Home / blog / বিসিএস রিটেনে ভালো করার ২৫ টিপস

বিসিএস রিটেনে ভালো করার ২৫ টিপস

লিখিত পরীক্ষা খুবই সহজ; লিখে এলেই হয়। ফেল করা কঠিন বলে পাস করা আরো সহজ। এমনটি ভাবলে শুধু পাস করার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে মৌখিক পরীক্ষা দিতে পারবেন, আর কিছুই না। যদি ঠিকভাবে বুঝেশুনে পরিশ্রম করেন আর সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভালোভাবে পাস করার যথার্থ পুরস্কার হিসেবে চাকরিটা পাবেন। হাতে আর এক মাসও নেই। এ অল্প সময়ে কী করা যায়? কিছু বুদ্ধি দিই।

১. এ সময় কোচিং দূরে থাক, নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়াও বাদ দিন। প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব-এমন হলে চলবে না। বাসায় বসে যত বেশি সম্ভব পড়াশোনা করুন, দিনে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা।

২. কোচিংয়ে মডেল টেস্ট না দিলেও ক্ষতি নেই। দিলেও টেস্টের নম্বর দিয়ে নিজেকে পুরোপুরি মূল্যায়ন করবেন না।

৩. সম্ভব হলে বাসার টুকিটাকি কাজের ভার এক মাসের জন্য অন্য কাউকে দিয়ে দিন।

৪. ফেসবুক থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। ফেসবুকিংয়ের ফাঁকে পড়া নয়, পড়ার ফাঁকে একটুখানি ফেসবুকিং করুন।

৫. কে কতটুকু পড়ে ফেলেছেন, সে খবর নেবেন না। আপনি যা যা এখনো পড়েননি, তা তা পড়ে নিন।

৬. যেসব প্রশ্ন বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেসব প্রশ্নকে গুডবাই বলে দিন। একটা বিষয় পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে জোর করে ওই বিষয়টাই পড়তে থাকবেন না। যে বিষয়টা ওই মুহূর্তে পড়তে ভালো লাগে, সেটাই পড়ুন।

৭. চাকরি ঠিক রেখে প্রস্তুতি নেওয়াটা বেশ কঠিন। চাকরিজীবী হলে পারলে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিন।

৮. পড়তে বসার সময় মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপ হাতের কাছে রাখবেন না।

৯. রাত ১১টার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ম্যাথস্, গ্রামার, অনুবাদ, মানসিক দক্ষতা প্র্যাকটিস করতে পারেন।

১০. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য প্রতিদিন ৪-৫টি পত্রিকা পড়ুন। খেয়াল করুন কোন কোন বিষয়গুলো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ দুটি বিষয়ে কিছুটা কম সময় দিলেও চলবে। বাকি চারটা বেশি বেশি পড়ুন।

১১. সব বিষয়ের সব টপিক অন্তত একবার হলেও পড়ে নিন। পড়তে না পারলে চোখ বুলিয়ে নিন। যদি কোনো বিষয়ের প্রস্তুতি না নিয়ে ধরে নেন যে পরীক্ষার হলে এমনি এমনি পারবেন, তবে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

১২. নিজের সাজেশনস রেডি করুন নিজে; সম্ভব হলে একাধিক সেট। কারোর সাজেশনস অন্ধভাবে ফলো করবেন না।

১৩. আনকমন প্রশ্ন বলে কিছু নেই। কোনো প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না; উত্তর জানা না থাকলেও ধারণা থেকে অন্তত কিছু না কিছু লিখে আসুন। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মাথায় রাখুন, আপনি প্রশ্ন কমন পাওয়ার জন্য নয়, বরং ধারণা থেকে লিখে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

১৪. কোন টপিক উত্তর করতে সর্বোচ্চ কত সময় নেওয়া যাবে, সেটি প্রশ্নের গুরুত্ব ও নম্বরের ভিত্তিতে ঠিক করে লিখে রাখুন।

১৫. দাগিয়ে দাগিয়ে বারবার পড়ুন। পড়ার সময় বাড়তি তথ্য বইয়ে লিখে রাখুন।

১৬. রেফারেন্স বই পড়ার সময় নেই? বাজারের কয়েকটা ডাইজেস্ট কিনে খুব দ্রুত পড়ে নিন।

১৭. প্রতি পৃষ্ঠায় নীল কালিতে অন্তত একটা প্রাসঙ্গিক চিহ্নিত চিত্র, ম্যাপ, উদ্ধৃতি, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স দিন।

১৮. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টিকা, শর্ট নোটস, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন। নোট করে পড়ার দরকার নেই।

১৯. অনুবাদ অনেকের কাছেই কঠিন ঠেকে। যত কষ্টই হোক, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয় নিয়মিত অনুবাদ করুন।

২০. প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে।

২১. প্রশ্ন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১০ মার্কসের একটা প্রশ্ন উত্তর করার চেয়ে ৪+৩+৩ = ১০ মার্কসের ৩টা প্রশ্নের উত্তর করা ভালো।

২২. লেখা সুন্দর হলে ভালো, না হলেও সমস্যা নেই। লিখিত পরীক্ষায় অনেক বেশি লিখতে হয়। তাই গড়ে প্রতি ৩ থেকে ৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা লেখার অভ্যাস করুন।

২৩. কিছু কিছু সেগমেন্টে গড়ে কম নম্বর ওঠে। বেশি মার্কস তোলা সম্ভব-এমন সেগমেন্ট ঠিক করে সেগুলোতে ভালো প্রস্তুতি নিন।

২৪. বিভিন্ন ম্যাপ, ডাটা, চার্ট, টেবিল, পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে।

২৫. প্রশ্নের উত্তর করার সময় যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট বা প্যারা আকারে লিখবেন। প্রশ্নের প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হওয়া চাই। আপনার নিজের বিশ্লেষণ, মন্তব্য কিংবা মতামত দিয়ে উপসংহার টানুন।

এবার বিষয়ভিত্তিক কিছু আলোচনা করছি।

বাংলা : ব্যাকরণ, ভাবসম্প্রসারণ (প্রাসঙ্গিক ২০টি বাক্যে), সারমর্ম (২-৩টি সহজ সুন্দর বাক্যে), অনুবাদ-এই টপিকগুলোতে বেশি জোর দিন। পত্র লেখার সময় নিয়মে ভুল করবেন না। কাল্পনিক সংলাপের জন্য বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে ধারণা বাড়ান। গ্রন্থ সমালোচনার জন্য কমপক্ষে ৩০টি সুপরিচিত বাংলা বই দেখুন। রচনা লেখার সময় মাইন্ড-ম্যাপিং করে পয়েন্ট ঠিক করে ঘণ্টা পড়ার আগ পর্যন্ত লিখতে থাকুন।

ইংরেজি : ইংরেজিতে ভালো করার মূলমন্ত্র দুটি : এক. বানান ভুল করা যাবে না। দুই. গ্রামাটিক্যাল ভুল করা যাবে না। এই দুটি ব্যাপার মাথায় রেখে একেবারে সহজ ভাষায় লিখে যান, মার্কস আসবেই। কমপ্রিহেনশনের জন্য আইএলটিএস রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করুন। কিছু প্রামাণ্য বই থেকে গ্রামার ও ইউসেজ প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। সামারির জন্য ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদকীয় আর আর্টিকেল সামারাইজ করার চেষ্টা করুন। লেটারের জন্য পত্রিকার লেটার টু দি এডিটর অংশটি দেখুন। রচনা কমন পড়বে না, এটা মাথায় রেখে সাজেশনস রেডি করে প্রস্তুতি নিন।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : আগের বছরের আর ডাইজেস্টের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই খুব ভালোভাবে যথেষ্ট সময় নিয়ে কয়েকবার পড়ে ফেলুন। বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। এ অংশে প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সংকেত, সমীকরণ দিতে পারলে আপনার খাতাটা অন্য দশজনের খাতার চেয়ে আলাদা হবে।

গাণিতিক যুক্তি : প্রতিরাতে কিছু না কিছু ম্যাথস প্র্যাকটিস না করে ঘুমাবেন না। শর্টকাটে ম্যাথস করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন। কোনো সাইডনোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন কিছুতেই বাদ না যায়। একটু বুঝেশুনে পড়লে অঙ্কে ফুল মার্কস পেতে সায়েন্সের স্টুডেন্ট হতে হয় না।

মানসিক দক্ষতা : এ অংশের প্রশ্নগুলো হবে সহজ, কিন্তু একটু ট্রিকি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে, ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে, বুঝে, পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে উত্তর করতে হবে। ডাইজেস্টের পাশাপাশি ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই সলভ করুন; সম্ভব হলে ইন্টারনেটে প্র্যাকটিস করুন। এ অংশে ফুল মার্কস পাবেন না-এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি : কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে ধারণা নিন। বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা থেকে তথ্য-উপাত্ত দিন। পুরো সংবিধান মুখস্থ করার দরকারই নেই। যেসব ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালোভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। সংবিধান থেকে ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি : টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়তে পারেন। উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের সাহায্য নিন। ইন্টারনেটে মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন। এ অংশের নতুন টপিক প্রবলেম সলভিং কোয়েশ্চেনে ভালো করার জন্য যে ইস্যু কিংবা সমস্যা দেওয়া থাকবে, সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও আপনার নিজের মতামত ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে লিখুন। ভালো করার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার বিকল্প নেই।

প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দুটি ব্যাপার মাথায় রাখুন :

এক. কী কী পড়বেন সেটা ঠিক করার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কী কী পড়বেন না সেটা ঠিক করা।

দুই. মুখস্থ করার দরকার নেই, শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ৬০ ভাগ ভুলে গিয়ে বাকিটা ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট। এ কয়েকটা দিন খুব ভালোভাবে কাজে লাগান। যে চাকরিটা অন্তত ৩০ বছর আরাম করে করবেন বলে ঠিক করেছেন, তার জন্য মাত্র ২০-২৫ দিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে পড়াশোনা করবেন না-এ রকম বোকা নিশ্চয়ই আপনি নন! গুড লাক!

লিখাঃ সুশান্ত পাল ।

Check More Lessons

A famous breakup story – Written by Sushanta Paul

Thank you; I can NEVER trust anyone again. People who flatter you all the time, …