BCS Examination – বিসিএস পরীক্ষা

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল – শেষ অংশ

বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

বাংলাদেশ বিষয়াবলীর সিলেবাস বদলায়নি, প্রশ্নের ধরনটা একটু বদলেছে। কিছু কাজের কথা বলছি।
# অন্তত ৩-৪ সেট গাইডবই কিনে ফেলুন। বিভিন্ন রেফারেন্স বই, যেমন মোজাম্মেল হকের উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ২য় পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের উপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা: ’৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলী খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ বিষয়াবলী ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন।
# ৪ ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চাইতে ১ ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। বেশি বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কীভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটা শিখতে পারবেন। বিভিন্ন প্রশ্ন অ্যাড কিংবা রিমুভ করে ৩-৪ সেট সাজেশনস্ বানান নিজেই। এটা প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান।
# অনলাইনে ৪-৫টা পেপার খুব দ্রুত পড়বেন। পেপার পড়ার সময় পেপারের কলামগুলো পড়ে পড়ে বুঝে নেবেন কোন কোন টপিক থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন হতে পারে। সাধারণ জ্ঞানে সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে প্রশ্নের ধরন বদলাতে পারে। বিভিন্ন কলাম পড়ার সময় কোন কলামিস্ট কোন বিষয় নিয়ে লেখেন, এবং কোন স্টাইলে লেখেন, সেটা খুব খুব ভাল করে খেয়াল করুন এবং নোটবুকে লিস্ট করে কলামিস্টের নাম, এর পাশে এরিয়া অব ইন্টারেস্ট, রাইটিং স্টাইল লিখে রাখুন। পরীক্ষার খাতায় উদ্ধৃতি দেয়ার সময় এটা খুব কাজে লাগবে।
# প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র ও ম্যাপ আঁকুন৷ যথাস্থানে বিভিন্ন ডাটা, টেবিল, চার্ট, রেফারেন্স দিন৷ পেপার থেকে উদ্ধৃতি দেয়ার সময় উদ্ধৃতির নিচে সোর্স এবং তারিখ উল্লেখ করে দেবেন। পরীক্ষার খাতায় এমন কিছু দেখান, যেটা আপনার খাতাকে আলাদা করে তোলে। যেমন ধরুন, বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সোর্সসহ রেফারেন্স দিতে পারেন। উইকিপিডিয়া কিংবা বাংলাপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত করতে পারেন। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে কে কী বললেন, সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে লিখতে পারেন। পেপারের সম্পাদকীয় থেকে ফর্মাল উপস্থাপনার স্টাইলটা শিখে নিন।
# নোট করে পড়ার কোনও প্রয়োজন নেই৷ বরং কোন প্রশ্নটা কোন সোর্স থেকে পড়ছেন, সেটা প্রশ্নের পাশে লিখে রাখুন, রিভিশন দেয়ার সময় কাজে লাগবে৷ বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন৷ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে রাখুন৷
# বিভিন্ন রেফারেন্স, টেক্সট, গাইড ও প্রামাণ্য বই অবশ্যই পড়তে হবে৷ বিসিএস পরীক্ষায় বেশিরভাগ প্রশ্নই কমন পড়েনা৷ এসব বই পড়া থাকলে উত্তর করাটা সহজ হয়৷ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সোর্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷ এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করলে সহজে পরীক্ষকের চোখে পড়বে৷ চেষ্টা করবেন প্রতি পেজে অন্তত একটা কোটেশন, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স, কিছু না কিছু দিতে। পুরো সংবিধান মুখস্থ করার কোনও দরকারই নাই। যেসব ধারাগুলো থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। সংবিধান থেকে ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।
# লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলেও সমস্যা নেই৷ খেয়াল রাখবেন, যাতে লেখা পড়া যায়৷ প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা লেখার প্র্যাকটিস্ করুন৷
# কোনভাবেই কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না৷ উত্তর জানা না থাকলে ধারণা থেকে অন্তত কিছু না কিছু লিখে আসুন৷ ধারণা না থাকলে, কল্পনা থেকে লিখুন। কল্পনায় কিছু না এলে প্রয়োজনে জোর করে কল্পনা করুন! আপনি প্রশ্ন ছেড়ে আসছেন, এটা কোন সমস্যা না৷ সমস্যা হল, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে৷
# মাঝে মাঝে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ননস্টপ লেখার প্র্যাক্টিস করুন৷ বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার অভ্যাস বাড়ান৷ এতে আপনার লেখা মানসম্মত হবে৷ কোনও উত্তরই মুখস্থ করার দরকার নেই৷ ধারণা থেকে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷ কেউই সবকিছু ঠিকঠাক লিখেটিখে চাকরি পায় না। রিটেনে সবাই-ই বানিয়ে লেখে। ঠিকভাবে বানিয়ে লেখাটাও একটা আর্ট।
এখন সিলেবাস অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করছি।
শর্ট কনসেপচুয়াল নোটস্: আগের বছরের প্রশ্ন, রেফারেন্স বই, গাইড বই, পেপার ঘেঁটে ঘেঁটে কী কী টীকা আসতে পারে লিস্ট করুন। এরপর সেগুলো গুগল করে ইন্টারনেট থেকে পড়ে ফেলুন। সাথে পেপার-কাটিং, ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করা পেপারের আর্টিকেল, গাইড বই আর রেফারেন্স বই তো আছেই! এ অংশে উত্তরের শেষে আপনার নিজস্ব বিশ্লেষণ দিলে মার্কস বাড়বে।
অ্যানালাইটিক্যাল কোয়েশ্চেনস্: যত বেশি সম্ভব তত পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। এ অংশে ১টি ১৫ মার্কসের প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৬+৫=১৫ মার্কসের প্রশ্ন উত্তর করাটা ভাল। প্রশ্নের প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচাইতে আকর্ষণীয় হওয়া চাই। প্রচুর কোটেশন দিন। বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে নিজের মত করে উপসংহার টানুন। কোন মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে সেটি অবশ্যই লিখুন।
প্রবলেম সলভিং কোয়েশ্চেন: আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কিছু কথা লেখা থাকবে কিংবা কোন একটা সমস্যার কথা দেয়া থাকবে। সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, ওটি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত সহকারে পয়েন্ট আকারে লিখুন। এটিতে ভাল করার জন্য নিয়মিত পেপার পড়ার কোন বিকল্প নেই।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই নেটে পাবেন। তাই সবচাইতে ভাল হয় যদি টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্নের উত্তর পড়লে সময় বেঁচে যাবে, মার্কসও ভাল আসবে। পেপারে দৈনিক এবং সাপ্তাহিক আন্তর্জাতিক পাতাটি, দ্য হিন্দু, দি ইকনোমিস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, প্রজেক্ট সিন্ডিকেট সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকা থেকে প্রয়োজনীয় আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য, সমালোচনা পড়ে নিন। এতে লেখা ধারালো হবে। বিভিন্ন ম্যাপ, ডাটা, চার্ট, টেবিল, পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে। প্রশ্ন অতো কমন পড়বে না। তাই রিডিং হ্যাবিট বাড়ানো ছাড়া এ অংশে ভাল করা কঠিন। কিছুই মুখস্থ করার দরকার নেই। বারবার দাগিয়ে দাগিয়ে পড়বেন। পরীক্ষার হলে নিজের মতো করে বানিয়ে লিখে দেবেন।
আপনার স্বপ্নের যত্ন নিন, স্বপ্নও আপনার যত্ন নেবে। সামনের সময়টাতে আপনার চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মকে আপনার স্বপ্নকেন্দ্রিক করে ফেলুন। বিশ্বাস করে নিন, যে সময়টাতে আপনি আপনার স্বপ্ন নিয়ে ভাবছেন না, সে সময়টাতে আপনি আসলে কিছুই ভাবছেন না! যারা আপনার স্বপ্নকে নিয়ে বাজে কথা বলে, তাদেরকে আপনার জীবন থেকে সাময়িকভাবে হলেও সরিয়ে দিন। আপনার স্বপ্নকে স্পর্শকের স্পর্ধায় ছুঁয়ে ফেলার সুন্দর মুহূর্তটিতে আপনাকে স্বাগতম!
প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব নিয়েও বুঝে হোক, না-বুঝে হোক, লিখলেই রিটেনে পাস করে ফেলবেন, কিন্তু চাকরিটা নাও হতে পারে। কীভাবে লিখলে ভাল হয়, আর সেজন্য এ ক’দিনে যা যা করতে পারেন :
1) পরীক্ষা নিয়ে টেনশন হওয়াটা একটা সাধারণ ভদ্রতা এবং না-পড়ার অজুহাত। ঐ মুহূর্তে আপনার পছন্দের বিষয়টা পড়ুন।
2) কোচিংয়ে যাওয়া, অপ্রয়োজনে বের হওয়া বাদ দিন। বাসায় পড়ার পেছনে সময় দিন; প্রতিদিন অন্তত ১৪-১৬ ঘণ্টা।
3) ফেসবুকীয় আত্মপ্রেমকে ছুটি দিয়ে দিন।
4) কে কী পড়ল, ভুলেও খবর নেবেন না। যাঁদের প্রস্তুতি আপনার চাইতে ভাল, তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিন।
5) সব প্রশ্ন পড়ার সহজাত লোভ সামলান।
6) যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা এ মাসের জন্য হয় চাকরি অথবা ঘুমটুম বাদ দিন।
7) প্রায়ই ফোনটা অফ রাখুন। ল্যাপটপ থেকেও দূরে থাকুন।
8) কিছু একটা পড়ছেন, পড়তে পড়তে ক্লান্ত! ভাল লাগে, এমনকিছু পড়ুন, ক্লান্তি কেটে যাবে। রাতে ঘুম কাটাতে ম্যাথস্, গ্রামার, ট্রান্সলেশন, মেন্টাল অ্যাবিলিটি প্র্যাকটিস করুন।
9) ২টার আগে ঘুমাবেন না, ৬টার পরে উঠবেন না। ৪ ঘণ্টা ঘুম, ব্যস!
10) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পড়বেন কম। বাকি ৪টা বেশি বেশি পড়ুন।
11) কোন টপিক একেবারেই না পড়ে গেলে, পরীক্ষায় বানিয়ে লেখাটাও সহজ হবে না। সবকিছু একবার হলেও ‘টাচ করে’ যান।
12) রেফারেন্স বই পড়ার সময় নেই। কয়েকটি ডাইজেস্ট কিনে ফেলুন।
13) অন্যকারোরটা নয়, সাজেশনস্ রেডি করুন নিজে।
14) প্রশ্ন কমন পেতে নয়, অন্তত বানিয়ে লেখার জন্য ধারণা পেতে প্রস্তুতি নিন।
15) প্রশ্নের গুরুত্ব ও নম্বরের ভিত্তিতে সময়বণ্টন আগেই ঠিক করে নিন।
16) ইচ্ছেমত দাগিয়েদাগিয়ে, লিখেলিখে বই পড়ুন। রিভাইজের সময় কাজে লাগবে।
17) ০.৫ মার্কসও ছেড়ে আসা যাবে না। যে করেই হোক, ‘ফুল আনসার’ করে আসতে হবে। গড়ে প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা অনেক বেশি দ্রুত লেখার চেষ্টা করুন।
18) প্রতি পেইজে অবশ্যই অন্তত একটা প্রাসঙ্গিক চিহ্নিত চিত্র, ম্যাপ, উদ্ধৃতি, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স দিন।
19) সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস্, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন৷ নোট করে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না!
20) যত কষ্টই হোক, অবশ্যই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়কে নিয়মিত অনুবাদ করুন।
21) বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা ও ব্যাখ্যা, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে নীল কালিতে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷
22) প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ মার্কসের ১টা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩+৫=১৫ মার্কসের ৪টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল।
23) বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখেন, এরকম ২৫-৩০ জনের নাম এবং তাঁদের ‘এরিয়া অব ইন্টারেস্ট’ ডায়রিতে লিখে রাখুন। (বানিয়েবানিয়ে) উদ্ধৃতি দেয়ার সময় কাজে লাগবে।
24) যা যা অন্যরা পারে না কিংবা কম পারে, কিন্তু পারা দরকার, তা তা ভাল করে দেখুন।
25) পেপার থেকে বিভিন্ন পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে।
26) বেশি বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচাইতে আকর্ষণীয় হওয়া চাই।
27) বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে আপনার নিজের মত করে নিজের বিশ্লেষণ দিয়ে উপসংহার টানুন। কোন মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে (এবং না থাকলেও) লিখুন।
28) গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য কমপক্ষে ৩০টি সুপরিচিত বাংলা বই সম্পর্কে জেনে নিন।
29) স্পেলিং আর গ্রামাটিক্যাল মিস্টেক না করে একেবারে সহজ ভাষায় লিখলেও ইংরেজিতে বেশি মার্কস আসবে।
30) শর্টকাটে ম্যাথস্ করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন।
31) সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আগের বছরের আর ডাইজেস্টের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো ভালভাবে পড়ে ফেলুন।
32) ডাইজেস্টের পাশাপাশি ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই আর ইন্টারনেটে মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন সলভ করুন।
33) পুরো সংবিধান মুখস্থ না করে যেসব ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।
34) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়তে পারেন। যে ইস্যু কিংবা সমস্যার কথা লিখবেন, সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে লিখুন।
35) শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে কারোর পক্ষেই লিখিত পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷
কঠোর পরিশ্রম করুন; প্রস্তুতি নিতে না পারার পক্ষে অজুহাত দেখিয়ে কোনওই লাভ নেই। আপনি সফল হলে, আপনাকে অজুহাত দেখাতে হবে না; আর আপনি ব্যর্থ হলে, আপনার অজুহাত কেউ শুনবেই না। গুড লাক!!
লিখিত পরীক্ষা দেয়াটা খুবই সহজ, লিখেটিখে দিয়ে আসলেই হয়; ফেল করা কঠিন বলে পাস করা আরও সহজ। শুধু পাস করার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ভাইভা পরীক্ষা দিতে পারবেন, আর কিছুই না। যদি ঠিকভাবে বুঝেশুনে পরিশ্রম করেন আর সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভালভাবে পাস করার যথার্থ পুরস্কার হিসেবে চাকরিটা পাবেন। পরীক্ষার বাকি আর এক মাসও নেই। এ অল্প সময়ে কী করা যায়? কিছু বুদ্ধি দিই।
এক। এ সময়ে কোচিংয়ে দূরে থাক, নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়াও বাদ দিন। কোচিংয়ে বেশিরভাগ মেয়েরা যায় ঘরের কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্য, আর ছেলেরা যায় মেয়েদের ফুচকা খাওয়ানোর জন্য। প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব। বাসায় বসে যত বেশি সম্ভব, পড়াশোনা করুন; দিনে কমপক্ষে ১৪-১৬ ঘণ্টা।
দুই। কোচিংয়ে মডেল টেস্ট না দিলেও ক্ষতি নেই। দিলেও, টেস্টের নম্বর দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করবেন না।
তিন। সম্ভব হলে, বাসার টুকিটাকি কাজের ভার এক মাসের জন্য অন্য কাউকে দিয়ে দিন।
চার। ফেসবুক থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। ফেসবুকিংয়ের ফাঁকে পড়া নয়, পড়ার ফাঁকে একটুখানি ফেসবুকিং করুন।
পাঁচ। কে কতটুকু পড়ে ফেলেছে, সে খবর নেবেন না। আপনি যা যা এখনও পড়েননি, তা তা পড়ে নিন।
ছয়। যেসব প্রশ্ন বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেসব প্রশ্নকে গুডবাই বলে দিন।
সাত। যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা এ মাসের জন্য হয় চাকরি অথবা ঘুমটুম বাদ দিন।
আট। পড়তে বসার সময় মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ হাতের কাছে রাখবেন না।
নয়। রাত ১১টার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ম্যাথস্, গ্রামার, অনুবাদ, মানসিক দক্ষতা প্র্যাকটিস করতে পারেন।
দশ। একটা বিষয় পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে জোর করে ঐ বিষয়টাই পড়তে থাকবেন না। বিশ্রামের টেকনিক হিসেবে, যে বিষয়টা ঐ মুহূর্তে পড়তে ভাল লাগে, সেটাই পড়বেন।
এগার। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পড়বেন কম। বাকি ৪টা বেশি বেশি পড়ুন।
বার। যদি কোন বিষয়ের উপর প্রস্তুতি না নিয়ে এটা ধরে নেন যে, পরীক্ষার হলে ওটা এমনি এমনি পারবেন, তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
তের। সব বিষয়ের সব টপিক অন্তত একবার হলেও পড়ে নিন। পড়তে না পারলে চোখ বুলিয়ে নিন।
চৌদ্দ। নিজের সাজেশনস্ রেডি করুন নিজে; সম্ভব হলে, একাধিক সেট। কারোর সাজেশনস্ অন্ধভাবে ফলো করবেন না।
পনের। প্রস্তুতি নেয়ার সময় এটা মাথায় রাখুন, আপনি প্রশ্ন কমন পাওয়ার জন্য নয়, বরং ধারণা থেকে লিখে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ষোল। কোন টপিক উত্তর করতে সর্বোচ্চ কত সময় নেয়া যাবে, সেটি প্রশ্নের গুরুত্ব ও নম্বরের ভিত্তিতে ঠিক করে লিখে রাখুন।
সতের। দাগিয়ে দাগিয়ে বারবার পড়ুন। পড়ার সময় বাড়তি তথ্য বইয়ে লিখে রাখুন।
আঠার। রেফারেন্স বই পড়ার সময় নেই। বাজারের কয়েকটা ডাইজেস্ট কিনে খুব দ্রুত পড়ে নিন।
উনিশ। আনকমন প্রশ্ন বলে কিছু নেই। কোন প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না; উত্তর জানা না থাকলেও ধারণা থেকে অন্তত কিছু না কিছু লিখে আসুন৷ ধারণা না থাকলে, কল্পনা থেকে লিখুন। কল্পনায় কিছু না এলে প্রয়োজনে জোর করে কল্পনা করুন! রিটেনে সবাই-ই বানিয়ে লিখে ক্যাডার হয়। নীল কালি ব্যবহার করে প্রতি পেইজে অবশ্যই অন্তত একটা প্রাসঙ্গিক চিহ্নিত চিত্র, ম্যাপ, উদ্ধৃতি, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স দিন।
বিশ। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস্, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন৷ নোট করে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না৷
একুশ। লিখিত পরীক্ষার সবচাইতে দরকারি টপিক হল অনুবাদ। যতই কষ্ট হোক, অবশ্যই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়কে নিয়মিত অনুবাদ করুন।
বাইশ। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷
তেইশ। প্রশ্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১০ মার্কসের একটা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩=১০ মার্কসের ৩টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল।
চব্বিশ। লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলেও সমস্যা নেই৷ লিখিত পরীক্ষায় অনেক বেশি দ্রুত লিখতে হয়৷ তাই গড়ে প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা লেখার চেষ্টা করুন।
পঁচিশ। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে যাঁরা লেখেন, এরকম ২৫-৩০টি নাম ডায়রিতে লিখে রাখুন। পাশে ছোট করে লিখে ফেলুন কে কোন ধরনের বিষয় নিয়ে লেখেন। উদ্ধৃতি দেয়ার সময় কাজে লাগবে।
ছাব্বিশ। কোন কোন সেগমেন্টে ক্যান্ডিডেটরা সাধারণতঃ কম মার্কস্ পায় কিন্তু বেশি মার্কস্ তোলা সম্ভব, সেগুলো নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে ওই সেগমেন্টগুলোতে ভালোভাবে প্রস্তুত করে কম্পিটিশনে আসার চেষ্টা করুন৷
সাতাশ। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য প্রতিদিন অনলাইনে ৪-৫টি পেপার পড়ার সময় খেয়াল করুন কোন কোন বিষয়সমূহ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন ম্যাপ, ডাটা, চার্ট, টেবিল, পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে।
আটাশ। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় যত বেশি সম্ভব তত পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। প্রশ্নের প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচাইতে আকর্ষণীয় হওয়া চাই। বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে আপনার নিজের মত করে নিজের বিশ্লেষণ দিয়ে উপসংহার টানুন। কোন মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে সেটিও লিখুন।
এখন বিষয়ভিত্তিক কিছু আলোচনা করছি।
বাংলা: ব্যাকরণ, ভাব-সম্প্রসারণ (খুব প্রাসঙ্গিক ২০টি বাক্যে), সারমর্ম (২-৩টি সহজ সুন্দর বিমূর্ত বাক্যে), অনুবাদ—এই টপিকগুলোতে বেশি জোর দিন। পত্র লেখার সময় নিয়মে ভুল করবেন না। কাল্পনিক সংলাপের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে ধারণা বাড়ান। গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য কমপক্ষে ৩০টি সুপরিচিত বাংলা বই সম্পর্কে জেনে নিন। রচনার লেখার সময় মাইন্ড-ম্যাপিং করে পয়েন্ট ঠিক করতে থাকুন, আর ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত লিখতে থাকুন।
ইংরেজি: ইংরেজিতে ভাল করার মূলমন্ত্র ২টি : এক। বানান ভুল করা যাবে না। দুই। গ্রামাটিক্যাল ভুল করা যাবে না। এই ২টি ব্যাপার মাথায় রেখে একেবারে সহজ ভাষায় লিখে যান, মার্কস আসবেই। কম্প্রিহেনশনের জন্য আইএলটিএস রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করুন। কিছু প্রামাণ্য বইয়ের সাহায্যে কয়েকটি ডাইজেস্ট থেকে গ্রামার এবং ইউসেজ প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। সামারির জন্য পেপারের সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলোকে সামারাইজ করার চেষ্টা করুন। লেটারের জন্য পত্রিকার লেটার টু দি এডিটর অংশটি দেখুন। এসেই কমন পড়বে না, এটা মাথায় রেখে সাজেশনস রেডি করে প্রস্তুতি নিন।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: আগের বছরের আর ডাইজেস্টের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই খুব ভালভাবে যথেষ্ট সময় নিয়ে কয়েকবার পড়ে ফেলুন। বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। এ অংশে প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সংকেত, সমীকরণ দিতে পারলে আপনার খাতাটা অন্য দশজনের খাতার চাইতে আলাদা হবে।
গাণিতিক যুক্তি: প্রতিরাতে কিছু না কিছু ম্যাথস্ প্র্যাকটিস না করে ঘুমাবেন না। শর্টকাটে ম্যাথস্ করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন। কোন সাইডনোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন কিছুতেই বাদ না যায়। একটু বুঝেশুনে পড়লে অংকে ফুলমার্কস পেতে সায়েন্সের স্টুডেন্ট হতে হয় না।
মানসিক দক্ষতা: এ অংশের প্রশ্নগুলো হবে সহজ, কিন্তু একটু ট্রিকি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালভাবে প্রশ্ন পড়ে, বুঝে, পূর্ণ মনোযোগের সাথে উত্তর করতে হবে। ডাইজেস্টের পাশাপাশি ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই সলভ করুন; সম্ভব হলে ইন্টারনেটে একটু প্র্যাকটিস করতে পারেন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন।
বাংলাদেশ বিষয়াবলী: কোন কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, সেটি সম্পর্কে খুব ভালভাবে ধারণা নিন। বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি থেকে তথ্য-উপাত্ত দিন। পুরো সংবিধান মুখস্থ করার কোনও দরকারই নাই। যেসব ধারাগুলো থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। সংবিধান থেকে ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী: টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়তে পারেন। ইন্টারনেটে মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন। উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য, সমালোচনা পড়ে নিন। এ অংশের নতুন টপিক প্রবলেম সলভিং কোয়েশ্চেনে ভাল করার জন্য যে ইস্যু কিংবা সমস্যার কথা দেয়া থাকবে, সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে লিখুন। এটিতে ভাল করার জন্য নিয়মিত পেপার পড়ার কোন বিকল্প নেই।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময় দুটো ব্যাপার মাথায় রাখুন : এক। কী কী পড়বেন, সেটা ঠিক করার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, কী কী পড়বেন না, সেটা ঠিক করা। দুই। মুখস্থ করার দরকার নেই; শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷ এ কয়দিনকে খুব ভালভাবে কাজে লাগান। যে চাকরিটা অন্তত ৩০ বছর আরাম করে করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, সেটার জন্য মাত্র ২১ দিন নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে পড়াশোনা করবেন না, এরকম বেকুব তো নিশ্চয়ই আপনি নন! গুড লাক!!
যদি আপনার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলি, “পারলে ট্রিগার প্রেস করার আগেই দৌড়ে পালান!” তখন আপনি কী করবেন? নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে থাকবেন না, যদিও আপনি খুব ভাল করেই জানেন, ওই সময়টাতে দৌড় দিলেও গুলির হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১%! আপনি আপনার সবটুকু দিয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টাটা করে দেখবেন এই আশায়, যদি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় আর আপনি কোনো এক মিরাকলে বেঁচে যান! মানুষ এভাবেই বাঁচে—মাত্র ১% বেঁচে থাকার চান্সে ১০০% এফর্ট দিয়ে! একেবারে ছেড়ে দেয়ার চাইতে মিরাকলে বিশ্বাস করে লেগে থাকা ভাল।
ধরেই নিলাম, ৩৬তম বিসিএস-এ আপনি চাকরিটা পাবেন, এর সম্ভাবনা মাত্র ১%। পরীক্ষা তো দেবেনই, নাকি? পরীক্ষা যদি দিতেই হয়, তবে পড়াশোনা না করে দিয়ে কী লাভ? দায়িত্ব নিয়ে বলছি, প্রতিটি বিসিএস-এ মাত্র ১% সম্ভাবনায় ৭০% লোক চাকরি পায়। ওরা যদি পায়, তবে আপনি কেন পাবেন না? ১০০% এফর্ট দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিন—এই মুহূর্ত থেকেই!
আমার নিজের মতো করে কিছু বুদ্ধি দিচ্ছি। এগুলিকে আপনার মতো করে কাজে লাগাবেন।
1. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিন।
2. প্রতিদিন পড়াশোনা করুন অন্তত ১৬ ঘণ্টা; চাকরিটা ছাড়া সম্ভব না হলে অন্তত ৭ ঘণ্টা। এ সময়টাতে ৫ ঘণ্টার চাইতে বেশি ঘুম একধরণের বিলাসিতা। বিশ্বাস করে নিন, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে যত মিনিট কম ঘুমাবেন, উনার তুলনায় আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তত পার্সেন্ট বেশি।
3. একটা বিষয় পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আপনার পছন্দের সহজ বিষয়টি পড়া শুরু করুন।
4. ফোন রিসিভ করা, ফেসবুকিং, সামাজিকতা কমিয়ে দিন। পড়ার টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটি দূরে রাখুন।
5. অনুবাদ, অংক, ব্যাকরণ, মানসিক দক্ষতা প্রতিদিনই চর্চা করুন।
6. অমুক তারিখের মধ্যে অমুক সাবজেক্ট/ টপিক, যত কষ্টই হোক, শেষ করে ফেলবো, এই টার্গেট নিয়ে পড়ুন।
7. পড়ার সময় লিখে পড়ার তেমন প্রয়োজন নেই, বরং বারবার পড়ুন। প্রশ্ন অতো কমন আসবে না, আপনাকে এমনিতেই বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হবে।
8. মার্কস এবং প্রশ্নের গুরুত্ব অনুসারে কোন প্রশ্নে কত সময় দেবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করে নেবেন।
9. সব সাজেশনস্ই দেখবেন, কিন্তু কোনটাই ফলো করবেন না। আগের বছরের প্রশ্ন আর কয়েকটা সাজেশনস্ ঘেঁটে নিজের সাজেশনস্ নিজেই বানান।
10. রেফারেন্স বই কম পড়ে গাইডবই বেশি পড়ুন। ৫টি রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১টি নতুন গাইডবই উল্টেপাল্টে দেখা ভাল।
11. লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে উদ্ধৃতি আর তথ্যউপাত্ত দিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে প্রচুর লিখতে হবে। বাংলায় গড়ে প্রতি ৩ মিনিটে এক পৃষ্ঠা, ইংরেজিতে গড়ে প্রতি ৫ মিনিটে এক পৃষ্ঠা—এই নীতি অনুসরণ করতে পারেন।
12. যে ভাষায় আপনি অতি দ্রুত লিখতে পারেন, সে ভাষায়ই উত্তর করবেন। আমি উত্তর করেছিলাম বাংলায়।
13. প্রতিদিনই প্রার্থনা করুন, সবার সাথে বিনীত আচরণ করুন। এটা আপনাকে ভাল প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
14. যে জিনিসগুলি কিছুতেই মনে থাকে না, সে জিনিসগুলি মনে রাখার অতিচেষ্টা বাদ দিন। অন্যকেউ ওটা পারে মানেই আপনাকেও ওটা পারতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। পরীক্ষায় বিকল্প প্রশ্ন থাকে। আপনি যা পারেন, তা যেন ভালোভাবে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
15. সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। বেশি পড়া নয়, প্রয়োজনীয় টপিক বেশি পড়াই বড় কথা।
16. কারোর পড়ার স্টাইলকেই অন্ধভাবে ফলো করবেন না। রেজাল্টই বলে দেবে, কে ঠিক ছিল, কে ভুল ছিল। রেজাল্ট বের হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি কারোর চাইতেই কোনো অংশে কম নন। ‘বেস্ট অ্যাচিভার’ হয়, কিন্তু ‘বেস্ট ক্যান্ডিডেট’ বলে কিছু হয় না।
17. অন্তত ৩-৪টি গাইডবই থেকে উত্তর পড়ুন। পড়ার সময় গোলমেলে আর দরকারি অংশগুলি দাগিয়ে রাখুন যাতে রিভিশন দেয়ার সময় শুধু দাগানো অংশগুলি পড়লেই চলে।
18. দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্রেক নিয়ে ১০-১৫ মিনিট করে অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিলে দুটো লাভ হয়। এক। রাতে কম ঘুমালে চলে। দুই। যতক্ষণ জেগে আছেন, সে সময়টার সর্বোত্তম ব্যবহারটুকু করতে পারবেন। ওরকম অল্প সময়ের কার্যকরী ঘুমকে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বলে।
19. অনলাইনে ৪-৫টি পেপার পড়ার সময় শুধু ওইটুকুই পড়ুন, যতটুকু বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে। এই কয়দিন বিনোদন পাতাটি না পড়লে আপনার জীবনযৌবন ঊষর মরুভূমি হয়ে যাবে না।
20. বিসিএস পরীক্ষা হল লিখিত পরীক্ষার খেলা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, মানসিক দক্ষতা আর বিজ্ঞানে বেশি মার্কস তোলা মানেই অন্যদের চাইতে অনেকটুকুই এগিয়ে যাওয়া। এই সময়টাতে বিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতি, ভাইভাতে স্বজনপ্রিয়তা, সিভিল সার্ভিসের নানান নেতিবাচক দিকসহ দুনিয়ার যাবতীয় ফালতু বিষয় নিয়ে শোনা, ভাবা, গবেষণা করা থাকে নিজেকে বিরত রাখুন।
এই কয়দিনে আপনার প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা। ওরকমই হলে, আমি বলবো, আপনি ঠিক পথে আছেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, পরীক্ষার আগের সময়টাতে যে যত বেশি আরামে থাকে, পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পরের সময়টাতে সে ততোধিক কষ্টে থাকে। বেশি পরিশ্রমে কেউ মরে না। যদি তা-ই হতো, তবে আমরা দেখতে পেতাম, পৃথিবীর সকল সফল মানুষই মৃত।
প্রথম আলো’তে এই ধারাবাহিক লেখাটির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা কী কী বিষয় নিয়ে জানতে চান, সেটা জানতে চেয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। কমেন্টগুলির ভিত্তিতে আজকের লেখাটি সাজালাম।
1. আপনার লেখার কোয়ালিটি বাড়াতে দুটো কাজ করবেন। এক। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর কয়েকটি সোর্স থেকে পড়বেন। দুই। আপনার প্রস্তুতি যেমনই হোক না কেন, পরীক্ষার হলে ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট’ এই মনোভাবটি ধরে রাখবেন।
2. একটি প্রশ্নের জন্য যে সময়টি আপনি মনে মনে বেঁধে রেখেছেন, সে সময়ের মধ্যে কিংবা কাছাকাছি সময়ে যে করেই হোক, উত্তরটি লেখা শেষ করে দেবেন। একটি উত্তর বেশি ভাল করে লিখে আরেকটি উত্তর ছেড়ে আসা কিংবা কম লিখে আসাটা আত্মঘাতী। পরীক্ষা আবেগের জায়গা নয়, যেকোনো মূল্যে ফুল আনসার করার জায়গা।
3. ইংরেজিতে ভাল নম্বর পেতে চাইলে দুটো নীতি অনুসরণ করুন। এক। কোনো বানান ভুল করবেন না। দুই। ব্যাকরণগত ভুলবিহীন শুদ্ধ সহজ বাক্য লিখুন।
4. বিজ্ঞানে আগের বছরের প্রশ্নগুলি আর ২-৩টা গাইডের সাজেশনস্ সলভ করে ফেললে অন্তত অর্ধেক প্রশ্ন কমন পেয়ে যাওয়ার কথা। প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সমীকরণ দিন।
5. প্রশ্ন কঠিন হবে কী সহজ হবে, এটা নিয়ে ভাবা মানে স্রেফ সময় নষ্ট করা। কারণ, লড়াইয়ের মাঠে সবার জন্যই একই নিয়ম, আপনার জন্য স্পেশাল কোনো প্রশ্ন পিএসসি করবে না। আপনি ঠিকঠাক উত্তর করতে না পারলে, সে সমস্যা আপনার।
6. সংবিধান মুখস্থ করার দরকার নেই। প্রশ্নের ধরণ স্টাডি করে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলি সম্পর্কে জেনে নিন, সেগুলিতে কী বলা আছে, ওইটুকু নিজের মতো করে লিখতে পারলেই চলবে।
7. যে টপিকগুলি চর্চা করার ব্যাপার আছে (যেমন, ব্যাকরণ), সেগুলি অবশ্যই অন্তত ৩টি গাইডবই থেকে চর্চা করবেন।
8. আপনি যদি কোনো একটি বিষয়ে খুবই দুর্বল হন, তবে সে বিষয়ে সবল হওয়ার চেষ্টা বাদ দিয়ে যে বিষয়টি আপনি ভালোভাবে পারেন, সেটি আরও ভাল করে পড়ুন। এতে আপনি প্রথম বিষয়ে যত নম্বর কম পাবেন, দ্বিতীয় বিষয়ে আরও কম সময় দিয়ে তার চাইতে বেশি নম্বর তুলতে পারবেন। সে বেঁচে যাওয়া সময় অন্য একটি বিষয়ের পেছনে দিন।
9. ১ পৃষ্ঠা তথ্যবহুল লেখা ৩ পৃষ্ঠা তথ্যবিহীন লেখার চাইতে ভাল নম্বর পেতে বেশি সহায়তা করে।
10. হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই, লেখা যেন পড়া যায়। আপনার ফন্টের আকার বেশি বড় হলে, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে একই সময়ে কম লিখতে পারবেন।
11. কোনো একটি টপিক নিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি জানার জন্য গুগলের সহায়তা নিন। প্রয়োজনে বাংলায় টাইপ করে অপশনস্ কাস্টমাইজ করে খুঁজতে পারেন।
12. মানসিক দক্ষতার জন্য অল্প সময়ে ভাল প্রস্তুতি নিতে ৩টা গাইডবইয়ের সব প্রশ্নোত্তর পড়ে ফেলুন।
13. আপনি অংক কম পারেন? আপনি অংকে ৫০ পাবেন না, ৩৫ পাবেন—এটা মেনে নিন। ১৫ নম্বরের জন্য যত বেশি টেনশন করবেন, অন্যান্য বিষয়ে আপনার ৫০ নম্বর হারানোর আশংকা তত বেশি থাকবে।
14. যারা ইংরেজিতে বেশি দুর্বল, তারা বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য দরকারি, এমন কোনো টপিক নিয়ে ভুল হোক, শুদ্ধ হোক, প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যয় করে ৫-৬ পৃষ্ঠা করে লিখবেন।
15. যারা যে বিষয়টিতে ভাল, তাদের সাথে পারতঃপক্ষে সে বিষয়ে আপনার দুর্বলতা নিয়ে এই সময়টাতে কোনো আলাপ করবেন না।
16. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর উত্তরের শেষ প্যারায় বিভিন্ন কলামিস্ট, বিশেষজ্ঞ ও আপনার নিজস্ব মতামত এবং বিশ্লেষণ দিলে নম্বর বাড়বে।
17. একটা প্রশ্ন মুখস্থ করার চাইতে সে একইসময়ে কয়েকটা প্রশ্ন বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়ে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ। আপনার রিডিং হ্যাবিট যত ভাল হবে, আপনার রাইটিং স্টাইল তত উন্নত হবে।
18. পরীক্ষায় মূল খাতায় চারদিকে মার্জিন করে আর অতিরিক্ত পাতায় চারদিকে ভাঁজ করে লিখতে পারেন। কোটেশন লিখতে নীল কালি ব্যবহার করুন।
19. গ্রন্থ সমালোচনা অংশের জন্য পরিচিত, গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ও অন্যান্য ৩০টি উপন্যাস সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
20. গভীর রাতে ঘুম তাড়াতে সহজ টপিকগুলি পড়ুন। ‘জাস্ট ৫ মিনিটের জন্য’ ফেসবুকে ঘুরে আসতে লগইন করবেন না।
21. কোন বিষয়ে কত পেতে পারেন, এটা নিয়ে একটা ছক করে ফেলুন। গড়ে আপনার নম্বর যেন ৬৫ এর নিচে না নামে।
22. কলিগরা আঁতেল বলুক আর যা-ই বলুক, চাকরিজীবীরা চাকরিতে যাওয়ার সময় সাথে করে বিসিএস এর গাইডবই নিয়ে যাবেন আর সুযোগ পেলেই পড়বেন।
23. আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি, রেফারেন্স বই পড়ার অতো সময় এখন আর নেই। গাইডবই আর ইন্টারনেট থেকে সাজেশনস্ ধরে ধরে পড়াশোনা করুন।
24. হাতের আঙুল আর কব্জি ব্যথা না করে এ পর্যন্ত কেউই চাকরি পায়নি, আপনিও পাবেন না। কোন প্রশ্নের উত্তর কত পৃষ্ঠা লেখা উচিত, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনার চিন্তা করার আর লেখার দ্রুততার উপরেই এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে।
25. যাদের হাতের লেখা স্লো, তারা কম লেখার ক্ষতিকে পুষিয়ে নেবেন বেশি বেশি তথ্য-উপাত্ত আর উদ্ধৃতি দিয়ে।
আজ আর নয়। পরের পর্বে বাকি কথা হবে। হ্যাপি রিডিং!
পরেরবার ফাটিয়ে পরীক্ষা দেওয়া বলে আসলে কিছু নেই। আপনি আগে কী করেছেন, কী করেননি, সেসবের হিসাব না করে এখনকার নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আমাদের শরীর চলে শরীরের ক্ষমতায় নয়, মনের জোরে। একজন সুস্থ মানুষের পরিশ্রম করতে না পারাটা মূলত একধরনের মানসিক অক্ষমতা। এই কয়টা দিনে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজে লাগান। দেখুনই না কী হয়!
১. ‘আনকমন প্রশ্ন’ বলে কিছু নেই। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না এলে বানিয়ে লিখে দিয়ে আসতে হবে, বানাতে না পারলে কল্পনায় আনতে হবে, কল্পনায় না এলে জোর করে কল্পনা করতে হবে। আপনি উত্তর করছেন না, এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে।
২. শূন্য দশমিক ৫ মার্কসও ছেড়ে আসা যাবে না। যে করেই হোক, ‘ফুল আনসার’ করে আসতে হবে।
৩. অন্তত তিনটি ডাইজেস্টের শুধু প্রয়োজনীয় অংশগুলো অতি দ্রুত পড়ে নিন। পাণ্ডিত্য নয়, চাকরি চাই।
৪. আপনার আগে কেউ ফাঁকিবাজি করে পার পেয়ে গেছে মানেই যে আপনিও ফাঁকিবাজি করে পার পেয়ে যাবেন, এটা কখনোই ভাববেন না।
৫. আপনার ব্যক্তিগত দুঃখ আর যন্ত্রণা আপনার পরীক্ষা খারাপ হওয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না, অন্তত চারপাশের পৃথিবীটা তা-ই মনে করে। আপনার কষ্টগুলো বড়জোর আপনার দুর্ভাগ্য; কিন্তু আপনার ব্যর্থতাগুলো আপনার ব্যর্থতাই, আর কিছু নয়।
৬. আমি বিশ্বাস করি, ভালো প্রস্তুতি থাকলেই যেমন ভালো পরীক্ষা দেওয়া যায় না, তেমনি খারাপ প্রস্তুতি থাকলেই খারাপ পরীক্ষা দেওয়া যায় না। ফলাফল সব সময়ই চূড়ান্ত ফলাফল বের হওয়ার পর, আগে নয়। এর আগ পর্যন্ত আপনি কিছুতেই কারও চেয়ে কোনো অংশেই কম নন।
৭. এ সময়ে কিছু অভিনব প্রশ্নসমৃদ্ধ ‘টাচ অ্যান্ড পাস’ টাইপের সাজেশন পাওয়া যায়। এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। নিজের সাজেশনসের ওপর নির্ভর করাই ভালো।
৮. একটা ‘নো এক্সকিউজ’ জীবন কাটান। আপনি সফল হলে আপনার এক্সকিউজ দেখাতে হবে না। আপনি ব্যর্থ হলে আপনার এক্সকিউজ কেউ শুনবেই না। নিজেকে ক্রমাগত আঘাত করুন, নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন প্রতিটি মুহূর্তেই।
৯. কার কতটুকু পড়া হলো, সে খবর কখনোই নেবেন না। নিজেরটা নিয়ে ভাবুন।
১০. কোন প্রশ্নের উত্তর কত পৃষ্ঠা লিখতে হবে, সেটা নির্ভর করে প্রশ্নটির নম্বর, গুরুত্ব, সময় আর আপনার লেখার দ্রুততার ওপর। সময় সবার জন্যই তো সমান, এটার সঠিক ব্যবস্থাপনাই আসল কথা।
১১. কোনো টপিক একেবারেই না পড়ে গেলে পরীক্ষায় বানিয়ে লেখাটাও সহজ হবে না। সবকিছু একবার হলেও ‘টাচ করে’ যান।
১২. পড়তে বসলে সামনের কয়েক ঘণ্টায় কী কী পড়বেন, সেটা কাগজে লিখে ফেলুন, এরপর পড়ুন। সামনের কয়েক দিনে কী কী পড়বেন, সেটা নিয়ে কখনোই ভাববেন না।
১৩. পরীক্ষার আগ পর্যন্ত গুনে গুনে ৪ ঘণ্টা ঘুম। কী? হবে না? হবে, হবে। অনেকেই এটা পেরেছে। আপনি পারবেন না কেন?
১৪. প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ মার্কসের একটি প্রশ্ন উত্তর করার চেয়ে ৪+৩+৩+৫=১৫ মার্কসের চারটি প্রশ্ন উত্তর করা ভালো।
১৫. ফেসবুকিং ছেড়ে দিন। একদমই! ফোন রিসিভ করুন হিসাব করে।
১৬. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পড়বেন কম। বাকি চারটা বেশি বেশি পড়ুন।
১৭. বাইরে কোথাও মডেল টেস্ট দেওয়ার দরকার নেই। বাসায় অনেক বেশি সময় দিন।
১৮. বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখেন, এ রকম ২৫-৩০ জনের নাম এবং তাঁদের ‘এরিয়া অব ইন্টারেস্ট’ ডায়েরিতে লিখে রাখুন। উদ্ধৃতি দেওয়ার সময় কাজে লাগবে।
১৯. বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে আপনার নিজের মতো করে নিজের বিশ্লেষণ দিয়ে উপসংহার টানুন। কোনো মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে (এবং না থাকলেও) লিখুন।
২০. বেশি বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হওয়া চাই।
২১. যা যা পড়ছেন, তার তেমন কিছুই মনে থাকবে না। শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে কারও পক্ষেই লিখিত পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ৬০ ভাগ ভুলে গিয়ে বাকি ৪০ ভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷
২২. যাঁরা প্রথমবার বিসিএস দিচ্ছেন, তাঁদের বলছি। ব্যর্থতার কোনো ফার্স্ট টাইম সেকেন্ড টাইম বলে কিছু নেই। ব্যর্থতা ব্যর্থতাই! নিজেকে অত ক্ষমা করে দিলে জীবন চলে না।
২৩. রাষ্ট্রের কিংবা সরকারের নেতিবাচক কোনো কিছুই পরীক্ষার খাতায় লিখবেন না।
২৪. শর্টকাটে ম্যাথস করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন।
২৫. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোট, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন।
২৬. সংবিধানের সব অনুচ্ছেদ আমার মুখস্থ ছিল না, অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত অত ভালো জানতাম না, মুখস্থবিদ্যা ছিল না, তবু আমি চাকরি পেয়েছি। তবে আপনি পাবেন না কেন?
যা হওয়ার, তা-ই হবে। আপনার রিজিক অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত করা আছে। আপনি আপনার কাজের মাধ্যমে সেটা অর্জন করার রাস্তাটাকে অধিক সম্মানিত কিংবা কম সম্মানিত করতে পারেন, আর কিছুই না। নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না, কারণ পৃথিবীতে এই একটি মানুষই শেষ পর্যন্ত আপনার পাশে থেকে যাবে। গুড লাক!
লিখাঃ সুশান্ত পাল। 
Exit mobile version