Home / blog / এই পৃথিবীটা সবার জন্য সুখকর হয় না! – সুশান্ত পালের লিখা পড়ুন

এই পৃথিবীটা সবার জন্য সুখকর হয় না! – সুশান্ত পালের লিখা পড়ুন

এই পৃথিবীটা সবার জন্য সুখকর হয় না!
সবাই ভাল থাকতে পারে না!
সবাই ভাল থাকলে স্রষ্টার একটু প্রবলেম হয় বোধ হয়!
আমি ভাল, অথচ আমি কতো খারাপ আছি। অমুক খারাপ, তমুক খারাপ, অথচ ওরা কতো ভাল আছে!
এসবই তো মাথায় আসে, না?

সত্যিই কি আমরা কখনো সুখে থাকি না? সুখ আর দুঃখ, দুইই তো জীবনে স্থায়ী সত্য। একটার পর আরেকটা আসবেই আসবে। দুঃখ নিয়ে দুঃখের শেষ নেই, অথচ সুখ নিয়ে অভিযোগ কিংবা সংশয় কেউ কি কখনো প্রকাশ করে? কেন করে না? সুখ যদি হাসিমুখে নেবো, তবে দুঃখে কেন ধৈর্যহারা হবো? ভালোথাকার শুকরিয়া নেই, অথচ খারাপথাকার ফরিয়াদ অসংখ্য। কেন? অনর্জিত সুখে কোনো আপত্তি নেই, অথচ অর্জিত দুঃখ মানতে নারাজ! মুহূর্তের কষ্টে বিহ্বল হয়ে, আমার কপালে কেবলই দুঃখ—-কী সহজেই বলে ফেলি! অসীম সুখে আত্মহারা হয়ে, আমার কপালে কেবল সুখ আর সুখ—কখনো বলেছি কি? কেন বলিনি? এটা কি নিজের জীবনের দুটি সত্যের একটির প্রতি কপট দৃষ্টিভঙ্গির নির্লজ্জ প্রদর্শন নয়?

আসুক কষ্ট, সুখ সামনেই। আসুক যন্ত্রণা, আনন্দ অপেক্ষমাণ। নিশ্চয়ই কষ্টের পর সুখ আসবে। জীবনে সুখ আসে কষ্টের রূপ ধরে, হাসি আসে কান্নার মুখোশ পরে। সবসময়ই, বর্তমানের সাময়িক যন্ত্রণা ভবিষ্যতের স্থায়ী সুখ রচনা করে। বর্তমানের দুঃখ যতো তীব্র, ভবিষ্যতের সুখ ততো নিশ্চিত। আপনাকে বর্তমানের অপমান যতো কষ্ট দিচ্ছে, ভবিষ্যতের সম্মান ততোধিক আনন্দ সুদেআসলে ফেরত দেবে। এখন মাথা নিচু করে মুখবুজে সহ্য করুন। যেদিন আনন্দের দিন ঝলমল করবে, জীবনে সৌভাগ্য আসবে, সেদিন মাথাউঁচু করে সম্মানের সাথে বাঁচবেন। দেখবেন, সেদিন নিজের জীবনটার দিকে তাকিয়ে অনেক শান্তি পাচ্ছেন। স্রষ্টা আপনার অন্ধকারের দিনগুলি নিয়ে আলোর গান লিখবেন। নিশ্চয়ই লিখবেন।

খুব বেশি খারাপ অবস্থায় আছেন? সত্যিই? একটু ভাবুন তো, আপনি যে অবস্থায় আছেন, অনেকেই সে অবস্থায় থাকার স্বপ্নে বিভোর। আপনার দুঃস্বপ্নের আঁধার অনেকেরই স্বপ্নের আলো। হ্যাঁ, আপনি অনেকেরই স্বপ্নের জীবনে বেঁচে আছেন। আপনার খাবার পছন্দ হয় না বলে খান না, অনেকেই খাবার পায় না বলে খায় না। ভেবে দেখেছেন কখনো? স্রষ্টা কিন্তু আপনাকে ওদের দলেও রাখতে পারতেন। রাখেন তো নি! স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিন। উনি নিশ্চয়ই আপনার প্রতি দয়াশীল। আমরা ঘরহীনদের ঘরে থাকি, নিরন্নদের খাবার খাই, অকালমৃতদের আয়ু চুরি করে বাঁচি, বস্ত্রহীনদের পোশাক পরি, নিরক্ষরদের অক্ষর ছিনিয়ে বাহাদুরি করি, রোগগ্রস্তদের সুস্থতা ভোগ করি। কার অনুগ্রহে? এরপরও বলবো, আমরা ভীষণ খারাপ আছি?

স্রষ্টা দুঃখ দিয়েছেন, বিপদ দিয়েছেন। কতোটা? এসব না দিয়ে উনি মৃত্যুও তো দিতে পারতেন। এই পৃথিবীর জন্য কেউই এতোটা অপরিহার্য নয় যে তাকে মৃত্যু দেয়া যাবে না। এমনও তো হতে পারে, উনি যে আমাদের মৃত্যু না দিয়ে অসীম কষ্ট দিচ্ছেন, সেটাই আমাদের জন্য পুরস্কার। বাঁচতে হলে সহ্য করতে হয়। ধৈর্যের চাইতে বড় শক্তি আর হয় না। স্রষ্টা খুব পরীক্ষা নেন! বর্তমানের পরীক্ষা যতো কঠোর, ভবিষ্যতের সুখ ততো অপার। স্রষ্টার পরীক্ষা ও পুরস্কার, দুইই অসীম রহস্যময়। সে রহস্য বোঝার ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয়নি। আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতায় মাত্র দুটো কাজ করতে পারি। এক। ভবিষ্যতের সৌভাগ্যের উপর অগাধ বিশ্বাস রাখা। দুই। বর্তমানের দুর্ভাগ্যের প্রতি অসীম সহনশীলতা দেখানো।

স্রষ্টা মানুষ বুঝে সৌভাগ্য দান করেন।
স্রষ্টা মানুষ বুঝে সৌভাগ্য কেড়ে নেন।
আগে সৌভাগ্য উপভোগ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, এরপর সৌভাগ্যের আশা করুন। আপনার বর্তমানের কষ্ট কিছুতেই বৃথা যাবে না। আজকের নির্ঘুম রাতগুলির দাম মৃত্যুর আগেই প্রকৃতি আপনাকে কড়ায়গণ্ডায় মিটিয়ে দেবে। নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস রাখুন, আপনার জীবনে সুন্দর দিন আসার আগে কোনোভাবেই আপনার প্রয়োজনীয় শক্তি ফুরিয়ে যাবে না। বর্তমান শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। আপনার চেষ্টা কিংবা আপনার ফাঁকিবাজি—দুইয়ের হিসাবই স্রষ্টার খাতায় লেখা হয়ে যাচ্ছে। এর পুরস্কার কিংবা তিরস্কার আপনার অবশ্যপ্রাপ্য, এবং আপনি সেটা জীবদ্দশায়ই পেয়ে যাবেন। অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা যতোটা কষ্ট দেয়, অপেক্ষার ফল তার চাইতে বহুগুণে স্বস্তি দেয়।

(একটা সত্য ঘটনা শেয়ার করি। এই লেখাটি আমাকে দুইবার লিখতে হয়েছে। প্রথমবার আমি লিখি মোবাইলে। লেখা শেষ করে পোস্ট করবো, ঠিক সেই সময়ই একটা ফোন এল। কথা শেষ করেই দেখি, লেখাটি আর নেই। কীভাবে যেন টাচ্‌ লেগে লেখাটি হারিয়ে গেছে। খুব মনখারাপ হল। হোক, লেখাটি ক্ষুদ্র তুচ্ছ নগণ্য, তবু তো আমার কষ্টের লেখা! আমার সন্তান তো আমার চোখে সবচাইতে সুন্দর। মনে হতে লাগল, লেখাটি আর লিখতে পারব না। একই ভাবনা আরো একবার মাথায় আনার কষ্ট সত্যিই অনেক। কিছুটা হাল ছেড়ে দিলাম। আবার ওদিকে আমার ভাবনা আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছেটাও মনের ভেতরে ক্রমাগত ধাক্কা দিতে লাগল। কী আর করা! অগত্যা, ল্যাপটপ খুলে আবারো লেখাটি লিখতে শুরু করলাম। শেষ করে দেখলাম, মোবাইলে যা লিখেছিলাম, তার প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ লিখে ফেলেছি। আবার নতুন লেখাটি হারিয়েযাওয়া লেখার চাইতে অনেক ভাল। এর মানে কী দাঁড়াল? আমি রাগ করি, অভিমান করি, আর যা-ই করি না কেন, স্রষ্টা চাচ্ছিলেন, আমি যাতে ওই লেখাটি আরো সময় দিয়ে আরো সুন্দর করে লিখি। তাই তিনি দয়ালু নিষ্ঠুরতার সাথে আমার অপেক্ষাকৃত কম সুন্দর সৃষ্টিটি ধ্বংস করে দিলেন! সুন্দর হারিয়ে যায় আরো সুন্দর কিছুকে জায়গা করে দেয়ার জন্যই। কার সাধ্য স্রষ্টার এই ইশারাটুকু ধরতে পারে?)

Check More Lessons

বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করতে হলে – সুশান্ত পালের পরামর্শ

যারা বিসিএস পরীক্ষা দেবেন, প্রস্তুতিপর্বে তাদের প্রথমেই যেখানে পরিবর্তনটা আনতে হবে সেটা হলো মাইন্ডসেটে। পরীক্ষার …

error: Please only share in social medias to support us. Copy/Paste/Right Click is not allowed!