প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ
প্রয়োগ: শব্দের শুদ্ধ বা ঠিক ব্যাকরণের নাম প্রয়োগ।
অপপ্রয়োগ: যে সকল শব্দ ভুল কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি তার নামই অপপ্রয়োগ।
কিছু প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো :
১. ইদানীংকালে- ইদানীং’ অর্থ বর্তমানকাল। অর্থাৎ ’ইদানীং’ শব্দের সাথে কাল যুক্ত আছে।
২. কার্যকরী-কার্যকরী শব্দটির প্রয়োগ বা শুদ্ধ রুপ হলো ’কার্যকর’। কার্যকর শব্দের অর্থ ফলদায়ক বা উপযোগী। সুতরাং কার্যকরী শব্দটির সাথে শেষে ঈ কার ব্যবহার বাহুল্য।
৩. তৎকালীন সময়- তৎকালীন’ শব্দের অর্থ সেই সময়। তাই তৎকালীনের সাথে সময় ব্যবহার করলে অপ্রয়োগ হবে। সুতরাং ’তৎকালীন লিখতে হবে।
৪. পদক্ষেপ- শব্দের অর্থ পা ফেলা বা পদার্পণ। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থে প্রায়ই ব্যবহার করি। সুতরাং ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থে ’পদক্ষেপ’ শব্দের ব্যবহার অশুদ্ধ।
৫. খাঁটি গরুর দুধ- বাক্যটি অর্থহীন । গরু খাটি বা নকল হয় না । সুতরাং এর শুদ্ধরুপ হবে ’গরুর খাটি দুধ’। তেমনি , ’মরিচের খাটি গুড়া’, ’সরিষার খাটি তেল’ ইত্যাদি ব্যবহার শুদ্ধ বা প্রয়োগ।
৬. জন্মবার্ষিকী- ’জন্মবার্ষিকী শব্দটি অপ্রয়োগ। এর প্রয়োগ হল ’জন্মবার্ষিক’ । তেমনি ’প্রতিষ্ঠাবার্ষিকর’ প্রয়োগ হলো প্রতিষ্ঠাবার্ষিক। কেননা বছরে একবার অনুষ্ঠিত হলে বার্ষিক বলে। যেমন: বার্ষিক পরীক্ষা, । কখনো বার্ষিকী পরীক্ষা হয় না।
৭. বমালসুদ্ধ- ’বমাল’ শব্দের অর্থ মালসহ বা মালসমেত। তাই ’বমালসুদ্ধ ব্যবহার করলে বাহুল্য দোষে দুষ্ট হবে। কেননা ’বমাল’ অর্থ মালসহ বা মালসুদ্ধ। সুতরাং বমালসুদ্ধ ব্যবহার করলে ব্যবহার দুইবার হয়। অর্থাৎ ’বমালসুদ্ধ’ অর্থ হয় ’মালসহসুদ্ধ’। ফলে শব্দটি বমালসুদ্ধ না হয়ে ’বমাল/মালসহ’ হবে।
৮. অশ্রুজল- চোখের পানি অর্থে ব্যবহার অপ্রয়োগ। কেননা অশ্রু শব্দের অর্থ চোখের জল। অতএব এর প্রয়োগ হবে অশ্রু/চোখের জল।
৯. আকন্ঠ পর্যন্ত- ’আকন্ঠ পর্যনÍ’ শব্দটি অপ্রয়োগ। কেননা আকন্ঠ অর্থ কন্ঠ পর্যন্ত। তাই এর সাথে আবার পর্যন্ত যোগ করলে অপ্রয়োগ হবে। অতএ বশব্দটির প্রয়োগ হবে ’আকন্ঠ/কন্ঠ পর্যন্ত’।
১০. সমকালীন সময়- ’সমকালের সাথেই কাল বা সময় যুক্ত আছে । তাই ’সমকালীনের’ সাথে সময ব্যবহার করা অপ্যয়োগ। সুতরাং শব্দটির শুদ্ধ রুপ হলো ’ সমকালীন’।
১১. সাম্প্রতিককাল- সাম্প্রতিক মধ্যে কাল নিহিত আছে । সাম্প্রতিককাল তাই ব্যবহার ব্যহুল্যজনিত অপপ্রয়োগ হবে । অতএব শব্দটির প্রয়োগ হবে সাম্পতিক।
১২. কর্তৃপক্ষগণ- ’কর্তৃপক্ষ’ শব্দটি বহুবচন বাচক। কিন্তু আমরা যদি এর সাথে গণ ব্যবহার করি তাহলে বাহুল্যজনিত অপ্রয়োগ হবে। সুতরাং শব্দুটর প্রয়োগ হবে ’কর্তৃপক্ষ’।
১৩. আশ্চর্য- আশ্চর্য শব্দের অর্থ বিষ্মকর। বিষ্মিত অর্থে শব্দটির অর্থ ব্যবহার অপপ্রয়োগ ।অতএব শব্দটির অর্থ হবে আশ্চর্য়ান্বিত ।
১৪. আন্তজার্তিক- জাতির অন্তগর্ত বা জাতির অভ্যন্তরীন বিষয় সম্পকিত অর্থে আন্তজাতিক শব্দের প্রয়োগ শুদ্ধ ।বিভিন্ন জাতি সার্বজাতিক অর্থে প্রযোগ অশুদ্ধ হল্ওে তা ব্যপক ভাবে প্রচলিত।
১৫. প্রামাণ্য – প্রামাণ্য শব্দের অর্থ প্রামাণিকতা বা বিশ্বস্ততা । প্রামাণ্য শব্দটি বিশেষ্য । তাই এর বিশেষণ অর্থে অর্থাৎ প্রামাণিক, প্রমাণিত, বিশ্বাসযোগ্য অর্থে প্রয়োগ ভুল।
১৬. ফাসীয়- ’ফরাসি ’ শব্দের অর্থই ফরাসি দেশীয়। তাই ফরাসি শব্দের সাথে ঈয় প্রত্যয় যোগ করলে অপ্রয়োগ হবে। তেমনি রুশীয়, মার্কীনীয় ইত্যাদি ব্যবহার একই রকম অপ্রয়োগ।
১৭. অজ্ঞানতা –- ’অজ্ঞতা’ অর্থে অজ্ঞানতার ব্যবহার অশুদ্ধ। কেননা অজ্ঞানতা অর্থ জ্ঞানশূন্যতা তাই জ্ঞানশূন্যতা অর্থে অজ্ঞানতার প্রয়োগ শুদ্ধ।
১৮. আঙ্গিক – ’আঙ্গিক’ শব্দের অর্থ সমন¦ীয়। কিন্তু আজকাল অনেকেই কলাকৌশল অর্থে আঙ্গিক ব্যবহার করছে। ফলে শব্দটির অপ্রয়োগ ঘটেছে।
১৯. অপোগ– অপোগ- শব্দের অর্থ ’নাবালক’ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক। এজন্য অপদার্থ, অকর্মণ্য অর্থে শব্দটির প্রয়োগ অশুদ্ধ।
২০. কর্মব্যপদেশে- কর্মব্যপদেশে শব্দটির অর্থ কাজের ছুতায়। কিন্তু কর্মসূত্র অর্থে শব্দটির প্রয়োগ ভুল।
২১. প্রতিঘরে ঘরে- ’প্রতিঘরে/ঘরে ঘরে’ শদ্ধ রুপ। প্রতিঘরে ঘরে অশুদ্ধ। কেননা প্রতিঘরে শব্দটির মধ্যেই ’ঘরে ঘরে শব্দটি নিহিত আছে। তাই প্রতিঘরে ঘরে ব্যবহার করলে অর্থ দাড়াবে ঘরে ঘরে ঘরে। যা অশুদ্ধ। সুতরাং প্রতিঘরে/ঘরে ঘরে ব্যবহার করতে হবে।
২২. পূর্বাহ্ণে- ’পূর্বাহ্ণে’ শব্দের অর্থ দিনের প্রথম ভাগ বা সকাল বেলা । তাই পূর্বে বা আগে অর্থে শব্দটির ’পূবাহ্ণ ব্যবহার ভুল।
২৩. বিদেহি/বেদেহি- ’বিদেহ’ শব্দের অর্থ দেহশূন্য বা অশরীরী। বিদেহ শব্দটি বিশেষণ কিন্তু এই বিদেহ শব্দের সাথে ঈ যোগ করে পুনরায় বিশেষণ কর্ েবাহুল্যজনিত অপ্রয়োগ করা হয়েছে । সুতরাং ’বিদেহ’ শব্দটি শুদ্ধ প্রয়োগ।
২৪. আয়ত্তাধীন – আয়ত্ত শব্দের অর্থই অধীন এজন্য আয়ত্ত শব্দের সাথে অধীন যোগ করলে বাহুল্যজনিত অপ্রয়োগ হবে । সুতরাং এর শদ্ধ প্রয়োগ হবে আয়ত্ত বা অধীন।
২৫. ভাষাভাষী-ভাষা ব্যবহারকারী অর্থে ভাষী শব্দটি শুদ্ধ প্রয়োগ । কিন্তু ভাষী অর্থে ভাষাভাষী ব্যবহার করলে শব্দটির অপ্রয়োগ ঘটে।