আমরা সবাই আমাদের অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারি তার জন্মের অনেক আগেই, যদি আমরা জানি, কখন সহবাস করতে হবে, আর কখন করতে হবে না। আর এগুলো জানার আগে নিচের এই বিষয়গুলো জানা থাকা উচিত।
সেফ পিরিওড আর ডেঞ্জার পিরিওডঃ
“সেফ” মানে “নিরাপদ”। তাই, যারা বাচ্চাকাচ্চার আপদ চান না, তারা এই সময়ে সহবাস করতে পারেন। তাহলে আপনার বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ০% ।
“ডেঞ্জার” মানে “বিপদ”। এখনকার বাচ্চারা সবাই ডেঞ্জারাস! তাই, এসব ডেঞ্জারাস বাচ্চা যারা জন্ম দিতে চান, তারা এই সময়ে সহবাস করুন। তাহলে আপনার বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০% ।
এখন প্রশ্ন হল, কখন সেফ পিরিওড? আর কখনই বা ডেঞ্জার পিরিওড ?
একজন মহিলার যেদিন মাসিক শুরু হয়, সেই দিনকে ধরা হয় মাসিক চক্রের ১ম দিন। এভাবে এর পরের দিন ২য় দিন, এভাবে ক্রমান্বয়ে ৩য়, ৪র্থ ইত্যাদি দিন শেষে অধিকাংশ মহিলার ২৮ তম দিনের পরে ২৯ তম দিনে আবার মাসিক শুরু হয়। তবে এই চক্র সবার ২৮ দিনে হয় না। অনেকের ২৫ বা ৩২ দিনেও হয়। অনেকের আবার ২ – ৩ মাস পর পর হয়। যাদের ২/৩ মাস পর পর হয়, তারা অনতিবিলম্বে গাইনি ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করুন, নতুবা বাচ্চা নেবার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন। কতদিন পর পুনরায় মাসিক শুরু হচ্ছে বুঝতে হলে বিয়ের পর অন্তত ২ মাস পর্যন্ত বউকে ভালভাবে বুঝে নিন।
মাসিক চক্রের প্রথম ৪ দিন রক্তপাত হয়। পরের ১০ দিন জরায়ুর সেই ক্ষতস্থান পুনরায় মেরামত হয়। আর এই ৪ + ১০ = ১৪ দিন পরে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব বা ওভাম বা ডিম্বাণু বা ডিম্বক বের হয়, যে ডিম্বের সাথে পুরুষের শুক্রানু মিলিত হলেই কেবল বাচ্চার জন্ম হয়। তাই, আমরা দেখতে পারছি যে, মাসিক শুরু হবার পরে ১৪ তম দিনে প্রথম ডিম্ব আসে। তাই এর আগে যতই সহবাস করুন না কেন, বাচ্চা হবে না।
উপরের কথাটা পড়ে মনে হচ্ছে, এ তো সহজ! না, এত সহজ হলে তো হয়েই যেত। আরো প্যাঁচ আছে।
একটা ডিম্ব বাঁচে ২৪ ঘন্টা, যদি না কোন শুক্রানুর সংস্পর্শে আসে। আর যদি আসে, তবে তারা দুইজন মিলে ৯ মাস ১০ দিনের একটা জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা বাচ্চা তৈরি করে ! আর একটা শুক্রানু বাঁচে ১ – ৫ দিন। তবে গড়ে ৩ দিন ধরে নেয়া হয়। কারণ, যারা শক্তিশালী, তারা ৫ দিন বাঁচলেও দুর্বলরা ১ দিনেই ইন্তেকাল করে।
তাই, আপনি মাসিকের ১০ম দিনে সহবাস করে আশা করতে পারেন না, আপনার একটা সন্তান হবে। কারণ অধিকাংশ শুক্রানু মারা যাবে ডিম্ব আসার আগেই। যারা থাকবে, তারাও মরনাপন্ন অবস্থায় থাকবে, মৃত্যুর প্রহর গুনবে। তাদের এত শক্তি থাকবে না যে ডিম্বকে গিয়ে বলবে, আসেন সন্তান উৎপন্ন করি।
তবে ডিম্ব কবে নির্গত হবে, তার কোন নির্দিষ্ট সময় নাই। বেশিরভাগ মহিলার ১৪ তম দিনে বের হয়। তবে অনেকের ১১ বা ১৭ তম দিনেও বের হয়। কীভাবে বুঝবেন, আজ ডিম্ব নির্গত হল ?
• তলপেটের যেকোন এক দিকে মৃদু ব্যাথা হবে।
• স্তনে ব্যাথা হবে।
• পেটে গ্যাস আছে এমন মনে হবে। অস্বাভাবিকভাবে ফুলেও থাকতে পারে।
• সেই মহিলার সহবাস করার প্রচন্ড ইচ্ছা হবে।
• ঘ্রান, স্বাদ ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
যাদের প্রতি মাসে একই পরিমাণ দিনের পরে মাসিক হয়, তারা একটু খেয়াল রাখলেই জানতে পারবেন, আপনার ডিম্ব মাসিকের কততম দিনে নির্গত হয়। তাই বিয়ের পর বউকে ভালভাবে বুঝে নেয়ার কথা বলছি আবার।
আর যারা জানেন না বুঝতে পারছেন না, তাদের জন্য বৈজ্ঞানিকরা অনেক মহিলার উপরে গবেষণা করে একটা মোটামুটি নিরাপদ সময় বেঁধে দিয়েছেন। তা হলঃ সেফ পিরিওড (সন্তান যেন না হয়) = মাসিকের ১ – ৮ তম দিন আর ২১ – ২৮ তম দিন। এবং ডেঞ্জার পিরিওড (সন্তান হবে) = ৯ থেকে ২০ তম দিন।
এখন তাহলে আপনি এটুকু বুঝতে পারছেন, কখন সহবাস করলে সন্তান হবে আর কখন করলে হবে না। তবে আপনি তো এটা জানার জন্য এই পোস্ট পড়ছেন না। আপনি জানতে চান, কখন করলে ছেলে হবে আর কখন করলে মেয়ে হবে। তাহলে এবার দেখি, এর উত্তর কি।
আমরা জানি, সেক্স ক্রোমোজম ২ প্রকার। X আর Y. যারা ক্লাস নাইন পাশ করেছেন, তারা এটা ভালো করেই জানেন। আর যারা তা করেন নাই, তারাও এখন থেকেই জেনে নিন। সকল পুরুষের থাকে একটা করে এক্স আর একটা করে ওয়াই। অর্থাৎ, তাদের শুক্রানু/স্পার্ম হয় এক্স স্পার্ম অথবা ওয়াই স্পার্ম। আর সকল মহিলার ডিম্ব শুধুমাত্র এক্স ডিম্ব। সেখানে কোন ওয়াই নাই।
আর আমরা এটাও জানি, ছেলে (XY) হতে হলে ওয়াই স্পার্ম লাগবে। এক্স স্পার্ম যদি ডিম্বের সাথে মিলিত হয়, তবে হবে XX (মেয়ে)। আমরা অনেকেই হয়ত জানি না, ওয়াই স্পার্ম দ্রুতগামী আর এক্স স্পার্ম ধীরগামী। অর্থাৎ, যৌনাঙ্গে প্রবেশের পরে সব ওয়াই স্পার্ম ডিম্বের দিকে দৌড় দেয়। এক্স স্পার্মগুলো আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে আসে। ওয়াই স্পার্ম এর জীবনকাল মাত্র ১ দিন, অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি করে ১ দিনেই হার্ট এটাক করে! আর এক্স স্পার্ম এর ৩-৫ দিন, আস্তে আস্তে হাঁটে, তাই অনেক সময় বাঁচে।
আবার উপরে এটাও লিখেছি যে ডিম্বের জীবনকালও মাত্র ১ দিন। অর্থাৎ, ওয়াই স্পার্ম আর এক্স ডিম্বের সেই ১ দিন ১ দিন সময়কাল যদি ওভারল্যাপ করে বা একই সময়ে হয়, তবেই তাদের মিলন হলে সন্তান হবে ছেলে।
তাহলে দেখুন, ছেলে হওয়া কত কঠিন।
উদাহরণঃ ধরুন, মহিলার ডিম্ব নির্গত হল ১৪ তম দিনে। আর সঙ্গম করল ১৩ তম দিনে। তাহলে স্পার্ম তার জীবনকালের মধ্যেই ডিম্বকে পেয়ে যাবে। তখন ছেলে হবে। আর যদি সহবাস করেন ১২ তম দিনে, তবে ১৩ তম দিনে সব ওয়াই স্পার্ম ইন্তেকাল করবে। বেঁচে থাকবে সব এক্স স্পার্ম। কারণ, তারা তো ৩-৫ দিন বাঁচে। তারা যখন ডিম্বকে দেখবে, গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, আর জন্ম দিবে একটা ফুটফুটে কন্যাসন্তান।
তাহলে উপরের এই আলোচনায় আমরা কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। তা হলঃ
ডিম্ব এর জীবনকালঃ ১ দিন
এক্স শুক্রানু এর জীবনকালঃ ৩ – ৫ দিন
ওয়াই শুক্রানু এর জীবনকালঃ ১ দিন
সেফ পিরিওডঃ ১ – ৮ তম দিন ও ২১ – ২৮ তম দিন
ডেঞ্জার পিরিওডঃ ৯ – ২০ তম দিন
ছেলে সন্তান চাইলে সহবাস করতে হবেঃ ১৩ ও ১৪ তম দিনে।
মেয়ে সন্তান চাইলে সহবাস করতে হবেঃ ১১ ও ১২ তম দিনে।
এবার আসুন খাবার এর সাথে ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর মিলনের প্রভাবঃ
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জেনেছেন যে, জরায়ুর ভেতরে ক্ষারীয় পরিবেশ বজায় থাকলে শুক্রাণুর Y ক্রোমোসোম ডিম্বাণুর X ক্রোমোসোম এর সাথে মিলিত হয়ে ছেলে সন্তান জন্ম হয়। আবার জরায়ুর ভেতরে অম্লীয় বা এসিডিক পরিবেশ বজায় থাকলে শুক্রাণুর X ক্রোমোসোম ডিম্বাণুর X ক্রোমোসোম এর সাথে মিলিত হয়ে মেয়ে সন্তান জন্ম হয় । তাই ছেলে সন্তান চাইলে সহবাসের সেই দিনগুলিতে ক্ষারযুক্ত খাবার দাবার ও ক্ষারীয় পরিবেশে থাকা উচিত। আবার মেয়ে সন্তান চাইলে সহবাসের সেই দিনগুলিতে অম্লযুক্ত খাবার দাবার ও অম্লীয় পরিবেশে থাকা উচিত।
এবার আসুন সহবাসের উপায়ের সাথে ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর মিলনের প্রভাবঃ
বিজ্ঞানিরা বলেন যেহেতু শুক্রাণুর গতি বেশি কিন্তু আয়ু কম, তাই ছেলে সন্তান চাইলে সহবাসের সময় বউয়ের অর্গাজম আগে হওয়া উচিত যেন ডিম্বকের সাথে শুক্রাণু দ্রুত মিলিত হতে পারে। আবার, মেয়ে সন্তান চাইলে সহবাসের সময় স্বামীর অর্গাজম আগে হওয়া উচিত যেন ডিম্বকের সাথে শুক্রাণু দেরিতে মিলিত হতে পারে।
সবশেষে বলতে চাই – উপরের নিয়মগুলি ফলো করলে আপনি পছন্দের লিঙ্গের সন্তান পাবেন ইনশাল্লাহ।
তথ্য কৃতজ্ঞতা –
লেখকঃ ডাঃ সুজন পাল
এমবিবিএস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।