালভাবে পড়ুন৷ এই সময়ে বড় প্রশ্ন পড়ার কোনও দরকার নেই।
এ লেখাটি ৩০ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:
৩৬তম বিসিএস প্রিলির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে
………………………………………………………………………….
আর ঠিক ১৩ দিন পরই প্রিলি; পরীক্ষার আগে একটু টেনশন করাটা একটা সাধারণ ভদ্রতা, আর ওটা করতেও তো ৩ দিন লাগে, সে হিসেবে প্রিলির বাকি আর ১০ দিন।
এই ১০ দিনে কী কী করা যায়?
এক। আবেগ কমান, সাধারণ জ্ঞান পড়া কমান। বিসিএস সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
দুই। আগে কী পড়েছেন, কিংবা পড়েননি, সেটা ভুলে যান। বেশি পড়লেই যেমন প্রিলি পাস করা যাবেই, এমনকিছু নেই; তেমনি কম পড়লেই যে প্রিলি ফেল করবেনই, তেমনকিছু নেই।
তিন। সামনের ১০ দিনে গুনে-গুনে অন্তত ১৬০ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়াশোনা করবেন, এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। এটা করতে পারলে আগে কোনও কিছু না পড়লেও প্রিলি পাস করে যাবেন।
চার। ১০ দিনে বাসায় ৫০ সেট মডেল টেস্ট দেবেন।
পাঁচ। ভাল ১টা প্রিলি ডাইজেস্ট আর বিভিন্ন প্রিলি স্পেশাল সংখ্যা সলভ করুন। প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর ২টা জব সল্যুশন রিভিশন দিন।
ছয়। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না। এই ১০ দিন মোবাইল ফোন, টিভি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসআপ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকলে আপনার জীবনযৌবন বৃথা হয়ে যাবে না।
সাত। কিছু-কিছু গাধামি থেকে সরে আসুন। সংবিধান, রাজধানী ও মুদ্রা, শাখানদী ও উপনদী, প্রকৃতি ও প্রত্যয় সহ কিছু ঝামেলামার্কা টপিক আছে যেগুলি মনে রাখতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অথচ মার্কস পাওয়া যায় ১-২। কী দরকার? সময়টা অন্য দিকে দিন, বেশি মার্কস আসবে।
আট। সকল ধরনের রেফারেন্স বই থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। অত সময় নেই।
নয়। বেশি-বেশি প্রশ্ন পড়ুন, আলোচনা অংশটা কম পড়বেন।
দশ। এই ১০ দিনে পেপার পড়ার আর খবর শোনার কোন দরকার নাই।
এগারো। মানসিক দক্ষতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন এই দুইটি বিষয়ের কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করবেন না। কমনসেন্স থেকে অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন।
বার। যা কিছু বারবার পড়লেও মনে থাকে না, তা কিছু পড়ার দরকার নাই।
তেরো। কে কী পড়ছে, সে খবর নেয়ার দরকার নাই। যাদের প্রস্তুতি অনেক ভাল, তাদের সাথে এই ১০ দিনে প্রিলি নিয়ে কোন কথা বলবেন না।
চৌদ্দ। বিজ্ঞানটা শুধু প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর জব সল্যুশন থেকে পড়ুন।
পনেরো। পাটিগণিত বাদে গাণিতিক যুক্তির বাকিগুলি প্র্যাকটিস করুন।
ষোল। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের জন্য শুধু সরকারী চাকরির প্রশ্নগুলি পড়ুন।
সতেরো। বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ আগে যা পড়েছেন, শুধু সেইটুকুই আরও একবার পড়ে নিন।
আঠারো। ডিসেম্বর বাদে গত ৫ মাসের সাধারণ জ্ঞানের তথ্যগুলি কোন একটি গাইড/বই থেকে এক নজর দেখে নিন।
উনিশ। ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যমিকের সামাজিক বিজ্ঞান বইটি থেকে দেখতে পারেন।
বিশ। যে প্রশ্নগুলির উত্তর অনেকদিন ধরেই পাচ্ছেন না, সেগুলি নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দিন।
এখন ৭ তারিখ বিকেল থেকে শুরু করে ৮ তারিখ পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়া পর্যন্ত কী কী করতে পারেন, বলছি।
এক। থ্রি ইডিয়টস্ টাইপের কোন একটা মুভি দেখুন। কিছু সফট ইন্সট্রুমেন্টাল কিংবা রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পারেন।
দুই। পুরোপুরিই মোবাইল ফোন আর ফেসবুক মুক্ত সময় কাটান।
তিন। পরেরদিনের জন্য পরীক্ষার হলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখুন।
চার। রাতে হাল্কা খাবার খেয়ে ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুম না এলে স্নায়ু শিথিল করার মেডিসিন খেয়ে ঘুমাতে পারেন। প্রিলির আগের রাতে ভাল ঘুম না হলে যতই প্রস্তুতি থাক না কেন, পরীক্ষা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
পাঁচ। পরীক্ষার দিন সকালে উঠে ১৫ মিনিট প্রার্থনা করুন। এরপর ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাস্তা করে হাতে ‘সময় নিয়ে’ (কোনোভাবেই ‘বইপত্র নিয়ে’ নয়) হলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। বের হওয়ার আগে আরও একবার দেখে নিন, প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়েছেন কিনা।
ছয়। পরীক্ষার হলে যে ভাবনাটা সবচাইতে বেশি ম্যাজিকের মতো কাজ করে, সেটি হল ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট’ ভাবনা। আপনার চাইতে ভাল পরীক্ষা কেউই দিচ্ছে না, এটা বিশ্বাস করে পরীক্ষা দিন।
সাত। উত্তরপত্রে সেট কোড সহ অন্যান্য তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করুন। এটা ভুল হলে সব শেষ।
আট। আপনি যে অংশটি সবচাইতে ভাল পারেন, সেটি আগে উত্তর করা শুরু করবেন। তবে এক্ষেত্রে কত নম্বর প্রশ্নের উত্তর করছেন আর কত নম্বর বৃত্তটি ভরাট করছেন, সেটি খুব ভালভাবে মিলিয়ে নেবেন।
নয়। সব প্রশ্নই উত্তর করার জন্য নয়। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস।
দশ। বুদ্ধিশুদ্ধি করে কিছু প্রশ্ন ছেড়ে না এসে উত্তর করতে হয়। এরকম ৬টা প্রশ্ন ছেড়ে শূন্য পাওয়ার চাইতে অর্ধেক ঠিক করে ১.৫ পাওয়া ভাল।
এগারো। সাধারণত যেকোনও বিষয় নিয়ে ২য় ভাববার সময় আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। প্রথম দেখায় যে প্রশ্নগুলির উত্তর পারেন না মনে হবে, সেগুলি মার্ক করে পরেরটায় চলে যাবেন। সময় নষ্ট করার সময় নেই।
বার। প্রশ্ন ভুল কী ঠিক, সেটা নিয়ে মাথাখারাপ করবেন না।
তেরো। বৃত্ত ভরাট করতে করতে ক্লান্ত? একটু ব্রেক নিন। চাকরিটা পেয়ে গেলে আপনার জীবনটা কীভাবে বদলে যাবে, কাছের মানুষগুলির হাসিখুশি মুখগুলি একবার কল্পনায় আনুন; ক্লান্তি কেটে যাবে।
চৌদ্দ। কয়টা দাগালে পাস, এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি যেগুলি পারেন, সেগুলির উত্তর করবেন। এরপর যেগুলি একেবারেই পারেন না, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকিগুলির ৬০ শতাংশ উত্তর করবেন।
পনেরো। কোন প্রশ্নেই বেশি গুরুত্ব দেবেন না। সহজ কঠিন সব প্রশ্নেই ১ নম্বর।
ষোলো। আপনার আশেপাশে কে কয়টা দাগাচ্ছে, কোনটা দাগাচ্ছে, সেদিকে তাকাবেন না। এতে আপনি বেশ কিছু জানা প্রশ্ন ভুল দাগাতে পারেন।
পরিচয় দেয়ার মতো একটা চাকরি সবারই হোক। সিভিল সার্ভিসে আপনাদের স্বাগত জানাই।
এই লেখাটি গত ২৫/১২/২০১৫ ইংরেজি তারিখ প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটি:
৩৫তম বিসিএস প্রিলি: কিছু পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ
………………………………………………………………………
৩৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণঃ
# কখগঘ এই সিরিয়ালটা বাম থেকে ডানে না দিয়ে উপরেনিচে দেয়াতে অনেক ক্যান্ডিডেটই অন্তত ৩-৪টা জানা প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছে। পিএসসি এই সাইকোলজিক্যাল গেমটা খেলবে, এটা কেউই ভাবতে পারারও কথা না। এরকম একটা প্রশ্নে ০.৫ নম্বরও অনেক! আপনি এই ধরাটা খেয়ে থাকলে নিজেকে ‘ইউনিক’ ভাবার কোনও কারণই নাই।
# প্রশ্নটি ‘এসো নিজে করি’ টাইপ কোনও প্রশ্ন না। তাই, আমি নিশ্চিত পরীক্ষার হলে পিন না শুধু, পালকপতনের নিস্তব্ধতা ছিল। কথা বলে লাভ না থাকলে তো প্রয়োজনে ‘ভুল বৃত্ত’ ভরাট করাও তো ভাল।
# কোচিং সেন্টার আর গাইডবই পড়েটড়ে তেমন কোনও কাজই হবে না, যদি না নিজের ‘হেডঅফিসে’ কিছু থাকে। যা কিছু সঞ্চয় করেছেন, তার চাইতে বেশি কাজে লেগেছে, যা কিছু সঞ্চয়ে আছে তা। ভাল প্রস্তুতি নেয়া অপেক্ষা ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। (সিভিল সার্ভিসের এন্ট্রি পরীক্ষা এমনই হওয়া উচিত) কীভাবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে, এটার ধরন, মানে প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে নতুনভাবে ভাববার সময় এসে গেছে বোধ হয়। ‘অমুক কোচিং সেন্টারের সাজেশন এত পার্সেন্ট কমন’, ‘তমুক গাইডের এত সংখ্যক প্রশ্ন কমন’ এসব কথা বলার দিন শেষ হতে চলেছে, এটা মনে হল।
# এই পরীক্ষায় গণতন্ত্র আর সাম্যবাদের প্রতিফলন ঘটেছে। গণতন্ত্র কেন? The exam-scripts were the mistake-banks of the candidates, by the candidates, for the candidates. সাম্যবাদ কেন? যারা পড়াশোনা করে গেছে, তাদের যে দশা, যারা পড়াশোনা করে যায়নি, তাদেরও একই দশা। পড়াশোনা করা মানে, পড়াশোনা করা; সেটা এক সপ্তাহেরই হোক আর এক বছরেরই হোক।
# “এবারেরটা যেমনতেমন, ৩৬তমটা একেবারে ফাটায়ে দিব” যদি আপনি ভাবেন, আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পরীক্ষার হলে ২ ঘণ্টার বেশিরভাগ সময়ই শুধু এই কথাটাই ভেবেছে, তবে আমি বলব, আপনি ভুল ভাবছেন। আমার অনেকের সাথেই কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে (যাদের বেশিরভাগই বুয়েট-মেডিক্যালের স্টুডেন্ট, মানে, আমাদের চোখে ‘ভাল স্টুডেন্ট’)। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি, ওই ভাবনাটি ছিল সার্বজনীন। বিশেষ পরিস্থিতিতে পৃথিবীর সব মানুষই একইভাবে ভাবে। পিএসসি চাইলেই সবাইকেই গণহারে ‘ধরা খাওয়া’তে পারে।
# ‘ভাব নেয়ার দিন শেষ, মেধায় চলুক বাংলাদেশ’ আমি জানি, এই কথাটি পিএসসি’র মাথায় নেই। আমি এমনিই বললাম। আচ্ছা, যদি অবচেতনভাবেও থেকে থাকে, মানে পিএসসি যদি চায়, ‘কাইজেন মেথডে’ পরীক্ষাপদ্ধতিতে সংস্কার আনবে, তবে আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাব। একইসাথে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদেরকে বলব, “ভাই, একথা ভাবাটা বোধ হয় ঠিক হবে না যে রিটেনে এতদিন ধরে যে স্টাইলে পড়ে সবাই পার পেয়ে গেছে, আপনিও সেভাবে পড়ে পার পেয়ে যাবেন।” একটু ভাবুন কীভাবে করে প্রিপারেশন নিলে ভাল হয়। সময় কম তো! যে চাকরিটা ৩০ বছর আরামে করবেন, সেটার জন্য ৩ মাসও একটু ভাবতে পারবেন না, তা কী করে হয়? ভাল কথা, ‘কাইজেন’ মানে হল, কোনও একটি সিস্টেমকে ধীরে ধীরে (রাতারাতি নয়) ক্রমাগত উন্নত করা।
# এ পরীক্ষায় ফার্স্ট পার্সন, সেকেন্ড পার্সন এবং থার্ড পার্সন—সবার অবস্থাই কমবেশি একই, মানে বাজে অবস্থা। যদি কেউ আপনাকে “কী পরীক্ষা দিয়েছ এসব! কিচ্ছু পার না! গাধা (কিংবা গাধী) একটা!” এই জাতীয় বকাঝকা দেন, তবে আমি শিওর, হয় উনি বিসিএস প্রিলি দেননি, অথবা উনি ৩৫তম বিসিএস প্রিলি দেননি। উনার কথায় কিছু মনে করবেন না, উনাকে নিজগুণে মাফ করে দিন। উনাকে এই ধরনের একটা প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে বলেন। দেখবেন, উনার নাকের পানি মুছে দেয়ার জন্য উনি কাউকেই পাশে পাবেন না।
# আপনাদের যেসব ফ্রেন্ড হাসিমুখে চাপাবাজি করছেন, “প্লাস-মাইনাস করে অ্যাট লিস্ট ১৫০ থাকবে”, তাদেরকে কিছুই বলার দরকার নাই। রেজাল্টটা বের হতে দিন। দেখবেন, এদের অনেকেই হাসিমুখেই ফেল মেরে বসে আছেন।
# একেকভাবে ভাবলে একেকরকম আনসার হয়, এমন প্রশ্ন অন্যান্যবারের তুলনায় এবার একটু বেশি ছিল। পিএসসি ইচ্ছে করেই এই গেমটা খেলে যাতে কেউ সেগুলো আনসার না করে সেজন্য। ওসব প্রশ্নের উত্তর পিএসসি যেটাকে ধরে নেবে সেটাই কারেক্ট। জানি, তারপরেও ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করে না। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস। ব্যাপার না! সবাই-ই জেনেশুনে বিষপান করে।
# প্রশ্নটি ভালভাবে দেখলে খেয়াল করবেন, আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যা-ই হোক না কেন, আপনি কোনও বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন না। চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন এরকমই হওয়া উচিত।
# এখন থেকে সবসময় পরীক্ষা এই স্টাইলেই হলে প্রশ্নব্যাংক, ডাইজেস্ট, জব সল্যুশন, কোচিং সেন্টারের রাজত্ব কমে যাবে কিংবা ওদেরকে সেবাদানের ধরন বদলাতে হবে। যে যা বলে তা-ই অন্ধভাবে বেদবাক্য হিসেবে বিশ্বাস করার দিন শেষ। আমরা চাই, শুধু মুখস্থবিদ্যার জোরে কেউ আমলাতন্ত্রে না আসুক।
কালকে থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত অসংখ্য প্রশ্ন পেয়েছি। একটু ইজি কাজে বিজি ছিলাম, তাই ঠিকসময়ে উত্তর দিতে পারিনি। প্রশ্নগুলোর উত্তর উপরে দেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরও কোনও প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করুন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
“৩৫তম বিসিএস প্রিলির কাট-অফ মার্কস কত হতে পারে?” মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন!!
সত্যি বলছি, আমি পরীক্ষা দিলে আমি নিজেও আদৌ পাস করব কিনা এটা নিয়ে চিন্তায় থাকতাম। প্রশ্ন দেখার পর আমার মনে হয়েছে, “আহা! যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি!” তাই আপনি ভাবতেই পারেন, “হায়! আমার কী হবে!” আচ্ছা, একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেছেন? আপনার যে কাহিনী, সবারই কিন্তু কমবেশি একই কাহিনী। এর মানে কী দাঁড়ায়? আপনি কম মার্কস পেলে বেশিরভাগ স্টুডেন্টও কম মার্কস পাবে। ‘দশে মিলি করি ফেল’ হলে তো আর সমস্যা নাই, তাই না? মিলেমিশে ফেল করবেন, অসুবিধা কী? তাহলে কি পিএসসি সবাইকেই ধরে ধরে ফেল করাবে? এটা তো আর সম্ভব না। তাই, আপনার রিটেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারার সম্ভাবনা একেবারে শুন্য না। আমি যদি এবারের ক্যান্ডিডেট হতাম, তবে আমি এটা কিছুতেই ভাবতে পারতাম না যে এবারের প্রিলির কাট-অফ মার্কস ৯৫’য়ের বেশি হবে, আমার নিজের পরীক্ষা যেমনই হোক না কেন!
গুড লাক ফ্রেন্ডস!!
লিখাঃ সুশান্ত পাল ।