BCS Examination – বিসিএস পরীক্ষা

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিকৌশল (‘প্রথম আলো’ ভার্সন) – সুশান্ত পাল

(ডিসক্লেইমার: ‘প্রথম আলো’র জন্য লেখা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতির উপর আমার পুরনো কিছু লেখাকে এ নোটে একত্র করে দিলাম। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে লেখাগুলি তৈরি করেছিলাম ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য। বর্তমানে সিলেবাসে ও প্রশ্নের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ফলে এ নোটের টেকনিকগুলি ৩৮তম ও তার পরবর্তী বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য কাজে নাও লাগতে পারে—এটা মাথায় রেখে নোটটা পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। গুড লাক!)
দুই ধরনের কাজে কখনও ক্লান্তি আসে না: এক। যে কাজটি করতে আপনি ভালোবাসেন। দুই। যে কাজটি না করলে আপনার অস্তিত্বই অর্থহীন হয়ে পড়বে।
চাকরির জন্য পড়াশোনা করাটাকে যদি আমি দ্বিতীয় ধরনের কাজের মধ্যে ফেলে দিই, তবে বলব, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য এখনও হাতে যে সময়টা আছে, সে সময়ে যদি আপনি দৈনিক গড়ে ১৫ ঘণ্টা ঠিকমতো ফাঁকি না দিয়ে পড়েন, তবে আপনি প্রিলি পাস করবেনই। আপনার প্রস্তুতি শূন্যের কোঠায়, এটা ধরে নিয়ে আমি আপনার জন্য প্রথম আলো’তে লিখছি।
এ সময়টাতে নিজের উপর সর্বোচ্চ যতটুকু প্রেশার দেয়া যায়, ততটুকু প্রেশার দিয়ে পড়াশোনা করুন। শত-শত ইংরেজির প্রশ্ন সলভ করুন যেগুলি বিভিন্ন চাকরি কিংবা ভার্সিটির নানান ভর্তি পরীক্ষায় এসেছে। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেটের বিভিন্ন গ্রামার ফোরাম, ডিকশনারি, গ্রামার এবং ইউসেজের বই, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানের গ্রামার বই দেখে শিওর হয়ে সলভ করুন। গাইডের উত্তরকে সবসময়ই বিশ্বাস করবেন না। কারণ, গাইডলেখকদের জানার দৌড় খুব বেশি নয়। একটা প্রশ্নকে চারটা প্রশ্নের সূতিকাগার বানান। এর মানে হল, যেটা উত্তর, সেটা ছাড়াও বাকি তিনটা অপশন নিয়েও পড়াশোনা করে ফেলুন।
নিচের কোন বাক্যটি ভুল?
All the faith he had had had had no effect on the outcome of his life.
One morning I shot an elephant in my pajamas. How he got into my pajamas I’ll never know.
The complex houses married and single soldiers and their families.
The man the professor the student has studies Rome.
The rat the cat the dog chased killed ate the malt.
দেখলে মনে হয় না, সবক’টাই ভুল? মজার ব্যাপার হল, কোনওটিই ভুল নয়। এটা বুঝতে গ্রামারের সাথে কমনসেন্সও লাগে। আর কমনসেন্স ভাল করার জন্য অনেক অনেক বেশি প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই।
বিসিএস প্রিলির ইংরেজির জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছি :
1. ফেসবুকে একটু বড়-বড় স্ট্যাটাস, কমেন্ট লিখুন আর চ্যাটিং করুন সহজ ইংরেজিতে। প্রতিদিন দুএকটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয়কে অনুবাদ করুন। কাজটি করাটা কষ্টকর, কিন্তু এটি ট্রান্সলেশন আর ভোকাবুলারিতে খুবই কাজে দেবে। সাথে বিভিন্ন ইস্যুর উপর আর্টিকেল আর সম্পাদকের নিকট পত্র অর্থ বুঝে এবং কাগজে লিখে-লিখে সময় নিয়ে পড়ুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ/ ইএমবিএ ভর্তি পরীক্ষার আগের বছরের প্রশ্নগুলি থেকে সিনোনিম-অ্যান্টোনিম পার্টটা সলভ করলে কাজে আসবে।
2. কয়েকটি গাইড বই এবং জব সল্যুশন থেকে ল্যাঙ্গুয়েজ পার্টের গ্রামার এবং ইউসেজের প্রচুর প্র্যাকটিস করুন লিখে-লিখে।
3. লিটারেচার পার্টে দুএকটি প্রশ্ন আসে, যেগুলির উত্তর যাঁরা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স, তাঁরাও পারবেন না। নেগেটিভ মার্কিং হয় এমন কম্পিটিটিভ পরীক্ষার নিয়মই হল, সবক’টার উত্তর করা যাবে না। আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ গাইড বই আর সাথে ইন্টারনেটে ইংলিশ লিটারেচার বেসিকস্ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে কাজে আসবে। বিভিন্ন কমন লিটারেরি টার্মস্ সম্পর্কে পড়াশোনা করে নিন।
4. গ্রামারের প্রশ্নগুলি পড়ার সময় যেসব প্রশ্নের উত্তরে কনফিউশন থাকবে, সেসব প্রশ্নের উত্তরের কনফিউশন দূর করার দায়িত্বটা ডিকশনারিকে দিয়ে দিন। যেমন, Die শব্দটির পর বিভিন্ন Preposition বসে। আপনি ডিকশনারির Die এন্ট্রিটাতে গিয়ে যে উদাহরণগুলি দেয়া আছে, সেগুলি দেখে কোন ক্ষেত্রে কোনটি বসে, এটি লিখে-লিখে শিখলে ভুলে যাওয়ার কথা না।
5. Analogyতে যে Word Pair দেয়া থাকে, সে দুটি দিয়ে মনে-মনে একটা সহজ বাংলা বাক্য গঠন করুন। অপশনগুলির মধ্যে যে জোড়া সে বাক্যটির সাথে পুরোপুরি মিলে যায়, সেটিই উত্তর।
6. ইংরেজির ক্ষেত্রে আগে গ্রামার শিখে প্র্যাকটিস করতে যাবেন না, প্র্যাকটিস করতে-করতেই গ্রামার শিখুন।
7. গ্রামার আর ল্যাংগুয়েজ সেন্স ডেভেলাপ করতে সহজ কিছু ইংরেজি বইও পড়তে পারেন। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে হ্যারি পটার সিরিজের বইগুলির ১৫ পৃষ্ঠা করে পড়ে দেখেবন নাকি কী হয়!
8. ৫টি করে নতুন শব্দ শিখে প্রতিটি দিয়ে ৩টা করে বাক্য লিখুন। প্রতিদিন কী কী করলেন, দিনের শেষে সহজ ইংরেজিতে অন্তত ৩ পৃষ্ঠা লিখে ফেলুন।
ইংরেজিতে ভাল করতে হলে একজন ‘নারি’র প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে; সে ‘নারি’ ডিকশনারি। ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্জামস্, অ্যা প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, ব্যারনস্ গ্রামার, অ্যালানের লিভিং ইংলিশ স্ট্রাকচার, মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, ইস্টউডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামার, ফিটিকাইডসের কমন মিস্টেকস ইন ইংলিশ সহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বইয়ের পেছনের ইনডেক্স দেখে কষ্ট করে উল্টে-উল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যেস করুন, অনেক কাজে আসবে। ইংরেজি শিখতে হয় লিখে-লিখে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করতে ইংরেজিতে খুব ভাল হওয়ার দরকার নেই, তবে ভয় না পেয়ে বেশি পরিশ্রম করে ইংরেজি শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। ভোকাবুলারির জন্য ম্যাক ক্যারথি এবং ও’ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ (সবগুলো খণ্ড), নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজি সহ দুএকটি দেশীয় বইও দেখতে পারেন।
লেখাটি গত ১৩/১১/২০১৫ তারিখ শুক্রবার প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটা নিচে দিলাম :
আজকে কথা বলব বাংলা, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আর নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন নিয়ে।
বিসিএস প্রিলির বাংলার প্রশ্নগুলি দেখলে মনে হবে, পরীক্ষায় যা যা এসেছে, সেগুলি ছাড়া বাংলার আর সবকিছুই আপনি পারেন। বাংলায় ‘চেনা-চেনা লাগে, তবু অচেনা’টাইপের প্রশ্ন বেশি আসে।
৯ম-১০ম, ১১শ-১২শ শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বইয়ের লেখক পরিচিতি অংশটি দেখে নিন। লাল-নীল দীপাবলি, জিজ্ঞাসা, মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, আগের বিসিএস রিটেনের বাংলা সাহিত্যের প্রশ্নাবলী ভালভাবে পড়ে নিন। এ বইগুলি পড়ার আগে গাইড বই আর জব সল্যুশন থেকে পুরোনো প্রশ্নগুলি যত বেশি সম্ভব, দাগিয়ে-দাগিয়ে পড়ে ফেলুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় বেশি আসে। মুখস্থ নয়, বারবার পড়ুন, এতে মনে থাকবে বেশি। সাহিত্যের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, হায়াৎ মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ থেকে সিলেবাসের টপিক ধরে-ধরে অধ্যায়গুলি পড়ে নিন। ব্যাকরণের একেবারে কঠিন কাটখোট্টা প্রশ্নগুলি কষ্ট করে মনে রাখার দরকার নেই। সবকিছু পারার পরীক্ষা বিসিএস নয়। কঠিন প্রশ্নে কোন বাড়তি মার্কস থাকে না, তাই ১টা কঠিন প্রশ্ন শেখার জন্য অনেকবেশি সময় না দিয়ে ওই একই সময়ে ১০টা সহজ প্রশ্ন শিখুন।
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অংশের জন্য ৯ম-১০ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইটার সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলি খুব ভালভাবে পড়ে ফেলুন, সাথে বাজারের ৩-৪টা গাইড বই।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশটির জন্য সবচাইতে বেশি দরকার কমনসেন্স। ৩-৪টা গাইড বইয়ের পাশাপাশি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘নাগরিকদের জানা ভালো’ বইটিও দেখতে পারেন। এ অংশের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া মানেই কিছু নেগেটিভ মার্কসকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা।
কিছু সাধারণ টিপস দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করছি।
1. আগামী ৪০ দিনকে ৬টা বিষয় পড়ার জন্য কীভাবে সাজানো যায়, ৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে সে পরিকল্পনা করে ফেলুন। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করুন। আগের দিনের কাজ বাকি থাকলে সেদিনের কাজ না কমিয়ে বরং ঘুমানোর সময়টাকে কমিয়ে কাজ করার সময়টা বাড়িয়ে দিন।
2. পড়তে বসার আগে কাগজে লিখে ফেলুন, সেদিন কী কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন। অলওয়েজ থিঙ্ক অন পেপার!
3. বাসার বাইরে সময় না দিয়ে গড়ে ১৫ ঘণ্টা বাসায় পড়াশোনা করুন। গাইডবই কিনে প্রতিদিন ২-৩টা মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেই নিজেকে যাচাই করুন।
4. এই সময়টাতে যারা বেশি পারে, ওদের সাথে কম মিশুন। যারা কোনো একটা বিষয়ে অনেকবেশি ভাল, তাদের সাথে কখনওই কম্পিটিশনে যাবেন না। প্রতিদিনই শুধু নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
5. ভাল প্রস্তুতি নেয়ার চাইতে ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি দরকার। ভাল প্রস্তুতি নিলেই যেমন সবাই প্রিলি পাস করতে পারে না, ঠিক তেমনি খারাপ প্রস্তুতি নিলেই সবাই প্রিলি ফেল করতে পারে না। সবসময়ই রেজাল্ট হয় রেজাল্টের পর।
6. ‘প্রথমবারের বিসিএস’ বলে কোনকিছু মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করুন।
7. অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পর আপনি অনেক অতিপণ্ডিতকে ফেল করতে দেখবেন। কে কী পারে, সেটা নিয়ে না ভেবে আপনি কী পারেন সেটা নিয়ে ভাবুন।
8. পড়তে পড়তে ক্লান্তি এলে সহজ কোনো পড়া, যেটা আপনি সবচাইতে ভাল পারেন, সেটি খুব দ্রুত পড়ুন; ক্লান্তি চলে যাবে।
9. চ্যাটিং, ডেটিং, ফেসবুকিং—-এসবের সময় বাঁচিয়ে প্রার্থনা করুন! আগে চাকরি, পরে ওসব।
10. পড়তে ইচ্ছে করছে না আর? চোখদুটো বন্ধ করে রাখুন ৫ মিনিটের জন্য। কল্পনায় আনুন, চাকরিটা পেয়ে গেলে আপনি আপনার কাছের মানুষগুলিকে নিয়ে কীভাবে বদলে যাবেন! বাজি ধরে বলতে পারি, পড়ায় গতি এসে যাবে আবারও!
আজ আর নয়। আবারও কথা হবে।
লেখাটি গত ২০/১১/২০১৫ তারিখ শুক্রবার প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটা নিচে দিলাম :
আমি যখন বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন সবচাইতে কম পারতাম (প্রায় পারতাম না বললেই চলে) সাধারণ জ্ঞান। জানুয়ারির ৫ তারিখ পরীক্ষা ধরে নিয়ে প্রিলির জন্য হাতে মাত্র ১ মাস থাকলে আমি যা যা করতাম বলে আপাত ভাবনায় মনে হয়, তা তা লিখছি :
1. পুরো পেপার না পড়ে শুধু দরকারি হেডলাইনগুলিই পড়ে নিতাম। এ সময়ে কলাম আর আর্টিকেল পড়ার অতো সময় নেই।
2. বিভিন্ন গাইড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ সেট মডেল টেস্ট দিতাম।
3. জব সল্যুশন এবং প্রিলির ডাইজেস্ট থেকে বারবার আলোচনাসহ প্রশ্নোত্তরগুলি দেখতাম।
4. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজসহ এই ধরনের বিভিন্ন বইয়ের প্রিলির জন্য স্পেশাল সংখ্যাগুলি কিনে পড়ে ফেলতাম।
5. আমার যে বন্ধুরা সাধারণ জ্ঞানে আমার চাইতে ভাল, তাদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলা অবশ্যই বন্ধ করে দিতাম।
6. কী কী পারি না, সেটা নিয়ে মাথাখারাপ না করে, অন্যান্য বিষয়গুলি ভাল করে দেখে নিতাম। বিসিএস পরীক্ষা সাধারণ জ্ঞানে পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
7. প্রতিদিন গড়ে ১৫ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করলে ৩০ দিনের মধ্যে সাধারণ জ্ঞানের জন্য সময় দেয়া যায় খুব বেশি হলে ৭০ ঘণ্টা। আর এত কম সময়ে রেফারেন্স বই না পড়াটাই বেটার।
8. পড়ার সময় শুধু এটা মাথায় থাকত : যা পড়ছি, তা পরীক্ষার জন্য লাগবে কী লাগবে না। নিশ্চয়ই এখন জ্ঞানার্জনের সময় নয়।
9. যত বেশি বাদ দিয়ে পড়া যায়, ততই ভাল। এতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি একাধিক পড়া যাবে।
10. ধীরে-ধীরে পড়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিয়ে পড়ার চাইতে খুব দ্রুত বেশিরভাগ পড়ে নেয়াটা ভাল। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
11. ৪টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ৩টা গাইড বইয়ের প্রশ্নোত্তরগুলি পড়ে ফেলাটা অনেকবেশি কাজের।
12. এখন বিসিএস প্রিলির সিলেবাস ধরে সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় নেই। যত বেশি সংখ্যক, তত বেশি প্রশ্নোত্তর প্রশ্নব্যাংক, গাইডবই, ডাইজেস্ট থেকে পড়ে নিতাম।
13. বারবার পড়লেও মনে থাকে না, এরকম অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন আছে। সেগুলি মনে রাখার চেষ্টা না করে ওই একইসময়ে ৫টা কঠিন প্রশ্নের বদলে ২০টা সহজ প্রশ্ন মাথায় রাখার চেষ্টা করতাম। অহেতুক এবং অনর্থক জেদ পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট করে।
14. সাল, তারিখ, সংখ্যা, চুক্তি, নানান তত্ত্ব, সংস্থা, বৈঠক এসব বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করতাম।
15. সাধারণ জ্ঞানের অনেক আগের পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন সময়ের সাথে সাথে প্রাঙ্গিকতা হারিয়েছে। সেগুলি বাদ দিতাম।
16. গুগলে ইংরেজিতে কিংবা অভ্রতে বাংলায় টাইপ করে করে অনেক প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এতে অনেক সময় বাঁচে।
17. সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানান আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদরদপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটিতে নিয়মিত চোখ বুলাতাম।
18. ম্যাপ মুখস্থ করা, ছড়া-গান-কবিতা-গল্প দিয়ে নানান ফালতু তথ্য মনে রাখা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী আর মুদ্রার নাম মুখস্থ করা, জোর করে হলেও সংবিধান কণ্ঠস্থ করা, অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে রাজ্যের সংখ্যাযুক্ত জিনিসপত্র মাথায় বোঝাই করাসহ বোকা বোকা আত্মতৃপ্তিদায়ক পড়াশোনা করার সময় এখন নয়। “ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য!”
19. চমকে যাওয়ার প্রশ্নে চমকে যাওয়ার অভ্যেস থেকে সরে আসতাম। সবাই যা পড়ছে, আমাকেও তা পড়তে হবে—এই ধারণা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষতিকর।
20. বাইরে ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি ভাল হয়, কিন্তু পড়াশোনা কম হয়। এই ৩০ দিনে বাসায় নিজের মতো করে না পড়ে যত ঘণ্টা বাইরে ঘোরা হবে, নিজের কফিনে ততটা পেরেক মারা হয়ে যাবে—এটা খুব ভালভাবে বুঝতে পারবেন রেজাল্ট বের হওয়ার পর!
আমি বিশ্বাস করি, খেলার রেজাল্ট হয় সবসময়ই খেলাশেষে; খেলার আগেও নয়, মাঝেও নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত রেজাল্ট বের না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কারোর চাইতেই কোনো অংশে কম নই। প্রস্তুতি ভাল হলেই যেমন পাস করা যায় না, তেমনি প্রস্তুতি খারাপ হলেই ফেল করা যায় না। ভাল প্রস্তুতি নেয়া অপেক্ষা ভাল পরীক্ষা দেয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই কয়দিনে আপনি পড়াশোনা করার সময়ে আপনার সর্বোচ্চ পরিশ্রমটা দিয়ে বুঝেশুনে প্রস্তুতি নিলে আপনি প্রিলিতে অবশ্যই পাস করে যাবেন। আগে কী পড়েননি, সেটা নয়; বরং এই ১ মাসে কী পড়বেন, সেটাই আপনার প্রিলিতে পাস কিংবা ফেল নির্ধারণ করে দেবে। সামনের ১ মাসের ইবাদতে আপনার জীবনের হিসেব লেখা হয়ে যাবে! গুড লাক!
লেখাটি গত ০৪/১২/২০১৫ তারিখ শুক্রবার প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটা নিচে দিলাম :
‘ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স’ দিয়ে, অর্থাৎ সিভিল সার্ভিসে জয়েন করার প্রচণ্ড ইচ্ছে আর আবেগের সাথে একটু বুদ্ধিশুদ্ধি যোগ করে সামনের কয়টা দিনকে খুবই ভালভাবে কাজে লাগান। পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেন, খুশি হয়ে গেলেন অনেককিছু পড়ে ফেললেন ভেবে, কিন্তু যা যা দরকার তা তা পড়লেন না, এর চাইতে বাসায় ১২ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়ে বাকি সময়টা বিশ্রাম নেয়াও অনেক ভালো। আমি মনে করি, সাকসেস ইজ অ্যা সেলফিশ গেম! ‘টুগেদার উই বিল্ড আওয়ার ড্রিমস’ এটা জীবনের সব ক্ষেত্রে খাটে না।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে :
মাথায় রাখুন, আপনার বিজ্ঞানের বেসিক আপনাকে তেমন কোনও বাড়তি সুবিধা দেবে না।
যত বেশি সংখ্যক প্রশ্ন পড়বেন, ততই লাভ।
অন্তত ৩টা গাইড বইয়ের/ ডাইজেস্টের সব প্রশ্ন পড়ে ফেলুন।
এ সময়ে রেফারেন্স বই না পড়লেই বরং ভাল।
বুঝে পড়ার কিছু নেই, বারবার পড়ুন। একটা বিষয় একবার বেশি রিভিশন দেয়া মানেই অন্তত ৫ মার্কস বাড়ানো।
পেপারের কম্পিউটার ও প্রযুক্তি অংশটাতে নিয়মিত চোখ রাখুন।
ম্যাথস্ নিয়ে :
প্র্যাকটিস করার সময় কোন বাড়তি কাগজে নয়, গাইডে প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটিতে সলভ করুন।
কিছু প্রশ্ন, অংকটি করে নয়, বরং যে ৪টা অপশন দেয়া থাকে, সেগুলি থেকে ২টি বাদ দিয়ে বাকি ২টা থেকে ভাবলে অনেক কম সময়ে সলভ করতে পারবেন।
শর্টকাট ফর্মুলা মনে রাখতে বেশি বেশি সমজাতীয় ম্যাথস প্র্যাকটিস করুন।
ম্যাথস প্র্যাকটিস করবেন একটানা। ‘কাগজকলমে নয়, মাথায়’—এই নীতিটি যত বেশি মানবেন, ততই লাভ!
আপনি প্রিলিতে কোন অংশে কত সময় দেবেন, এটা আগে থেকে ঠিক করে নেবেন। মডেল টেস্ট দেয়ার সময় হাতের ঘড়ি দেখে মিলিয়ে নিন, আপনি কত সময়ের মধ্যে সব ম্যাথস সলভ করতে পারেন। সময়টি ধীরে-ধীরে কমান।
কোন টেক্সট বই নয়, বরং অন্তত ২টা ভাল গাইড বইয়ের সব ম্যাথস শর্টকাটে সলভ করে ফেলুন।
মানসিক দক্ষতা নিয়ে :
দুএকটি কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দিয়ে আসবেন।
প্রস্তুতি নয়, মাথা ঠাণ্ডা রাখা আর দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতার উপর এ অংশের মার্কস নির্ভরশীল।
৪ সেট গাইড বই আর সম্ভব হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার অ্যানালাইটিক্যাল পার্টের প্রশ্নগুলি সলভ করে ফেলুন।
প্রতিদিনই মডেল টেস্ট দেবেন—-গাইড থেকে আর সময় পেলে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান সাইট থেকে।
প্রশ্ন সহজ হবে, আর আপনি বোকামি করে ভুল করবেন, এটি আগেই মেনে নিন।
প্রিলির জন্য পড়বেন আর ভুলবেন, এরপর আবারও পড়বেন আর বারবার পড়েই যাবেন; এতে প্রশ্নোত্তরগুলির একটা ছবি মাথায় ‘সেট হয়ে যাবে’। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। ধরুন, আপনি আম খাবেন। আম খাওয়ার আগে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জেনেও আপনি আম খেতে পারেন। কোনো সমস্যা নাই। তবে আমি মনে করি, আগে আমটা খেয়ে নিয়ে পরে আমের বৈজ্ঞানিক নাম জানার ইচ্ছেটা পূরণ করা ভালো। যদি আমের চৌদ্দগুষ্ঠির খবর নিতে গিয়ে আম খাওয়াটাই না হয়, তাহলে তো আর হল না। যা যা পড়া দরকার, সেগুলিতে একবার চোখ বুলিয়ে যাওয়াটাই কঠিন হয়ে পড়ে, আজাইরা ফালতু জিনিসপত্র পড়ার টাইম কোথায়? একটু বুদ্ধি করে পড়াশোনা করুন। যেমন, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও রাজধানীর নাম কিংবা পুরো সংবিধান মুখস্থ করে ফেললে হয়তো ২-৩ মার্কস পাবেন, কিন্তু ওই একই এফর্ট অন্যকিছুতে দিলে আপনি অন্তত ২০ মার্কস বাড়াতে পারবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে আত্মতুষ্টির চাইতে মার্কসপ্রাপ্তি বেশি জরুরি। এই মুহূর্তে রিটেনের জন্য পড়াটা একেবারেই কমিয়ে দিন। চাইলে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয়কে বাংলা থেকে ইংরেজিতে আর ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজটি শুধু করে যেতে পারেন।
লেখাটি গত ২৭/১১/২০১৫ তারিখ শুক্রবার প্রথম আলো’র চাকরিবাকরি পাতায় ছাপা হয়েছিল। লিংকটা নিচে দিলাম :
(লেখাটি ১০/০১/২০১৬ তারিখে ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর লিখেছি।)
যারা ৩৬তম বিসিএস প্রিলি দিয়েছেন, শুধু তাদের জন্য—
৩১তম বিসিএস ভাইভার আগেই ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়ে যাওয়ায় আর ৩১তম বিসিএস ভাইভা পরীক্ষা দিতে যাইনি। সে হিসেবে আমাকে ২০১১ সালের মে মাসে ৩১তম বিসিএস প্রিলির পর বিসিএস প্রিলি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আর পড়াশোনা করতে হয়নি। (এবং আমি পড়িওনি। চাকরির পড়াশোনা ভালোবেসে করার মতো কোনো পড়াশোনা নয়। সবাই এটা করে স্রেফ মার্কস তুলে চাকরি পেতে। অবশ্য কিছু-কিছু লোক আছেন, যারা বড় বড় ভালোবেসে ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবির নাম কী?’ জাতীয় প্রশ্নও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের ওয়ালে পোস্ট করে সবার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে করে ‘শিওর হয়ে নেন’ এবং পরবর্তীতে ছোট-ছোট মার্কস পেয়ে ফেল করেন।) বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস এমনই এক চিড়িয়াটাইপের সিলেবাস যা অভ্যাস এবং অনভ্যাস দুটোতেই বিদ্যাহ্রাস পায়। আমার বিদ্যাহ্রাস পেয়েছে, এবং সে দোষ আমার একার নয়; সিস্টেমেরও!
এবারের ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নটি একেবারেই ট্র্যাডিশনাল ধাঁচের প্রশ্ন। বেসিক যেমনই হোক, যারা যত বেশি প্রশ্ন পড়ে গেছে, তাদের পক্ষে এ পরীক্ষায় ফেল করা তত বেশি কঠিন। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ছিল আমার দৃষ্টিতে এযাবতকালের সবচাইতে কঠিন প্রিলি আর রিটেনের ‘প্রশ্নওয়ালা’ বিসিএস। আমি নিজে ওই বিসিএস দিলে কতটা কী করতে পারতাম, সে সম্পর্কে অনেকের মতো আমি নিজেও সন্দিহান।
একটা সিক্রেট বলে দিই। খুব সম্ভবত ৩০তম আর ৩১তম বিসিএস প্রিলির জন্য সবচাইতে বেশি সংখ্যক প্রশ্ন সলভ করেছে, পুরো বাংলাদেশে এরকম ক্যান্ডিডেটদের তালিকা করা হলে আমার নাম ১ম ৫ জনের মধ্যেই থাকার কথা। একথা কেন বললাম? একথার মানে হল, আমি মনে করি, বিসিএস প্রিলিতে পাস করার জন্য ১০টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১ সেট গাইড/ ডাইজেস্ট/ প্রশ্নব্যাংক পড়া বুদ্ধিমানের কাজ। বিসিএস পরীক্ষা জ্ঞানী হওয়ার পরীক্ষা নয়, মার্কস পাওয়ার পরীক্ষা।
একটা কথা বলে নেয়া ভাল। আমি সাধারণ জ্ঞানে অতি দুর্বল ধরনের ক্যান্ডিডেট ছিলাম। আপনি ভাবতেও পারবেন না, অতটা দুর্বল ক্যান্ডিডেটও থাকে! কীভাবে সেটা কাজ চালানোর মতো করে আয়ত্তে এনেছি, সেকথা অন্য নোটে লিখেছি বলে এখানে আর লিখছি না। বাকি ৪টা বিষয় আমি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ভালভাবে পারতাম। আমি সবসময়ই বোঝার চেষ্টা করেছি, অন্যরা যেভাবে পড়ে, সেটাতে সমস্যাটা কোথায়। যে পথে গেলে পড়া কমে, সে পথে যাওয়ার সুবিধে হল এই, (যদি বেশি নাও করেন) আপনি অন্যদের সমান সময়ই পরিশ্রম করবেন, কিন্তু অন্যরা যে সময়ে একটা অপ্রয়োজনীয় কিংবা কম প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে, সে সময়ে আপনি একটা প্রয়োজনীয় জিনিসকে দুইবার রিভিশন দিয়ে দিতে পারবেন কিংবা আগে পড়া একটা প্রয়োজনীয় জিনিস এবং পড়া হয়নি এরকম একটা প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে ফেলতে পারবেন। হিসেব করে দেখুন, অন্যদের তুলনায় আপনার কাজের/ প্রয়োজনীয় পড়া হচ্ছে অন্তত দ্বিগুণ!
২০১১ সালের মে মাসের পর থেকে আজ পর্যন্ত বিসিএস প্রিলি নিয়ে আমাকে আর কিছু করতে হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রিলির পড়ার স্মৃতি ফিকে হয়ে এসেছে। গত শুক্রবার রুয়েটে ক্যারিয়ার আড্ডা ছিল। সারাদিন রুয়েটের অডিটোরিয়ামে কথা বলার পর সেদিন রাতের গাড়িতেই ঢাকায় আসি। গতকাল সারাদিন চাকরির কিছু কাজে দৌড়ের উপর ছিলাম। আবার সারারাত জার্নি করে সকালে সাতক্ষীরায় পৌঁছেই ৯টার মধ্যেই অফিসে ঢুকি। আজকে সন্ধ্যায় একটু ফ্রি হয়ে ৩৬তম প্রিলিতে ‘কাট মার্কস’ কত হতে পারে, এ সংক্রান্ত পোস্ট দেয়ার অনুরোধ/ আবদার রক্ষার্থে একটা প্রশ্ন ডাউনলোড করে পরীক্ষা দিতে বসে গেলাম। যেহেতু আমি বৃত্ত ভরাট করছি না, খাতায় অন্যান্য কিছুও পূরণ করতে হচ্ছে না, পরীক্ষার হলের ‘রহস্যময় টেনশন’টুকুও নিতে হচ্ছে না, সেহেতু ৫০ মিনিটের মধ্যেই পুরো প্রশ্ন সলভ করার নিয়তে হাতঘড়ি আর ক্যালকুলেটর ড্রয়ারে রেখে দেয়ালঘড়ি দেখে পরীক্ষা দিলাম। জেনে দাগালাম ১৫৪টি। এরপর ইন্টারনেট আর বিভিন্ন অনলাইন ফোরাম ঘাঁটাঘাঁটি করে সেগুলি চেক করে দেখলাম, ৫টি ভুল হয়েছে। মানে, আমি পেলাম ১৪৬.৫। ধরে নিচ্ছি, সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিলে কনফিউশন আছে, কিন্তু পরীক্ষার হলে শেষপর্যন্ত ছাড়তে ইচ্ছে করে না এরকম আরও ১০টি বেশি দাগিয়ে ফেলতাম। ওগুলির মধ্যে ভুল হতো ৭টি, মানে ১৬৪টি দাগিয়ে ভুল করতাম ১২টি, মার্কস পেতাম ১৪৬। আমি যদি মোট ২০০ নম্বরকে এভাবে করে ভাগ করি : বাংলা (৩৫) + ইংরেজি (৩৫) + গণিত ও মানসিক দক্ষতা (৩০) + সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (৩০) + সাধারণ জ্ঞান (৫৫) + অন্যান্য (১৫), তবে হয়তোবা আমার মার্কস আসত এরকম : বাংলা (২৮) + ইংরেজি (৩২) + গণিত ও মানসিক দক্ষতা (২৯) + সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (২৪) + সাধারণ জ্ঞান (২২) + অন্যান্য (১১)। এর পুরো কৃতিত্ব কিন্তু ৩৬তম বিসিএস প্রিলির সহজ প্রশ্নের। বিসিএসটা ৩৫তম হলে ব্যাপারটা অন্যরকমও হতে পারত।
প্রশ্ন নিয়ে আমার কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ লিখছি :
এক। প্রশ্নটি অবশ্যই অতি গতানুগতিক। এ প্রশ্নে পাস করার জন্য মেধাবী হওয়ার কোনো দরকার নেই। গাইড বই/ জব সল্যুশন/ প্রশ্নব্যাংক/ ডাইজেস্ট/ মডেলটেস্ট গাইড ইত্যাদি ভালোভাবে পড়া থাকলেই যথেষ্ট।
দুই। এই প্রশ্নে কনফিউজিং/ ভুল প্রশ্ন কম ছিল।
তিন। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী অংশটা একটু কঠিন ছিল মনে হয়।
চার। কিছু প্রশ্ন নিয়ে কথা বলি :
১. বর্তমানে NAM এর সদস্যসংখ্যা- এই প্রশ্নের উত্তর নেই।
২. সুশাসনের পূর্বশর্ত হচ্ছে- এই প্রশ্নটি কনফিউজিং।
৩. LinkedIn এর ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক? এই প্রশ্নটির ৪টি অপশন খেয়াল করলে মনে হয়, PSC এই প্রশ্নটি দিয়েছে, যাতে সবাইই ওটিতে ১ নম্বর করে পেয়ে যায়!
৪. যদি (25)^(2x+3) = 5^(3x+6) হয়, তবে x= কত? এই অংকটির ৪টি অপশন থেকে x এর মান প্রদত্ত সমীকরণে বসিয়ে সলভ করলে গতানুগতিকের ৫ ভাগের ১ ভাগ সময় লাগার কথা। x^2+y^2 = 185, x-y = 3 এর একটি সমাধান হল- এই অংকটির বেলায়ও আগের কথাটি প্রযোজ্য। ২ এর কত শতাংশ ৮ হবে? ….. এটিও!
৫. ১৫.৬০২৫ এর বর্গমূল = ? এই প্রশ্নটি দেয়াই হয়েছে যাতে কেউ কেউ বোকার মতো এটি করার জন্য সময় নষ্ট করে। কী দরকার ভাই? ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে সহজ প্রশ্ন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বড় অর্জন কোনটি? এটিতেও তো ১ নম্বরই ছিল! অথচ সহজ টেকনিক জানা না থাকলে ওই বর্গমূল নির্ণয় করে একই ১ নম্বর পেতে অন্তত ২০ গুণ বেশি সময় লাগবে! কঠিন প্রশ্নে নম্বর কিন্তু সেই ১-ই!
৬. দুটি সমান্তরাল রেখা ক’টি বিন্দুতে ছেদ করে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। সঠিক বানান কোনটি? এটিও একই!
৭. Credit Tk 5000 _ my account. এই প্রশ্নটি যারা মোবাইলে ব্যাংকের মেসেজগুলি চেক করেন, তাদের পারতে ১ সেকেন্ডও লাগার কথা না।
৮. Verb of ‘Number’ is- এই প্রশ্নের উত্তর ২টি; number ও enumerate দুটিই হয়। মানে, এই প্রশ্নটিও কনফিউজিং।
৯. ‘Gitanjali’ of Rabindranath Tagore was translated by- এই প্রশ্নেরও উত্তর নেই, তবে PSC এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে নেয় W.B. Yeats অপশনটিকে। আচ্ছা, নেবেই কে বলল? নাও তো নিতে পারে! ইয়েটস্ তো বাংলা জানতেনই না! তাহলে গীতাঞ্জলি অনুবাদ করলেনটা কীভাবে? ……… অতো কথায় কাজ নেই। সংক্ষেপে বললে, এটিও একটা কনফিউজিং প্রশ্ন।
ভাল বুদ্ধি হল এই, কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করারই দরকার নেই! ভুল প্রশ্নের কথা বলছেন? আচ্ছা, ভুল প্রশ্নের উত্তর করলেও যা, না করলেও তা। ওগুলিতে সবাইকেই অ্যাভারেজ মার্কস দিয়ে দেয়।
পাঁচ। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার কঠিন প্রশ্ন দিয়ে PSC ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার ক্যান্ডিডেটদেরকে এই ইঙ্গিত দিয়েছিল, “বেসিক শক্ত করতে প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা কর, নাহলে প্রিলিতে ফেল করবে! শুধু বাজারের বই পড়ে বেশি লাভ নেই।” ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার সহজ প্রশ্ন দিয়ে PSC ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার ক্যান্ডিডেটদেরকে এই ইঙ্গিত দিয়েছে, “বেসিক শক্ত করতে প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা কর, নাহলে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা একটা ‘গ্যাপ’ দিয়ে ‘ফিরে এলে’ প্রিলিতে ফেল করবে! তবে বাজারের বই না পড়েও বেশি লাভ নেই।”
পরশু থেকে শুরু করে এই নোট লেখার সময় পর্যন্ত ‘৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার কাট মার্কস কত হতে পারে’ জাতীয় ইনবক্স মেসেজ আর ফোন পেয়েছি অন্তত ১৫০০+। যারা যোগাযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ‘ভাল, মাঝারি, খারাপ’ ৩ ধরনেরই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে পাস-করা ক্যান্ডিডেট। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সাইলেন্টলি এ সংক্রান্ত কিছু পড়াশোনা করে কিছু বিষয় আমার মাথায় এসেছে।
এক। সহজ প্রশ্ন, তাই এখানে ০.৫ নম্বরও অনেককিছু!
দুই। প্রশ্ন সহজ, অতএব ঝটপট সব দাগিয়ে ফেলি খুশিতে! — এই খুশির ঠ্যালায় আর স্নায়ুর চাপে অনেকেই অনেক প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছেন। (আমি পরীক্ষা দিলেও তা-ই করতাম।)
তিন। PSC যদি ১০ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ১০৫-১০৯।
PSC যদি ১২-১৫ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ৯৯-১০২।
PSC যদি ২০-২২ হাজার ক্যান্ডিডেটকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেয়, তবে কাট মার্কস হবে ৯১-৯৮।
এখন কিছু কথা বলে এই লেখাটি শেষ করছি।
এক। PSC এবার মোট কতজনকে রিটেন দেয়ার সুযোগ দেবে, সেটা তো আমরা কেউই জানি না। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এবারের কাট মার্কস হবে ৯৩-১০০ এর মধ্যে।
দুই। জানা জিনিস ভুল শুধু আপনি একাই দাগাননি, যে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম হবে, সেও দাগিয়েছে। তাই এটা নিয়ে এত দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।
তিন। বিশাল বিশাল মার্কস পাবে দাবিকরা বিশাল বিশাল পণ্ডিতদের বেশিরভাগই বিশাল বিশাল ফেল করে আমাদের সবাইকে বিশাল বিশাল বিনোদন দেবে। রেজাল্টটা বের হতে দিন আর দেখুন না কী হয়! Just wait & see!!
চার। প্রিলির রেজাল্ট বের হওয়ার পর রিটেনের প্রিপারেশন নেয়ার জন্য সময় বেশি পাবেন না। বিসিএস পরীক্ষা মূলত রিটেনে ভাল করার পরীক্ষা। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কেউ যদি সঠিকভাবে রিটেনের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে, তবে উনার মেধাতালিকায় ১ম ১০ জনের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা ৯৫%। বাকি ৫% ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না? ঠিক আছে, আপনি অন্তত ১বার প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে দেখুন!
রিটেনের পড়াশোনা কীভাবে শুরু করা যায়, এ নিয়ে পরে লিখব। (আগ্রহীরা রিটেনের প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে আমার ফেসবুক নোটগুলি দেখে নিতে পারেন। রিটেন নিয়ে আমার অন্তত ১৫+টি ফেসবুক নোট আছে।) আপাতত এইটুকুই! ঈশ্বর আপনাদের সবার মঙ্গল করুন।
লিখা ও  শুভকামনায়ঃ
সুশান্ত পাল
Exit mobile version